Advertisement
E-Paper

তালড্যাংরা দখলে রাখতে ফের ভোট-যুদ্ধে অমিয়

দলের জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বিধায়কের পদ ছেড়েছিলেন। মাঝে প্রায় ১৯ বছরের ব্যবধান। আর কখনও প্রত্যক্ষ ভাবে সংসদীয় রাজনীতিতে থাকেননি তিনি। এরই মাঝে ২০১১ সালে রাজ্যে ঘটেছে পালাবাদল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০২:০৯
প্রচারের প্রস্তুতিও শুরু। বিষ্ণুপুরে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

প্রচারের প্রস্তুতিও শুরু। বিষ্ণুপুরে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

দলের জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বিধায়কের পদ ছেড়েছিলেন। মাঝে প্রায় ১৯ বছরের ব্যবধান। আর কখনও প্রত্যক্ষ ভাবে সংসদীয় রাজনীতিতে থাকেননি তিনি। এরই মাঝে ২০১১ সালে রাজ্যে ঘটেছে পালাবাদল। সাড়ে তিন দশকের শাসক থেকে তাঁরা এখন বিরোধী। লড়াই এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দায়িত্বের পাশাপাশি তাঁকে আরও গুরু দায়িত্ব দিয়ে ভোটের ময়দানে নামাল সিপিএম। তিনি— অমিয় পাত্র। বাম আমলে সিপিএমের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা নিজেই বাঁকুড়া জেলার এসপি এবং ডিএম ছিলেন বলে বর্তমান শাসক দলের নেতারা এখনও অভিযোগ তোলেন। আড়ালে অবশ্য এঁদের অনেকেই মানেন, রাজনীতির ময়দানে অমিয়বাবুর যোগ্য নেতা কমই আছেন। ২০১৬ সালে আরও একটি বিধানসভা ভোটের মুখে সিপিএমও তালড্যাংরা কেন্দ্রে ক্ষমতা ধরে রাখতে ভরসা রাখল অমিয়বাবু উপরই।

১৯৮৭ থেকে ’৯৭ পর্যন্ত এই তালড্যাংরা থেকেই জয়ী হয়ে দু’বারের বিধায়ক নির্বাচিত হন অমিয়বাবু। ১৯৯৫ সালে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে দলকে বাঁকুড়ায় জেতানোর দায়িত্ব তাঁর ঘাড়ে এসে পড়ে। আর ভোটে দাঁড়াননি। ২০১১ সালে প্রবল তৃণমূল হাওয়ায় সিপিএম তথা বামফ্রন্ট গোটা খুড়কুটোর মতো উড়ে যাওয়ার পরে বিভিন্ন জেলায় সিপিএমের নেতৃত্ব যখন ঢেলে সাজা হচ্ছে, অমিয়বাবু নিজেই পদ থেকে সরে যান। সেটা ২০১৫ সাল। তাঁর বিশ্বাসভাজন ও ঘনিষ্ঠ অজিত পতি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। তার আগেই অবশ্য অমিয়বাবু রাজ্য কমিটির সদস্য পদ পেয়ে গিয়েছিলেন। স্পষ্টবক্তা হিসাবে দলের মধ্যে পরিচিতি রয়েছে অমিয়বাবুর। দলের ত্রুটি ও দুর্বলতা খোলাখুলি স্বীকার করেন। দলের অন্দরে তো বটেই, বাইরেও নেতাই গণহত্যা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। বলেছিলেন, সশস্ত্র শিবির বসিয়ে এলাকা দখল করার পথ আদৌ ঠিক নয়।

গত বিধানসভা ভোটে পরিবর্তনের ঝড়ে জেলার ১২টির মধ্যে ন’টি কেন্দ্রে বামেরা হারলেও জঙ্গলমহলের তিনটি রানিবাঁধ, রাইপুর ও তালড্যাংরা—এই তিন কেন্দ্রে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল সিপিএম। পরবর্তী পঞ্চায়েত ভোট ও লোকসভা ভোটের নিরিখে অবশ্য তৃণমূল এই তিনটি কেন্দ্রেই সিপিএমের তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে। যদিও গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটে তালড্যাংরা ব্লকের কোনও পঞ্চায়েতে প্রার্থীই দিতে পারেনি বামেরা। তখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ উঠেছিল।

পাশাপাশি, এটাও ঠিক, গত কয়েক বছর ধরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই বিধানসভা কেন্দ্রে একাধিক সমবায় সমিতি, পাঠাগার পরিচালন কমিটির নির্বাচনে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজিত হতে হয়েছে বামেদের কাছে। তৃণমূলেরই জেলা নেতাদের একাংশের দাবি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতেই দলের রাজ্য নেতৃত্ব এই বিধানসভা কেন্দ্রে কলকাতা থেকে প্রার্থী দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতা দখলে রাখতে খাস তালড্যাংরার বাসিন্দা, বহু লড়াইয়ের পোড়খাওয়া অমিয়বাবুকেই বাজি করেছে সিপিএম। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর স্বামী সমীর চক্রবর্তী (বুয়া)।

সিপিএম সূত্রের খবর, তালড্যাংরার বিদায়ী সিপিএম বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্রের জায়গায় অমিয়বাবুকে আনার পিছনে ওই অঞ্চলে তাঁর জনসংযোগ। হাতের তালুর মতো তিনি চেনে ওই তল্লাটকে। তা ছাড়া, এক তৃণমূল কর্মী খুনের অভিযোগও রয়েছে মনোরঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে। ওই খুনের মামলায় তিনি কিছুদিন জেলও খেটেছেন। জেলা সিপিএমের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে কাউকে মুখ করে বাঁকুড়ায় তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করা দরকার। এ ক্ষেত্রে অমিয়বাবুর চেয়ে যোগ্য প্রার্থী আর কে আছেন?’’

মনোরঞ্জনবাবুকে টিকিট না দেওয়া প্রসঙ্গে অমিয়বাবু বলেন, ‘‘আমাদের দলের নিয়মই হল, চার বারের পরে বিধায়কেরা আর টিকিট পান না। মনোরঞ্জনবাবু চার বারের বিধায়ক বলেই এ বার তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। তবে, ভোটের দায়িত্বে উনিই থাকবেন।’’ রাইপুরের বর্তমান বিধায়ক উপেন কিস্কুকে এ বার শারীরিক অসুস্থতার কারণে টিকিট দেওয়া হয়নি বলে অমিয়বাবু জানিয়েছেন। তাঁর জায়গায় প্রার্থী করা হয়েছে দিলীপ হাঁসদাকে। আবার রানিবাঁধে দেবলীনা হেমব্রই আবার টিকিট পেয়েছেন। তিনি তিন বারের বিধায়ক।

তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় তালড্যাংরা ব্লকের পাশাপাশি সিমলাপাল ব্লক ও ইঁদপুরের কিছু এলাকা রয়েছে। খাস তালড্যাংরায় তৃণমূল নেতা মনসারাম লায়েক ও তাপস সুরের দ্বন্দ্ব আগে একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। সিমলাপালের তৃণমূল ব্লক সভাপতি সনৎ দাস ও তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র, শীতল দে-র লড়াইয়ে সিমলাপাল গ্রাম পঞ্চায়েত সহ একাধিক পঞ্চায়েতেই দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে দেখা গিয়েছিল বছর খানেক আগে। এই দ্বন্দ্ব প্রভাব ফেলেছিল একাধিক সমবায় সমিতির নির্বাচনেও। তৃণমূল সূত্রের খবর, বর্তমানে দিব্যেন্দুবাবুর সঙ্গে সনৎবাবুর সমস্যা মিটে গেলেও শীতলবাবু নিজের আলাদা গোষ্ঠী নিয়েই রয়েছেন। যদিও এই ঘটনার কথা অস্বীকার করে শীতলবাবু বলেন, “দলের প্রার্থীকে জেতানোই এখন আমার এক মাত্র লক্ষ্য।’’ অন্য দিকে, তালড্যাংরা ব্লকেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও কমার লক্ষণ নেই। এমনকী, জেলার পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তালড্যাংরায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা শুনতে হয়েছে। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “একাধিক গোষ্ঠী থেকে একাধিক প্রার্থীর দাবি উঠছিল। রাজ্য থেকে বহিরাগত কাউকে না প্রার্থী করলে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়ানো সম্ভব ছিল না।’’

শাসক দলের এই দ্বন্দ্বই সিপিএমকে বাড়তি আশা জোগাচ্ছে ভোটের মুখে। মাসখানেক আগেই বাঁকুড়ার মাচানতলায় দলীয় সমাবেশ অমিয়বাবু বুথে বুথে শক্তি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ দিন প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে অমিয়বাবু বলেন, “মানুষের উপর ভরসা আছে। গত লোকসভা ভোটেও কলকাতা থেকে এক জন এসেছিলেন। জিতেওছেন। কিন্তু, ভোটের পর থেকে তাঁকে আর এলাকায় দেখাই যায় না! মানুষ বহিরাগত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ফের একই ভুল করবেন বলে আমার মনে হয় না।’’

যদিও ঘর গুছিয়ে মাঠে নামার লড়াই শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। সোমবার বাঁকুড়া শহরের একটি লজে তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী সমীর চক্রবর্তীকে নিয়ে একটি কর্মিসভা করে তৃণমূল। উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী-সহ অনেকে। অরূপবাবুর বক্তব্য, “আমাদের প্রার্থী এক জন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। তিনি তালড্যাংরাতেই থাকবেন। আমি নিজে ওই কেন্দ্রে বাড়তি সময় দেব। পরাজয়ের জন্য এ বার তৈরি হোক বামেরা।’’

election assambly election campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy