Advertisement
E-Paper

টাকা দিতে না পারায় রোগিণীকে ছ’দিন আটকে রাখার অভিযোগ

বারো দিনের চিকিৎসা করাতে রোগিণীর পরিবারের কাছে বিল চাওয়া হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু সেই টাকা জোগাড় করতে না পারায় রোগিণীকে ছ’দিন ধরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল পুরুলিয়া শহরের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫১
তখনও: সকালে নার্সিংহোমেই ছিলেন বসমতী। নিজস্ব চিত্র

তখনও: সকালে নার্সিংহোমেই ছিলেন বসমতী। নিজস্ব চিত্র

বারো দিনের চিকিৎসা করাতে রোগিণীর পরিবারের কাছে বিল চাওয়া হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু সেই টাকা জোগাড় করতে না পারায় রোগিণীকে ছ’দিন ধরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল পুরুলিয়া শহরের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। শেষে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হওয়ায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মোটে চার হাজার টাকা নিয়ে সেই রোগিণীকে ছেড়ে দিল পুরুলিয়ার সাউথলেক রোডের ওই নার্সিংহোম। সোমবারের ঘটনা।

ঝালদা থানার হেঁসাহাতু গ্রামের বাসিন্দা সীমন্ত সিং মুড়া এ দিন রাতে দিদিকে নার্সিংহোম থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, ‘‘ওঁরা জানিয়েছিল, ৩৫ হাজার টাকা বিল হয়েছে। আবার কয়েকদিন আটকে রাখায় বিল আরও বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু মোটে পাঁচ হাজার টাকার বেশি জোগাড় করতে পারিনি। তবে জেলাশাসক আমাদের অনুরোধ রাখায় চার হাজার টাকা পেয়েই ওঁরা দিদিকে ছেড়ে দিল।’’ জেলাশাসক অলোকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ফোন করে ওই রোগিণীর আর্থিক দুরবস্থার কথা ভেবে বিলের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়। ছাড়া পেয়েছেন শুনে ভাল লাগছে।’’ নার্সিংহোমের মালিক প্রদীপ সিংহানিয়া জানান, ওই পরিবার চার হাজার টাকা দিতে পেরেছিলেন। রোগিণীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে গত ছ’দিন ধরে সীমন্তকে দিদিকে নার্সিংহোম থেকে ছাড়িয়ে আনতে কম ভুগতে হয়নি। সীমন্ত জানান, ১৪ মার্চ তাঁর বিধবা দিদি বসমতী সিং মুড়াকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আট দিন তিনি ভর্তি ছিলেন। তারপরে হাসপাতালের যে চিকিৎসক তাঁর দিদিকে দেখছিলেন, তিনি একটি পরীক্ষা করিয়ে তাঁর চেম্বারে দেখাতে বলেন। সীমন্তের দাবি, সেখানে ওই চিকিৎসক বসমতীকে পুরুলিয়ার ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করতে বলেন। চিকিৎসক তাঁকে এও জানিয়েছিলেন, দিন পাঁচেক ভর্তি রেখে কমবেশি আট হাজার টাকা খরচ করে চিকিৎসা করালে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন।

সীমন্ত দিন মজুরি করেন। তাঁর দিদি একটি স্বনির্ভর দলের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর কথায়, ‘‘স্বনির্ভর দল থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়ার ভরসায় দিদিকে ২৩ মার্চ নার্সিংহোমে ভর্তি করি। পরে জানানো হয়, ৪ এপ্রিল দিদিকে ছাড়ানোর সময় নার্সিংহোমকে ৩৫ হাজার টাকা বিল দিতে হবে! আমি নার্সিংহোমের কর্মীদের বলি চিকিৎসক বলেছিলেন, কম টাকায় সব হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁরা তা শুনতে রাজি হননি। শুক্রবার ফের খোঁজ করতে গিয়েছিলাম, ওঁরা জানিয়েছিল, বিল আরও বেড়ে গিয়েছে। টাকা না পেলে তাঁরা দিদিকে ছাড়বে না বলে জানায়।’’

তিনি জানান, স্বনির্ভর দল থেকেও তিনি টাকা পাননি। ঘরের গরু-বাছুর বিক্রি করে হাজার পাঁচেক টাকা জোগাড় করেন। কিন্তু তাতে কিছুই হবে না বলে নার্সিংহোম জানিয়ে দিয়েছিল। শেষে সোমবার জেলাশাসকের দ্বারস্থ হওয়ার পরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

নার্সিংহোমের মালিক প্রদীপ সিংহানিয়া দুপুরে দাবি করেছিলেন, ‘‘ওষুধ দেওয়া, অক্সিজেন দেওয়া ও বিভিন্ন পরীক্ষা করানো-সহ বেডের খরচ ধরে ওই রোগিণীর বিল হয়েছে ২৪,২৩৬ টাকা। এর বাইরে রয়েছে চিকিৎসকদের প্রতিদিন দু’বার করে দেখার জন্য ১০০০ টাকা করে বিল।’’ যদিও দৈনিক এত যে খরচ, তা রোগিণীর পরিবারকে আগে জানানো হয়েছিল কি না সে ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি প্রদীপবাবু। কয়েকদিন আগেই পুরুলিয়া জেলা সফরে এসে জেলার নার্সিংহোমের মালিকদের মানবিক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও ওই রোগিণীকে কেন আটকে রাখা হল? সদুত্তর মেলেনি।

Purulia Southlake Hospital Medical Negligence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy