Advertisement
E-Paper

নির্মলে জোর দিয়ে তালা শৌচালয়েই

জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের নজর রয়েছে। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ থাকা শৌচালয়গুলি চালু করে দেব।’’

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:১০
বরাবাজার বাসস্ট্যান্ডে। নিজস্ব চিত্র

বরাবাজার বাসস্ট্যান্ডে। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বাংলা প্রকল্পে রাজ্যের অন্যান্য জেলার থেকে ঢের পিছিয়ে পুরুলিয়া। ওই প্রকল্পে গতি আনতে জেলা প্রশাসন কোমর বেঁধে নেমেছে। কিন্তু জেলার কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং বাসস্ট্যান্ড চত্বরে শৌচালয় কয়েক বছর আগে তৈরি হয়ে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে থাকলেও, প্রশাসন তা কেন চালু করতে তৎপর হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের নজর রয়েছে। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ থাকা শৌচালয়গুলি চালু করে দেব।’’

পুজোর আগে পর্যন্ত এই প্রকল্পে রাজ্যের নিরিখে পুরুলিয়ার অগ্রগতি ছিল ঠিক অর্ধেক। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার জেলায় এসে জানিয়েছিলেন, রাজ্যে এই প্রকল্পে অগ্রগতির হার ৯০ শতাংশ, যেখানে পুরুলিয়ার অগ্রগতি মাত্র ৪৫ শতাংশ। ২০১২-‘১৩ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে জেলায় কাজ শুরু হলেও, পুরুলিয়ায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার ১৫১টি শৌচাগার তৈরি হয়েছে। জেলার ২০টি ব্লকে আরও ২ লক্ষ ৯৮ হাজার ৮৭০টি শৌচাগার গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নেয় প্রশাসন। তারপর থেকে জেলা প্রশাসনের কর্তারা সমাজের বিভিন্নস্তরের লোকজনকে নিয়ে ওই প্রকল্পে গতি আনতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন।

কিন্তু জনবহুল এলাকায় লোকজনের সুবিধার জন্য সরকারি উদ্যোগে তৈরি করা শৌচালয়গুলি নানা কারণে দিনের পর দিন চালু না করে ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে লোকজন সেই আড়াল খুঁজেই ওইসব জায়গায় শৌচকর্ম সারছেন। তাতে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে আখেরে নির্মল বাংলা প্রকল্পের কাজই পিছিয়ে দিচ্ছে।

মানবাজার বাসস্ট্যান্ডে পূর্ত বিভাগ দু’টি শৌচালয় তৈরি করেছিল দু’বছরেরও আগে। কিন্তু চালু হয়নি। পাশেই মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতি আরও একটি শৌচালয় তৈরি করে। সেটিও একই অবস্থা। বরাবাজার বাসস্ট্যান্ডে একটি শৌচাগার তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। বিডিও (বরাবাজার) শৌভিক ভট্টাচার্য জানান, সম্প্রতি পূর্ত বিভাগ তাঁদের হাতে ওই শৌচালয়ের চাবি তুলে দিয়েছেন। শীঘ্রই তা চালু হয়ে যাবে।’’ বিডিও (মানবাজার ১) নিলাদ্রী সরকারও জানিয়েছেন, শৌচালয়ের চাবি পেয়েছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ হয়ে গেলেই তা চালু করে দেওয়া হবে।

কয়েকটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরেও রোগীর পরিজনদের সুবিধার্থে এ রকম শৌচালয় কয়েক বছর আগে তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি প্রাক্তন মানবাজারের বিএমওএইচ কালীপদ সোরেন জানিয়েছিলেন, জলের সংযোগ না থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে থাকা সুলভ শৌচালয়টি চালু করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালের জলের লাইনের সাথে ওই শৌচালয়ের জলের সংযোগ করা হবে।

কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতি ইন্দ্রবিল বাসস্ট্যান্ডের কাছে দু’বছর আগে একটি শৌচাগার তৈরি করেছিল। কিন্তু চালু হয়নি। রঘুনাথপুর কলেজের কাছেও এ রকম আরেকটি শৌচালয় প্রায় তিন বছর ধরে পড়ে রয়েছে। কোথাও জলের সংযোগ নেই, কোথাও বা বিদ্যুতের লাইন আসেনি, কোথাও বা নির্মাণকারী সংস্থা পঞ্চায়েত সমিতির হাতে চাবি তুলে দেয়নি। এ রকম নানা কারণে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অনেকগুলি শৌচালয় নির্মিত হয়ে পড়ে রয়েছে।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘জেলার কোথায় এ রকম কতগুলি শৌচালয় নির্মিত হয়ে পড়ে রয়েছে, আমরা ব্লক স্তরে খোঁজ নিয়েছি। মূলত বেশির ভাগ শৌচালয় পঞ্চায়েত সমিতি নির্মাণ করেছে। কিন্তু কী ভাবে এগুলি চালানো হবে, এ নিয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা ছিল না।’’ জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবের জন্য এগুলি চালু করা যাচ্ছিল না। সম্প্রতি ওই জট কাটানো গিয়েছে। খুব শীঘ্রই শৌচালয়গুলি চালু হয়ে যাবে।

তবে শুধু শৌচালয় চালু করলেই হবে না, ব্যবহারে আগ্রহী করাও প্রয়োজন। মানবাজার কৃষক বাজারে কিছু পয়সা খরচ করে সুলভ শৌচালয় ব্যবহার করা যায়। শৌচাগারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নির্মল বাউরি জানাচ্ছেন, কৃষক বাজারে প্রতিদিন কয়েক হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা আনাগোনা করলেও শৌচালয় ব্যবহারের দিকে তাঁদের তেমন ঝোঁক নেই। দিনে গড়ে দশ জন ব্যবহারকারীও আসেন না। তাঁদের মধ্যে অনেকেই শৌচালয় ঠিক মতো ব্যবহারও করতে পারেন না। নোংরা করে দিয়ে চলে যান। একই অভিজ্ঞতা বান্দোয়ানের বিএমওএইচ জয়দেব সোরেনের। তিনি জানান, কয়েক মাস আগে এক ব্যবসায়ী দম্পতি স্নানাগার ও শৌচালয় নির্মাণ করে দিলেও অনেকেই বাইরে শৌচকর্ম সারছেন। তাই সচেতনতাও দরকার।

Nirmal Bangla Purulia পুরুলিয়া বরাবাজার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy