বয়সে ন্যুব্জ। তবে যুদ্ধের কথা শুনলে এখনও যেন রক্ত গরম হয়ে ওঠে। মন যেন ছুটে যেতে চায় ফেলে আসা সেই রণাঙ্গণে। তিনি ভূতনাথ গরাঁই।
কোটশিলার জিউদারুর বাসিন্দা আশি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধ হাতড়াচ্ছিলেন ১৯৭১ সালের যুদ্ধ-স্মৃতি। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র থেকে সোজা জম্মুর সাম্বা সেক্টরে পোস্টিং হল। ‘সিগন্যাল ম্যান’ হিসেবে কাজের সুবাদে সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেননি। তবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কিছু দূরে অস্থায়ী ছাউনিতে কাটানো রাতের পর রাত যুদ্ধের আঁচ ভালই টের পাওয়াত। বৃদ্ধ বলেন, “হেড কোয়ার্টার থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে গোপন বার্তা আদান-প্রদানের বিষয় তদারকি করাই ছিল মূল কাজ। সিগন্যাল ম্যান হলেও যুদ্ধের সময়ে ‘থ্রি নট থ্রি’ রাইফেল হাতে নিয়েছিলাম। ১৭-১৮ দিন মতো যুদ্ধ চলেছিল। যুদ্ধ শেষে আট মাস পরে ঘরে ফেরার অনুমতি পাই।”
পাকিস্তানের কথা দ্বিতীয় বার শুনে চোয়াল যেন শক্ত হয়ে ওঠে। ভিড় করে আরও স্মৃতি। ভূতনাথ জানান, যুদ্ধের কোনও একটি দিনে পাকিস্তান সাম্বা সেক্টরে কয়েক বার আঘাত হানার চেষ্টা করেছিল। তবে সফল হয়নি। উল্টে ভারতীয় সেনাই শত্রুর একটি যুদ্ধবিমানকে নীচে নামিয়ে এনেছিল। যুদ্ধের স্মারক হিসেবে পাওয়া ‘সংগ্রাম পদক’ এখনও যত্নে রাখা। সে দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ বলে চলেন, “ছেলে সুধীরও সেনাবাহিনীতে ছিল। আধিকারিক হিসেবে ২০২২-এ অবসর নিয়েছে। আমার মতোই সিগন্যাল ম্যানের দায়িত্বে থেকে ১৯৯৯-এ লে সেক্টরে কার্গিল যুদ্ধ খুব কাছ থেকে দেখেছে।” সুধীরের কথায়, “শুরুতে খানিকটা ভয়ই লাগত। তবে পরে জেদ চাপে, যে করেই হোক শত্রুদের হাত থেকে কার্গিল পুনরুদ্ধার করতেই হবে।” তিনি আরও জানান, বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া। ছেলে শুভজিৎ পুণাতে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে যোগ দেবেন সেনাবাহিনীতে। তিন প্রজন্ম দেশের সেবায়—এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হবে!
আরও একটি যুদ্ধের মুখোমুখি দেশ। প্রতিপক্ষ সেই পাকিস্তান। কী বলবেন? শান্ত অথচ কঠিন স্বর ভূতনাথের, “এ বার ওদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)