অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারির পরে সিউড়ি-২ ব্লকে কোন্দল মেটানোর চেষ্টায় অনুব্রত মণ্ডল এবং কাজল শেখের গোষ্ঠী। মঙ্গলবার ‘কাজলের লোকের’ হাতে প্রহৃত অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ বলরাম বাগদিকে দেখা গেল বীরভূম জেলা পরিষদের অফিসে। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাধিপতি কাজল স্বয়ং। এবং ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলামও। অফিস থেকে বেরিয়ে দুই পক্ষেরই দাবি, তাঁদের কোনও গন্ডগোল ছিলই না। কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। সে সব এখন অতীত।
দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত পুরনো। তবে প্রকাশ্যে আসে গত ২০ নভেম্বর। সিউড়ির কোমা পঞ্চায়েতের একটি গ্রামে এসআইআর সহায়তা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কোমা অঞ্চল সভাপতি, অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বলরাম। অভিযোগ, কাজলের ঘনিষ্ঠ তৃণমূলেরই ব্লক সভাপতি নুরুলের সঙ্গীরা বলরাম এবং তাঁর ভাইকে বেধড়ক মারধর করেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান শতাব্দী নিজে। ওই নিয়ে সিউড়িতে অনুব্রত এবং কাজল গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়।
বিষয়টি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কানে গিয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক নির্দেশ দেন, সিউড়ি-২ ব্লকের গোলমাল যেন আলোচনাতেই মিটে যায়। নয়তো অন্য রাস্তা নেবেন তিনি। অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘দুবরাজপুরে আমাদের বিধায়ক নেই। ওই আসনে আমরা ২০২১ সালে পরাজিত হয়েছি। সিউড়ি-২ ব্লকে সমস্যা রয়েছে। আমি দু’পক্ষকে বলছি, আপনারা দু’-তিন দিনের মধ্যে সমাধান করুন। না-হলে বাইরে থেকে কাউকে পাঠাতে হবে। আমরা সেটা চাই না। নিজেরা ঠিক করে নিন।’’
মঙ্গলবার দেখা গেল দুই পক্ষকে একসঙ্গে। কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ বলরামকে পাশে নিয়ে কাজলের দাবি, “এটা শুধু ট্রেলার, পিকচার এখনও বাকি!” তাঁর ইঙ্গিত, দলের ভিতরে পালাবদল হবে। আর বলরামের মন্তব্য, ‘‘বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে অশান্তি হলে কি কেউ পরিবার ছেড়ে চলে যায়? ভুল বোঝাবুঝি তেমন কিছু ছিল না। তৃণমূল অনেক বড় পরিবার। সমস্তটাই মিটে গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
বস্তুত, গত কয়েক মাস ধরে সিউড়ি-২ ব্লকের গোষ্ঠীকোন্দল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগেও অনুব্রতের অনুগামীদের সঙ্গে কাজলের ঘনিষ্ঠদের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে বারবার। ব্লক সভাপতির পদ নিয়েও শুরু হয়েছিল গুঞ্জন। শেষমেশ নুরুলকে দায়িত্ব দেন রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব। তার পর অনুব্রতের লোকজনকে নুরুলের সঙ্গে দেখা দিলেও বলরাম ছিলেন বাইরে। মঙ্গলবার কাজল বলেন, “অচিরেই সমস্ত সমস্যা মিটে যাবে।” অর্থাৎ, সমস্যা যে ছিল, তা তিনিও স্বীকার করছেন। এখন মঙ্গলবারের আলোচনার পর সিউড়িতে গোষ্ঠীকোন্দলে ইতি পড়ে কি না, সেটাই দেখার।