Advertisement
E-Paper

ভোট মিটতেই নিশ্চিন্তে অনুব্রত

পঞ্চায়েত ভোট থেকে, কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন— সব ক্ষেত্রেই এ জেলায় রক্ত ঝরেছে। শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগও উঠেছে। সেই বীরভূমেই বিনা রক্তপাতে চার পুরসভার ভোট করিয়ে চমকে দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন! এমনকী, বিরোধীরা পর্যন্ত বলতে বাধ্য হচ্ছেন, বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া মোটের উপর জেলায় এ বারের পুর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ। পুলিশ-প্রশাসকে ধন্যবাদ দিয়েছেন বিরোধীরাও।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৩

পঞ্চায়েত ভোট থেকে, কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন— সব ক্ষেত্রেই এ জেলায় রক্ত ঝরেছে। শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগও উঠেছে। সেই বীরভূমেই বিনা রক্তপাতে চার পুরসভার ভোট করিয়ে চমকে দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন! এমনকী, বিরোধীরা পর্যন্ত বলতে বাধ্য হচ্ছেন, বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া মোটের উপর জেলায় এ বারের পুর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ। পুলিশ-প্রশাসকে ধন্যবাদ দিয়েছেন বিরোধীরাও।

যদিও রাজ্যের অন্যত্র বিভিন্ন পুর এলাকায় নির্বাচনকে ঘিরে অশান্তি পিছু ছাড়েনি। গত ১৮ এপ্রিল কলকাতায় যে ভয়াবহতা দেখেছেন সকলে, সেখানে অনুব্রত মণ্ডলের জেলায় এমন ভিন্ন ছবি কী করে? আড়ালে অনুব্রত জানাচ্ছেন, তাঁর ম্যাজিক নাকি ধরতেই পারেননি বিরোধীরা। যেখানে সব ক’টি পুরসভাই তাঁদের দখলে, সেখানে প্রকাশ্যে হৈচৈ করে কী লাভ! নির্বাচন মিটতে না মিটতেই তাই শনিবার সিউড়িতে দলীয় কর্যালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে চারটি পুরসভাই তাঁদের দখলে থাকার সদর্প ঘোষণা করলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। তিনি বললেন, ‘‘জেলার চারটি পুরসভার ৭৩টি আসনের ৬৫ থেকে ৭০টি আসনেই (‌বোলপুরে ১৯, রামপুরহাটে ১৪-১৬, সাঁইথিয়ায় ১৪-১৫ ও সিউড়িতে ১৫-১৭টি) আমাদের দখলে থাকবে। খুব ভাল ভোট হয়েছে। মা-মাটি-মানুষের সৈনিকেরা দেখিয়ে দিয়েছেন, ভদ্র ভাবে কেমন করে ভোট করতে হয়। জেলা পুলিশের ভূমিকাও নিরপেক্ষ ছিল।’’

অবশ্য বিরোধীরা দাবি করছেন, যা ভোট হওয়ার আগের রাতগুলিতেই হয়েছে। বহিরাগতেরাও উপস্থিত ছিল। পুলিশ কিছুটা সদর্থক ভূমিকা নেওয়ায় ঝামেলা করার সুযোগ পায়নি শাসকদল। কিন্তু, তা সত্ত্বেও সাঁইথিয়া এবং রামপুরহাটে অশান্তি, তাঁদের কর্মীদের হেনস্থা করা ও শাসকদলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিজেপি-র জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা। ‘‘সাঁইথিয়া এবং বোলপুরে শাসকদলের পক্ষ থেকে কিছু ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয়েছে। বোলপুরে দলীয় কর্মীদের হেনস্থা ও মারধর করা হয়েছে। রামপুরহাটে তো বুথই দখল হয়ে গিয়েছে!’’— অভিযোগ সিপিএমের জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র ডোমের। যদিও বিরোধীদের এ সব অভিযোগকে পাত্তা দিতে নারাজ অনুব্রত। জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও দাবি করেছে, ‘‘জেলার কোথাও কোনও হিংসার অভিযোগ ছিল না।’’

তৃণমূলের অন্দরের খবর সিউড়ি শহর ছাড়া বাকি পুরসভাগুলির দখল নিয়ে তেমন চিন্তিত ছিল না দল। এক নেতার দাবি, ‘‘প্রচার পর্বের শেষে এসে দল পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যায়, পুরসভাগুলি দখলে নিতে খুব একটা সমস্যা নেই। এমনকী, জেলা প্রশাসনেরও সেই বিশ্লেষণ ছিল। তখনই পুরসভা ভোটের দিন অশান্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয় দল।’’ সঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের পক্ষ থেকে বহিরাগতদের পুর এলাকায় না ঢোকানোর আর্জি ছিল তৃণমূলের জেলা নেতাদের কাছে। তবে, প্রস্তুতি ছিল সব রকমেরই বলে বিরোধীদের দাবি। বহিরাগতেরা উপস্থিতও ছিলেন। তবে, ময়দানে নামতে হয়নি। এমনিতে, সিউড়ি পুরসভার উপরেই ফোকাস বেশি ছিল শাসক দলের। স্থানীয় মানুষদের একটা বড় অংশের পছন্দের তালিকায় ছিলেন না কিছু কাউন্সিলর, সঙ্গে দল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে ছিল আর্থিক দুর্নীতি ও পুরপরিষেবা নিয়েও ক্ষোভ। আর সব থেকে যিনি বেগ দিয়েছিলেন, সেই নির্বাসিত দলীয় বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের তোলা অভিযোগ আর প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতেই নানা কৌশল নিয়েছিল শাসক দল। প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রচার চালাতে হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। সব চেয়ে কঠিন লড়াই যে সিউড়ি পুর শহরেই ছিল, সে কথা মেনে নিয়েছেন অনুব্রতও। বলছেন, ‘‘সিউড়ি পুরসভার লড়াই কঠিনতম।’’ নাম না করে স্বপনকান্তি ঘোষের কথাও বলেছেন, ‘‘চ্যালেঞ্জটা ছিল পাগলটার সঙ্গেই। এখন নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।’’ বিরোধী শিবির অবশ্য বলছেন, খুব একটা নিশ্চিন্তে নেই অনুব্রতও। ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী কংগ্রেস, বিজেপি। উল্টে দিকে, পার্টি কংগ্রেস নিয়ে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যস্ত থাকায় পুরভোটের শেষ মূহূর্তে সে ভাবে প্রচার করতে পারেনি বামেরা। তবে, সব ঠিক থাকলে কয়েকটি আসন পাবে তারাও।

এ দিকে, ভোটের ২৪ ঘণ্টা পরে বিরোধীরা একসুরে বলছেন, ‘‘অন্তত সিউড়ি নিয়ে এতটা নিশ্চিন্তে শাসকদল নেই। ফল প্রকাশের দিনই তা প্রমাণ হয়ে যাবে।’’

Anubrata mondal trinamool tmc mamata bandopadhyay Municipal election police siuri swapan kanti ghosh dayal sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy