টাকা চুরি করেছেন, এই অপবাদ দিয়ে পরিচারককে দফায় দফায় নিজের বাড়িতে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠল থানার ‘মেজোবাবু’ (সেকেন্ড অফিসার)-র বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, ওই পরিচারকের দিদির শ্লীলতাহানির পাশাপাশি তাঁকে কুপ্রস্তাবও দিয়েছেন বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার ওই পুলিশ আধিকারিক। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে প্রতিবাদে নামে এলাকাবাসী। অভিযুক্ত আধিকারিকের কঠোর শাস্তির দাবিতে রাত ১টা পর্যন্ত বাঁকুড়া ঝিলিমিলি রাজ্য সড়ক অবরোধ করে রাখেন স্থানীয়েরা। শনিবার সকালে ফের একদফা অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার মেজোবাবু রানিবাঁধ এলাকায় ভাড়াবাড়িতে থাকেন। সেখানেই পরিচারক হিসাবে কাজ করতেন স্থানীয় রাজাকাটা গ্রামের যুবক সজল সহিস। গত বৃহস্পতিবার মেজোবাবুর প্যান্টের পকেট থেকে কিছু টাকা খোয়া যায় বলে অভিযোগ। সজলের দিকে আঙুল তোলেন তিনি। অভিযোগ, বাড়ি থেকে মোট ১২ লক্ষ টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে সজলকে ঘরে আটকে রেখে মারধর করেন পুলিশ আধিকারিক। বেল্ট ও লাঠি দিয়ে প্রবল মারধরের পাশাপাশি সার্ভিস রিভলবার দেখিয়ে সজলকে প্রাণে মেরে ফেলা এবং তিনতলার ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার কয়েক ঘন্টা ধরে নির্যাতনের পর শুক্রবার আবার সজলকে নিজের বাড়িতে ডেকে ওই পুলিশ আধিকারিক মারধর করেন বলে দাবি সজল ও তাঁর পরিবারের।
সজলের অভিযোগ, ওই পুলিশ আধিকারিক তাঁদের রাজাকাটা গ্রামের বাড়িতে চড়াও হয়ে নগদ কিছু টাকা ও গয়না নিয়ে যান। বাধা দিতে গেলে সজলের দিদির শ্লীলতাহানি করা হয়। শুক্রবার বিকেলে সজল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে রানিবাঁধ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হতেই প্রতিবাদে সরব হন স্থানীয়েরা। অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়ার রানিবাঁধের ক্ষুদিরাম স্ট্যাচু মোড়ে রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। অবরোধের জেরে বাঁকুড়া ঝিলিমিলি ও বাঁকুড়া বারিকুল দুই রাজ্য সড়কেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে এলাকাবাসীর প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। শেষ পর্যন্ত শনিবার সকাল ১০টা থেকে ফের একই জায়গায় পথ অবরোধ শুরু করেন এলাকার ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন:
সজল বলেন, ‘‘আমি কোনও টাকা চুরি করিনি। রানিবাঁধ থানার মেজোবাবু খুনের হুমকি দিয়ে আমাকে চুরির কথা স্বীকার করতে বাধ্য করেছেন। আমার বাড়িতে হানা দিয়ে বাক্স ভেঙে কিছু নগদ টাকা ও সোনার গয়না ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। বাধা দিতে গেলে আমার দিদির শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’’ বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, ‘‘ঘটনা নিয়ে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য খাতড়ার এসডিপিওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের ভুলত্রুটি থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ একই সঙ্গে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য তাঁদের রানিবাঁধ থানায় তলব করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে না গিয়ে অভিযোগকারীরা দফায় দফায় পথ অবরোধ করছেন। পুলিশ অবরোধকারীদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।