পুরুলিয়ায় টিনটিন। একা নয়। সঙ্গে রয়েছে ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবু, অ্যাস্টেরিক্স— সবাই। মলাট বন্দী হয়ে এ বার শহরবাসীর হাতের নাগালে চলে এসেছে গল্প-উপন্যাস-কমিকসের এমন সব বিখ্যাত চরিত্ররা। ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’র জন্য আর কলকাতা ছুটতে হবে না। সোমবার বই রসিকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে পুরুলিয়া শহরের নমোপাড়া এলাকায় উদ্বোধন হল একটি নতুন আনন্দ বিপণির। সেখানে পাওয়া যাবে ‘আনন্দ পাবলিশার্স’ এবং ‘সিগনেট’ থেকে প্রকাশি সমস্ত বই।
এ দিন বাগদা রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী প্রাণেশানন্দ নতুন বিপণিটির দ্বারোদ্ঘাটন করেন। বিপণি ঘুরে দেখে তিনি বলেন, ‘‘বই তো আমাদের সবচেয়ে ভাল বন্ধু। মোবাইল-ইন্টারনেটের যুগে এখন বইপড়া, চিঠি লেখা কমে যাচ্ছে। কিন্তু তা দিয়ে বইয়ের মত মনের খিদে মেটে না।’’ প্রথম দিন বিপণির দরজা খুলতে না খুলতেই চলে এসেছিলেন এলাকার বাসিন্দা, জগন্নাথ কিশোর কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বই কিনতে আগে মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হত। কলকাতা থেকে বই আনাতে পেরিয়ে যেত অনেক দিন। সেই ভাবেই ‘আনন্দ’-র অনেক বই কিনেছি। এই বিপণি চালু হওয়ায় সেই ঝঞ্ঝাট মিটল। জেলার পাঠকদের কাছে ব্যাপারটা খুবই আনন্দের।’’
বরিবার খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে সকাল সকাল হাজির হয়েছিলেন মানভূম ভিক্টোরিয়া ইন্সস্টিটিউশনের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, জগন্নাথ কিশোর কলেজের অধ্যাপক রাজীব গোস্বামী, পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের ইতিহাসের শিক্ষক শ্যামল মণ্ডল। তাঁরা জানান, এত দিন ক্যাটালগ দেখে পছন্দের বই আনাতেন কলকাতা থেকে। খবরের কাগজ বা পত্র-পত্রিকায় রিভিউ পড়ে, অথবা বইয়ের নাম দেখে আকৃষ্ট হয়ে ফরমায়েশ দিয়ে তা আনিয়ে নিতেন। তার কোনও বই মনে ধরত। কোনওটিতে আবার মোহভঙ্গ হত। রাজীববাবু বলেন, ‘‘নিজের হাতে পাতা উল্টে বই কিনতে পারার মস্ত সুবিধা রয়েছে। নিজের রুচি মতো পড়া যায়।’’ বিশ্বনাথবাবুর মতে, ‘‘অনেক ভাল বইও বিশেষ প্রচার পায় না। তাকে থরে থরে সাজানো বইয়ের মধ্যে থেকে সেগুলি নিজের হাতে আবিষ্কার করার সুযোগ জেলার বাসিন্দাদের ন’ মাসে ছ’ মাসে মেলে। এ বার থেকে রোজ মিলবে।’’
বিপণিতে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা গোস্বামী, বর্ষা চট্টোপাধ্যায়রা। বই পড়া তাঁদের নেশার মতো। এ দিন বেশ কিছু বই ব্যাগবন্দি করেও ফেললেন তাঁরা। শর্মিষ্ঠাদেবীরা বলেন, ‘‘পছন্দের বই কিনে রাখার আনন্দ অন্য রকম। মন খারাপ হতে তাক থেকে নামিয়ে বসে পড়া যায়।’’ নিজের পাড়ার মধ্যেই চালু হওয়া নতুন বিপণিতে সকাল সকাল একবার ঢুঁ মেরে যান শহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়ও। তারকেশবাবুর কথায়, ‘‘বই উপহার হিসেবে খুব ভাল। হাতের কাছে রাশি রাশি বই পাওয়াটা জেলার পাঠকদের মস্ত প্রাপ্তি।
আনন্দ পাবলিশার্সের সুবীর মিত্র জানান, এটি আনন্দর ৪৯তম বিপণি। এখানে শুধু যে প্রকাশনার সমস্ত বই পাওয়া যাবে, তা-ই নয়, বইয়ের দামে মিলবে ছাড়ও। সেই ছাড়ের টাকা অবশ্য নগদে পাওয়া যাবে না। তার বদলে বেছে নেওয়া যাবে পছন্দের আরও বই। বিপণির কর্ণধার নিবেদিতা হাজরা বলেন, ‘‘জেলার পাঠকরা এ বার সারা বছর ‘আনন্দে’ থাকবেন।’’