E-Paper

ক্রমে কমছে ভয়, জেলার শ্রমিকরা থাকছেন কাশ্মীরে

জেলা থেকে যাওয়া ওই শ্রমিকেরা জানান, গত ১০ বছর ধরে তাঁরা কাশ্মীরের ওই এলাকায় থাকেন। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন তাঁরা।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৫ ০৭:১৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সাইরেনের শব্দ, ব্ল্যাক আউট, ঘন ঘন গোলাগুলি, ক্ষয়ক্ষতি। ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির আবহে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার প্রহর কাটিয়েছেন পাকিস্তানের সীমানা ঘেঁষা রাজ্যগুলির বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বীরভূম থেকে কাজের খোঁজে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকেরাও। শনিবার দু’দেশের মধ্য সংঘর্ষবিরতির ঘোষণায় একটানা ১০০ ঘণ্টার উদ্বেগ কিছুটা হলেও কেটেছে তাঁদের।

রুজির টানে বীরভূম থেকে কাশ্মীরে কাজ করতে যাওয়া জেলার ১০ জন নির্মাণ শ্রমিক জানালেন, উদ্বেগ কমেছে, তাঁরা এখন ভাল আছেন। এখন বাড়িও ফিরতে চান না বলেই জানালেন বীরভূমের মুরারই ২ ব্লকের পাইকর থানার মিত্রপুর এলাকা থেকে যাওয়া ওই পরিযায়ী শ্রমিকেরা। এই মুহূর্তে বারামুলার কানিসপোরাতে থাকা ওই শ্রমিকদের মধ্যে নঈমউদ্দিন শেখ বললেন, ‘‘পাকিস্তান সীমান্ত এখান থেকে বেশ দূরে। কোনও অসুবিধে হবে না। হয়ও নি।’’ ফারুকউদ্দিন শেখ বললেন, ‘‘এখন তো যুদ্ধবিরতি। তাই আর এখন বাড়ি যাচ্ছি না।’’

জেলা থেকে যাওয়া ওই শ্রমিকেরা জানান, গত ১০ বছর ধরে তাঁরা কাশ্মীরের ওই এলাকায় থাকেন। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন তাঁরা। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হানার পরে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সময়ও তাঁরা সেখানেই ছিলেন। ওই দলের আর এক সদস্য আলাউদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে পহেলগামে হামলার দিন কয়েক আগেই কাশ্মীরে পৌঁছেছিলাম। চিন্তু ছিল। তবে আমাদের কোনও সমস্যা হয়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামে সব সময় কাজ পাওয়া যায় না। বছরে দু-এক বার ফিরি।’’ আর এক শ্রমিক বললেন, ‘‘বাড়ির লোকজন চিন্তা করছিল। যুদ্ধ লাগার পর চিন্তা আরও বাড়ে। তবে এখানকার মানুষই আমাদের বলেন থেকে যেতে।’’

গত মাসে ২২ তারিখ পহেলগামে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পরিস্থিতি। ভারতে বেআইনি ভাবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কেউ রয়েছেন কি না তা দেখতে নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তার পরেই একাধিক রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানের তিন শ্রমিককে গুজরাতে আটকে রেখে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেল্পলাইন ‘দিদিকে বলো’-তে ফোন করে অভিযোগ জানালে সরকারের উদ্যোগে তাঁদের নথি পাঠানো হয় ও তাঁরা ছাড়া পান। হেনস্থার অভিযোগ ওঠে ওড়িশাতেও।

বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছিলেন বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান। একই বিষয়ে চিঠি গিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামও। ওড়িশা ও গুজরাতের পাশাপাশি দিল্লি, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রেও হেনস্থার অভিযোগ রয়েছে। ভিন্‌ রাজ্যে থাকা বহু শ্রমিক তখনই বাংলায় ফিরে আসেন বলে জানা গিয়েছে।

কাশ্মীরেও বীরভূম থেকে যাওয়া শ্রমিকেরা কাজ করেন। গত ৭ তারিখ পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হানার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গিঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালানোর পর পাক-সীমান্তবর্তী কাশ্মীরে আশঙ্কা বাড়ে। পাক সেনার গুলিবর্ষণে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষদেরও মৃত্যু হয়। উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় কাশ্মীরের একেবারে সীমান্তঘেঁষা এলাকাগুলিতকে কাজে যাওয়া অনেকেই বাড়িমুখো হন।

বীরভূম থেকে যাওয়া শ্রমিকেরা অবশ্য সেই দলে ছিলেন না। রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরতে চেয়ে কোনও আর্জি পরিযায়ী শ্রমিক বা তাঁদের পরিবারের তরফে আসেনি। এলেই পদক্ষেপ করা হয়েছিল।’’

তবে পহেলগাম পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য বীরভূম থেকে অনেক কম শ্রমিকই এখন কাশ্মীরে রয়েছেন বলে দাবি, নঈমউদ্দিন, আলাউদ্দিনদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘এখানে দিনে চার থেকে পাঁচশো টাকা আয় হয়। অন্য বার আমাদের এলাকা থেকে অন্তত ২০০জন শ্রমিক এখানে আসেন। কিন্তু পহেলগাম ও যুদ্ধের জন্য আর কেউ এখানে আসতে পারেনি। এর পর হয়তো আসবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy