Advertisement
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বর্ষায় শোচনীয় রাস্তা, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী

পিচ আগেই উঠে গিয়েছিল। মাসখানেক আগে রাস্তার সেই গর্তে বোল্ডার-মোরাম ফেলে বোজানো হয়েছিল। বর্ষার শুরুতেই সেই তাপ্পি উঠে গিয়েছে। ফিরে এসেছে সেই খানাখন্দে ভরা পথ। তারই সঙ্গে দেখা দিয়েছে মানুষের ভোগান্তিও।

ব্রাহ্মণডিহা মোড় থেকে খাসজঙ্গল পিচ রাস্তার এমনই হাল। কার্গিল মোড়ে ছবিটি তুলেছেন উমাকান্ত ধর।

ব্রাহ্মণডিহা মোড় থেকে খাসজঙ্গল পিচ রাস্তার এমনই হাল। কার্গিল মোড়ে ছবিটি তুলেছেন উমাকান্ত ধর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৩
Share: Save:

পিচ আগেই উঠে গিয়েছিল। মাসখানেক আগে রাস্তার সেই গর্তে বোল্ডার-মোরাম ফেলে বোজানো হয়েছিল। বর্ষার শুরুতেই সেই তাপ্পি উঠে গিয়েছে। ফিরে এসেছে সেই খানাখন্দে ভরা পথ। তারই সঙ্গে দেখা দিয়েছে মানুষের ভোগান্তিও।

সারেঙ্গা ব্লকের ব্রাহ্মণডিহা মোড় থেকে খাসজঙ্গল হয়ে রামগড় যাওয়ার পিচ রাস্তার এমনই বেহাল দশা। বাসিন্দারা অবশ্য রাস্তাটি আর পাকা রাস্তা বলতে নারাজ। তাঁদের কথায়, পিচ কোথায়? এ তো মোরামের রাস্তা! একই অবস্থা কার্গিল মোড় থেকে মাজুরিয়া যাওয়ার রাস্তাও। দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তাগুলির বেহাল দশার জন্য ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। অবিলম্বে ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। সারেঙ্গা থেকে ব্রাহ্মণডিহা মোড়, কার্গিল মোড়, খাসজঙ্গল হয়ে রামগড় যাওয়ার এটাই সোজা রাস্তা। পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় সীমানা লাগোয়া সারেঙ্গার ব্রাহ্মণডিহা, কার্গিল মোড়, মাকড়কোল পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তার অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। একই ভাবে কার্গিল মোড় থেকে বেজডাঙা মোড়, পেঁচাড়া, বেলেপাল হয়ে মাজুরিয়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিমি রাস্তার অবস্থাও শোচনীয়। রাস্তাময় শুধু ছোট-বড় গর্ত। পিচ উঠে বোল্ডার মোরাম বেরিয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, গত দু’বছর ধরে ওই রাস্তাগুলি বেহাল হয়ে রয়েছে। কয়েক মাস আগে গর্ত বোজানোর জন্য রাস্তায় বোল্ডার, মোরাম ফেলে তাপ্পি মারা হয়েছিল। বর্তমানে সেই রাস্তা পুনরায় খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। সারেঙ্গা ব্লকের গড়গড়িয়া পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণডিহা, কার্গিল মোড়, মাকড়কোল, বেজডাঙা, বাইশপাতরা, পেঁচেড়া, বেলেপাল, মাজুরিয়া এবং লালগড় ব্লকের মুড়ার, লোধাশুলি, শ্যামচরণডাঙা-সহ আশেপাশের ২৫-৩০টি গ্রামের ৪০ হাজারের বেশি মানুষ প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে এই রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। প্রতিদিন এই রাস্তায় ৮-১০টি বাস চলাচল করে। কংসাবতী নদীর ব্রাহ্মণডিহা ঘাট থেকে প্রতিদিন শতাধিক বালি গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার অনেক জায়গায় পিচ, বোল্ডার উঠে গিয়েছে। বড় বড় গর্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেই গর্ত মেরামত না করায় তা বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে। গ্রীষ্মকালে রাস্তার উপর দিয়ে যে কোনও গাড়ি গেলেই লাল মোরামের ধুলো ওড়ে। আর বৃষ্টিতে কাদা প্যাচপ্যাচে এই রাস্তায় হেঁটে যাওয়ায় কষ্টকর হয়ে ওঠে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তবু রাস্তা সংস্কারে কোনও হুঁশ নেই প্রশাসনের। ব্রাহ্মণডিহা গ্রামের বাসিন্দা অচিন্ত্য পাত্র, শ্যামচরণডাঙা গ্রামের মোহন মুর্মু বলেন, “এই রাস্তায় আগে রামগড়, লালগড় যাওয়ার ৮-১০ টি বাস চলত। গত বর্ষার পর থেকে রাস্তার পিচ, বোল্ডার— সব উঠে গিয়েছে। রাস্তার এই বেহাল অবস্থার জন্য বাস চলাচল বন্ধ হতে বসেছে।” তাঁদের অভিযোগ, “প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে বালিবোঝাই গাড়ি এই রাস্তার উপর দিয়ে মেদিনীপুর, সারেঙ্গা সহ নানা জায়গায় যাচ্ছে। তার ফলেও রাস্তা ভাঙছে। সাইকেল, মোটরবাইকের পাশাপাশি হাঁটাপথেও যাতায়াত দুষ্কর হয়ে উঠেছে।

এলাকার ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ, “এই রাস্তার উপর দিয়েই গড়গড়িয়া হাইস্কুল, মাজুরিয়া-বাইশপাতর হাইস্কুলে যেতে হয়। রাস্তা খারাপের জন্য অসুবিধা হচ্ছে। বাস চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়ায় কলেজ ও টিউশন পড়তে যেতেও ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে।’’ এলাকার মানুষের ক্ষোভ, তাঁদের নানা প্রয়োজনে ব্লক সদর সারেঙ্গায় যেতে হয়। লালগড় যাওয়ার সোজা রাস্তা এটাই। কিন্তু আগের তুলনায় রাস্তার অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে পড়ছে। ফলে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। নিতান্ত বাধ্য হয়ে ওই রাস্তার উপর দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। ওই রাস্তার এক গাড়ি চালকের ক্ষোভ, “রাস্তায় গর্তে পড়ে মাঝে মধ্যেই গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙছে। সময় মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো যাচ্ছে না।’’

এলাকার বাসিন্দা তথা সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষের স্বীকারোক্তি, কয়েক মাস আগে ব্রাহ্মণডিহা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানা মুড়ার পর্যন্ত রাস্তা বোল্ডার-মোরাম দিয়ে আংশিক মেরামতি করা হয়েছিল। কিন্তু বালিবোঝাই ভারী গাড়ি যাতায়াতের জন্যই কিছু কিছু এলাকায় রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। তিনি বলেন, “ব্রাহ্মণডিহা থেকে মুড়ার মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদ এক কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণডিহা গ্রামের ভিতরে কিছুটা রাস্তা ঢালাই করা হবে। খুব শীঘ্রই টেন্ডার হবে। কার্গিল মোড় থেকে মাজুরিয়া পর্যন্ত রাস্তাটিও পাকা করা হচ্ছে। এ জন্য অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় অনুদান তহবিল থেকে ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের কাজও শুরু হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Agitation damage road lalghar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy