Advertisement
E-Paper

সেই বড়রায় ফের বোমা জ্যারিকেনে

‘বোমার কারখানা এখানে চলবে না। যা আর্মস আছে, রেসকিউ করুন’—সোমবার বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন বার্তা দেওয়ার পর থেকেই বোমা খুঁজতে যেন নতুন উদ্যমে নেমেছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৭ ০২:৫৫
ফের: নানুরের গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

ফের: নানুরের গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নানুর, লাভপুর তো আগেই নাম করেছিল। দেখা যাচ্ছে, খয়রাশোলও কম যায় না!

বোমা উদ্ধারে প্রথম দুই ব্লককে রীতিমতো পাল্লা দিচ্ছে খয়রাশোল। মাঝে মাত্র একটা দিন। শুক্রবার ফের জ্যারিকেন ভর্তি বোমা উদ্ধার হল খয়রাশোলের বড়রা গ্রামে। এ দিন নানুরের পাপুড়ি গ্রামের পশ্চিমমাঠে একটি পুকুরের ধার থেকেও ড্রামে রাখা ২৫টি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ । কয়েক দিন আগে নানুরেরই চণ্ডীপুর ও ভাসামাঠ গ্রাম থেকে দুই শতাধিক বোমা উদ্ধার হয়।

‘বোমার কারখানা এখানে চলবে না। যা আর্মস আছে, রেসকিউ করুন’—সোমবার বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন বার্তা দেওয়ার পর থেকেই বোমা খুঁজতে যেন নতুন উদ্যমে নেমেছে পুলিশ। বুধবারই বড়রা থেকে উদ্ধার হয়েছিল চার জ্যারিকেন ভর্তি ২০০-রও বেশি তাজা বোমা। পরে দুর্গাপুর থেকে সিআইডি-র বোম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড বোমা নিষ্ক্রিয় করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বড়রার ডাঙালপাড়ার একটি পুকুরের পাশের সারগাদা থেকে সার সংগ্রহ করছিলেন এক কৃষক। গাদার মধ্যে হঠাৎই জ্যারিকেনের ঢাকনা দেখেতে পান তিনি। তবে তার ভিতরে কী আছে, বুঝতে বেগ পেতে হয়নি বোমা-বন্দুকের লড়াই দেখতে অভ্যস্ত এলাকার ওই বাসিন্দার। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দেখে, জ্যারিকেনের মধ্যে ৪০টির মতো তাজা বোমা রয়েছে। খবর যায় বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডে। তারা বোমা নিষ্ক্রিয় করে। বুধবারও গ্রামের হাঁড়িগড়ে নামে এক পুকুরের পাশে জমিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল চার জ্যারিকেন বোমা। জেলা পুলিশের কর্তাদের ধারণা, বোমা-অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশি সক্রিয়তায় ভয় পেয়ে নানা উপায়ে বোমা লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সব ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে, এমন নয়।

বড়রা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, জ্যারিকেন ভর্তি বোমা উদ্ধার আসলে হিমশৈলের চূড়া মাত্র। পুলিশ ঠিকমতো চেষ্টা করলে অনেক বেশি পরিমাণ বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে পারে। কারণ, কাঁকরতলা থানা এলাকার শুধু বড়রা নয় আশপাশের খান চারেক গ্রামে অবৈধ কয়লা কারবারের রমরমা। এলাকা দখলে রাখতে সমাজবিরোধীদরা অস্ত্র-বোমা মজুত করে। পুলিশের সেটা অজানা নয়। কিন্তু, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কোনও বাসিন্দাই প্রতিবাদ করতে পারেন না। ঘটনার সত্যতা মানছেন পুলিশ কর্তাদের একাংশও। কেন না এপ্রিলের গোড়ায় কয়লা পাচারের সঙ্গে যুক্ত দু’টি সমাজবিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে এক পক্ষের আক্রমণের শিকার হয় পুলিশও। ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়ি। গুলিবিদ্ধ হন এক পুলিশকর্মী। বড়রা-সহ খয়রাশোলের বিভিন্ন এলাকায় খুন, জখম, বিস্ফোরণ লেগেই আছে। কিছুদিন আগে বনপাতরা গ্রামে দেশি পাইপগান তৈরির কারখানার হদিশ পেয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে মূল কারিগর।

বোমা উদ্ধারের ঘটনাকে অবশ্য কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের দাবি, ‘‘পুরোটাই পুলিশের সাজানো নাটক! মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কতটা সুচারু ভাবে পালিত হচ্ছে, তা দেখানোর জন্য হয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা নিদিষ্ট জায়গায় বোমা মজুত করে পুলিশকে খবর দিচ্ছে অথবা পুলিশ নিজেই দুষ্কৃতীদের বোমা রাখতে বলে উদ্ধারের নাটক করছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার বক্তব্য, ‘‘এত দিন কি পুলিশ জেগে ঘুমোচ্ছিল? আসলে সবটাই সাজানো। না হলে বোমা উদ্ধার হচ্ছে অথচ বোমা তৈরির দুষ্কৃতীদের পুলিশ ধরতে পারল না কেন?’’

পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করছে, কারা কী কারণে বোমা মজুত করেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, ইচ্ছা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভাবে তাঁরা হাত গুটিয়ে থাকেন। তার মধ্যেও চেষ্টা করা হচ্ছে।

Bomb
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy