দীর্ঘ জীবনে তিনটি বড় যুদ্ধের সাক্ষী থেকেছি। দু’বার পাকিস্তান আর এক বার চিনের সঙ্গে। প্রথম বার যখন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধে, দশম শ্রেণির ছাত্র। বাড়ির বড়দের সঙ্গে রেডিয়োয় যুদ্ধের খবর শুনতাম। স্কুলে গিয়ে বন্ধু ও শিক্ষকদের কাছে যুদ্ধের পরিণাম কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলত।
এর পরে চিনের সঙ্গে যখন যুদ্ধ বাঁধল, কলেজে পড়ি। রাজ্যে যুক্তফ্রন্টের সরকার ছিল। শত্রু দেশের যুদ্ধবিমানের নজর এড়াতে বাঁকুড়া শহরের রাস্তার আলোর উপরে কালো রঙের ছোপ দেওয়া থাকত। সন্ধ্যা হলে বাজার ফাঁকা হয়েযেত। আমরাও বাড়িতে আলো নিভিয়ে দিতাম।
তখন দেশে এক দিকে খাবারের অভাব। অন্য দিকে ব্যাপক হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে নাজেহাল অবস্থা। পাড়ায় পাড়ায় লঙ্গরখানার আয়োজন করা হত। মনে পড়ে, লঙ্গরখানার মাধ্যমে ‘মাইলো ঘাঁটা’ দেওয়া হত। রাতে সেটাই খেতাম। ১৯৭১-এ পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সময়ে বাঁকুড়ার আকাশ হয়ে প্রচুর বোমারু বিমান উড়ে গিয়েছে। কোন বিমান কোন পক্ষের, বোঝার উপায়ছিল না। আওয়াজ পেলেই ভয়ে সিঁটিয়ে যেতাম।
এ দিকে, বেকারত্বের জ্বালা আর মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে। উদ্বাস্তুদের ভিড় তখন জেলার সর্বত্র। এক অদ্ভূত অস্থির পরিস্থিতি। কবে সব স্বাভাবিক হবে, তারই প্রতীক্ষায় দিন গুনতাম।
কার্গিল যুদ্ধের প্রভাব অবশ্য এ দিকে তেমন পড়েনি। আজ যখন এই দেশের চার দিকে যুদ্ধ যুদ্ধ রব, মনে পড়ছে সেই সব দিন।যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতি আর দেখতে চাই না। যুদ্ধে তো কারওভাল হয় না। (অনুলিখন: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)