Advertisement
E-Paper

ঝরা পাতায় প্লাস্টিক, জ্বালানি নিয়ে বিপাকে আদিবাসীরা

এখন শান্তিনিকেতনের খোয়াই সংলগ্ন আদিবাসী অঞ্চলে বাড়তে থাকা পর্যটকের সংখ্যা আদিবাসীদের স্বাভাবিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে বলে অভিযোগ।

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১০
সংগ্রহ: জ্বালানির খোঁজে খোয়াইয়ের জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র

সংগ্রহ: জ্বালানির খোঁজে খোয়াইয়ের জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র

শহর ছেড়ে শীতের বিদায় নেওয়ার পালা আসতেই গাছ থেকে ঝরে পড়ে শালপাতা। শান্তিনিকেতনের খোয়াই সংলগ্ন আদিবাসী গ্রামগুলির মানুষ সেই পাতা ঝরার খবর রাখেন। এই সময় একে একে তাঁরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসে হাজির হন। শুকনো পাতা কুড়িয়ে নিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন।

এমনই হয়ে আসছে বছরের পর বছর।

কিন্তু এখন এই অঞ্চলে বাড়তে থাকা পর্যটকের সংখ্যা আদিবাসীদের স্বাভাবিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে বলে অভিযোগ। এখন আর শালপাতা কুড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সেই পাতা বস্তাবন্দি করে নিয়ে যেতে পারেন না মিনতি হেমব্রম, তুরকি মুর্মূ, সারথী কিস্কুরা। ঝাঁট দিয়ে এক জায়গায় রাখা পাতার স্তূপ থেকে আগে প্লাস্টিক, থার্মোকল, শোলার টুকরো বাছাই করতে হয়। তার পরে পাতা নিয়ে যান তাঁরা।

ওই এলাকার আদিবাসী জনজাতির একাংশের অভিযোগ, খোয়াইয়ে বরাবরই পর্যটকেরা আসতেন। তবে গত কয়েক বছরে সেই সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। শনিবারের খোয়াই বনের অন্য হাট তার নিজের জায়গা থেকে বিস্তৃত হয়ে একের পর এক জঙ্গল এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। বনেরপুকুরডাঙা এলাকার এক গ্রামবাসী জানালেন, কয়েক মাস ধরে মূল রাস্তা থেকে তাঁদের গ্রামে ঢোকার মুখেও একদল ব্যবসায়ী বসতে শুরু করেছেন। শনিবার গ্রাম থেকে বেরোতেই সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকছে।

এখন শনিবার ছাড়াও অন্য দিন হাট বসে। তাই পর্যটকেরাও আসেন। গ্রামবাসীর অভিযোগ, তাঁরা থার্মোকলের পাতায় খাবার খাচ্ছেন। তার পরে ফেলে দিচ্ছেন জঙ্গলেই। এক বার হাওয়া দিলেই চার দিকে উড়ছে সেই পাতা। একই রকম ভাবে প্লাস্টিক বা জলের বোতল ফেলে দিচ্ছেন যত্রতত্র।

এর ফলেই গ্রামবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। তাঁদের কথায়, ‘‘এই সময় আমরা ঝরে যাওয়া পাতা কুড়িয়ে নিই। তাই এই জায়গা পরিষ্কার থাকে। কিন্তু এটা কেউ বুঝতে চান না। দিন দিন প্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিক বেছে না ফেললে জ্বালানি হিসেবে এই পাতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’’ এই অবস্থায় ডাস্টবিন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা সকলেই।

এ ব্যাপারে রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রণেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে প্রতি সপ্তাহে একদিন গাড়ি গিয়ে ওই এলাকা থেকে জমে থাকা প্লাস্টিক তুলে নেয়। ডাস্টবিন দেওয়ার ব্যাপারে এখনও গ্রামবাসীরা আমাদের কিছু জানাননি। তাঁরা আবেদন করলে অবশ্যই ডাস্টবিনের ব্যবস্থা পঞ্চায়েত করবে।’’

শুধুমাত্র বনেরপুকুরডাঙা বলে নয়, এই এলাকা থেকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য ঝরে পড়া শালপাতা কুড়িয়ে নিয়ে যান ফুলডাঙা, কলাপুকুরডাঙা, সরপুকুরডাঙা, বল্লভপুরডাঙার মানুষও। একই সমস্যার কথা জানালেন তাঁরা প্রত্যেকেই। বনেরপুকুরডাঙা গ্রামের মোড়ল কালো হেমব্রম জানান, বনবিভাগের আধিকারিককে তাঁরা বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে জানিয়েছেন। এক সময় এই এলাকা পিকনিক স্পট ছিল। বনবিভাগের হস্তক্ষেপে এখন আর কেউ চড়ুইভাতি করতে আসতে পারেন না। একই ভাবে অনেকে মদের বোতল ভেঙে ফেলে দিয়ে যাচ্ছিলেন। ভাঙা কাঁচে এক সময় এই এলাকার শিশু থেকে শুরু করে অনেকের পা কেটেছে। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে সেই সমস্যারও সমাধান হয়েছে।

মার্চ মাস নাগাদ নতুন পাতা জন্মাবে গাছে। নতুন সাজে সেজে উঠবে খোয়াই। তার আগেই অন্তত প্লাস্টিক নিয়ে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে সেই আশাতেই দিন গুনছেন সংলগ্ন এলাকার গ্রামবাসী। তাঁরা বললেন, ‘‘আমরা চাই সকলে এখানে আসুক। নিশ্চয় এই জায়গাটা ভালবাসেন বলেই এত মানুষ আসেন। সেই জায়গার ক্ষতি যেন তাঁরা না করেন এটাই আমাদের অনুরোধ।’’

এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্য বনবিভাগের কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে বনবিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। কী করা যায় আমরা ভেবে দেখছি।’’

Fuel Santiniketan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy