Advertisement
E-Paper

ধূমপানে নিষেধাজ্ঞা, বিজ্ঞপ্তি পড়ল অফিসে

ধূমপান ক্ষতিকারক সকলেই তা জানেন। কিন্তু পরোক্ষে ধূমপানও যে সমপরিমাণ ক্ষতিকারক সেটা জেলার সরকারি অফিসে কতজন জানেন বা মানেন? প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ হয়েছে আইন করে কবেই। কিন্তু জেলায় জেলায় সরকারি অফিসে এতদিন শিথিল ছিল সেই নিষেধ।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:২১
জেলা প্রশাসনের দফতরে ধূমপান নিষেধের নোটিস। —নিজস্ব চিত্র।

জেলা প্রশাসনের দফতরে ধূমপান নিষেধের নোটিস। —নিজস্ব চিত্র।

ধূমপান ক্ষতিকারক সকলেই তা জানেন। কিন্তু পরোক্ষে ধূমপানও যে সমপরিমাণ ক্ষতিকারক সেটা জেলার সরকারি অফিসে কতজন জানেন বা মানেন?

প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ হয়েছে আইন করে কবেই। কিন্তু জেলায় জেলায় সরকারি অফিসে এতদিন শিথিল ছিল সেই নিষেধ। এ বার বোধহয় ছবিটা কিছুটা বদলাতে চলেছে। কন্ট্রোল অফ টোব্যাকো পোডাক্টস অ্যাক্ট সংক্ষেপে COTPA-র আওতায় জেলার সমস্ত সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকী বেশি সংখ্যক ঘর বিশিষ্ট হোটেল-সহ বিভিন্ন জায়গায় ধূমপান বা তামাক সেবন ও বিক্রির উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হতে চলেছে। আইন না মানলে জরিমানার কবলে পড়বেন সংশিষ্ট ব্যক্তি। সঙ্গে থাকছে তামাকজাতীয় নেশার দ্রব্য ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে প্রতিনিয়ত মানুষকে সজাগ করা। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এই নিয়ে এক প্রস্থ আলোচনা সেরে গিয়েছেন এ রাজ্যে দায়িত্ব প্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মানভূম আনন্দ আশ্রম নিত্যানন্দ ট্রাস্ট বা (MANT) এর প্রতিনিধিরা।

সংস্থা জানাচ্ছে, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়ায় কাজ আগেই শুরু করছে সংস্থা। নতুন করে শুরু হতে চলেছে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং বীরভূমে। ২০০৩-এর যে COTPA (কন্ট্রোল অফ টোবাকো প্রডাক্টস অ্যাক্ট)- আইন রয়েছে সেইটিই এনফোর্সমেন্টের কথা বলা হয়েছে। আইন মোতাবেক ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মনিটারিং কমিটি এবং ভারত সরকারের ন্যাশেনাল টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রামের অন্তর্গত ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা। কো-অর্ডিনেশন কমিটিতে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর থাকছে। যেমন, শিক্ষা, পুলিশ, আবগারি, কমার্শিয়াল ট্যাক্স। ঠিক হয়েছে, একইভাবে তৈরি হবে জেলা লেভেল কমিটিও।

জেলা লেভেলে এনফোর্সমেন্ট স্কোয়াড এবং ব্লক লেভেল এনফোর্সমেন্ট স্কোয়াড গঠিত হওয়ার পর, সেই কমিটির কী ভূমিকা, কী ভাবে আইনভঙ্গকারীদের জরিমানা করা যায়, কমিটিগুলির দায়িত্ব কী হবে তা বোঝানো, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া-সহ সব ধরনের সহযোগিতা করবে সংস্থা। অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্যামল কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই জেলা স্তরের দুটি কমিটি গঠিত হয়েছে। ব্লক স্তরের কমিটি গঠনের জন্য চিঠি করা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পাবলিক প্লেসে ধূমপান করায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকই সেটা মানতে চান না। এই পদক্ষেপের পর সেটা অবশ্যই পালিত হবে।’’

সস্থার পক্ষে ডিরেক্টর (প্লানিং) নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলা লেভেল ও ব্লক স্কররের এনফোর্সমেন্ট স্কোয়াডে কারা কারা কমিটিতে থাকবেন সেই বিষয়ক তালিকা জেলা শাসককের কাছে আমরা দিয়েছি। বলেছি, এনফোর্সমেন্ট কমিটিগুলি গঠিত হওয়ার পর যে ভাবে দেশের বিভিন্ন জায়াগায় ও এ রাজ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ হচ্ছে সেই বিষয়ে বিশদে আমরা জেলা ও ব্লকস্তরের কমিটিগুলিকে বোঝাব। ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেব।’’

তথ্য বলছে, প্রতিদিন হাজার হাজার কমবয়সী ছেলেমেয়েরা, যাদের বয়স ১৮ পেরোয়নি ধূমপান আসক্ত হচ্ছে। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। আর প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে ধূমপান ও তামাক সেবন জনিত রোগের প্রকোপ। যাঁরা ধূমপান করেন তাঁরা বিপদে ঝাঁপ দিয়েছেন কিন্তু যাঁরা ধূমপান করেন না বা কোনও ধরনের তামাক জাতীয় নেশার দ্রব্য ব্যবহার করেন না তাঁরাও যে সুরক্ষিত নন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। পরোক্ষে ধূমপানও যে সমপরিমাণ ক্ষতিকারক গবেষণায় তার প্রমাণ মিলেছে।

সংস্থা জানিয়েছে, জেলা প্রশাসনের কাছে সংস্থার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে সরকারি প্রত্যেকটি দফতরের কার্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকগুলিকে ‘স্মোক-ফ্রি’ ঘোষিত হতে হবে। এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিকেও হতে হবে টোবাকো ফ্রি।

এইদুটি বিষয়ের মধ্যে মৌলিক তফাৎ কী? সংস্থার ব্যাখ্যা, ‘স্মোক-ফ্রি’ হলে সিগারেট বা ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া। যাতে পরোক্ষ ধূমপান থেকে অ-ধূমপায়ীদের বাঁচানো যায়। তবে চিবিয়ে যে তামাক খাওয়া যায় তার উপর নজরদারি থাকছে না। অন্যদিকে ‘টোবাকো-ফ্রি’ জোনের ক্ষেত্রে ধূমপান বা যে কোনও ধরনের তামাক বর্জিত এলাকা। এই বিষয়ক দুটি নির্দেশ নামাই তৈরি করবে জন্য জেলা প্রশাসন। একটি সেকশন ফোর, যেখানে পাবলিক প্লেসে কোনও ভাবেই ধূমপান করা যাবে না। অন্যটি সেকশন সিক্স, মৃলত ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়াদের বাঁচানোর বা নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে তামাক বর্জিত এলাকা গড়ার লক্ষ্যে। নজরদারির জন্যই এনফোর্সমেন্ট কমিটি থাকবে। কমিটির মাথায় থাকবেন একজন করো নোডাল অফিসার।

এছাড়াও সরকারি প্রতিটি অফিসের সব প্রবেশ ও নির্গমনের পথে থাকবে তামাক নিয়ে সতর্কীকরণ বোর্ড। ৩০-৫০ সেন্টিমিটার মাপের বোর্ডে সতর্কীকরণ ছাড়াও থাকবে নোডাল বা রিপোর্টিং অফিসারের নাম এবং যোগাযোগের নম্বর। যাতে আইন লঙ্ঘিত হলে যে কেউ সহজেই বোর্ডে লিখিত আধিকারিকের নজরে আনতে পারেন। জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, কাজ এগোচ্ছে দ্রুতগতিতেই। দেওয়ালে লেগেছে সতর্ককারী বোর্ডও।

dayal sengupta suri administration office admin issue smoking prohibited suri birbhum no smoking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy