Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জলের সমস্যা মেটাতে এটিএম

বৃহস্পতিবার রঘুনাথপুর ২ ব্লকের জোরাডি পঞ্চায়েতের ওই এলাকায় চালু হয়েছে ‘জলের ব্যাঙ্ক’। এটিএমে যেমন ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা তোলা যায়, এখানেও এক ধরণের কার্ড দিয়ে মিলবে জল।

সুরাহা: কার্ড পাঞ্চ করে জল নিচ্ছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

সুরাহা: কার্ড পাঞ্চ করে জল নিচ্ছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০৭:১০
Share: Save:

পাড়ায় নলকূপ মোটে একটি। সেটির জলও মুখে তোলা যায় না। এত দিন পাশের গ্রামে জল আনতে যেতেন সিমপাথর গ্রামের মাঝিপাড়ার লোকজন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে সেই ঝঞ্ঝাটের সুরাহা হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার রঘুনাথপুর ২ ব্লকের জোরাডি পঞ্চায়েতের ওই এলাকায় চালু হয়েছে ‘জলের ব্যাঙ্ক’। এটিএমে যেমন ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা তোলা যায়, এখানেও এক ধরণের কার্ড দিয়ে মিলবে জল।

এ দিন উদ্বোধন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিনোদ সিংহ, জোরাডি পঞ্চায়েতের প্রধান কাশীনাথ মাহাতো। তাঁরা বলেন, ‘‘এর ফলে গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা প্রায় পুরোটাই মিটবে।” গত কয়েক বছর ধরেই রঘুনাথপুর ২ ব্লক এলাকায় চাষে সেচের ব্যবহার নিয়ে কাজ করেছে সংস্থাটি। তবে সৌর বিদ্যুৎ চালিত ‘সামুদায়িক জল ব্যাঙ্ক’ বা ‘ওয়াটার এটিএম’ তারা শুরু করেছে সিমপাথর গ্রামেই। সংস্থার কর্মকর্তা দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই গ্রামে চাষে সেচের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা প্রসার ও হাতেকলমে সেচের ব্যবহার শেখানোর সময়েই তাঁদের নজরে আসে পানীয় জলের সঙ্কটের বিষয়টি। তখনই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আর্থিক সাহায্য করেছে আর একটি বেসরকারি সংস্থা।

দিগন্তবাবু জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই রাজ্যের আরও কয়েকটি এমন ‘ওয়াটার এটিএম’ তৈরি হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁরা কাজে লাগিয়েছেন সিমপাথরের জন্য। প্রথমে গ্রামের একটি জমি নির্বাচন করে গভীর নলকূপ খনন করা হয়। পাশে গড়া হয় মাঝারি আকারের একটি ঘর। ছাদে বড় বড় দু’টি ট্যাঙ্ক। আর ভিতরে বালি আর ক্লোরিন দিয়ে জল শোধনের বন্দোবস্ত। পাম্পে উঠছে জল। শোধনের পরে চলে আসছে ঘরের দেওয়ালে বসানো কলে। উপরে যন্ত্র রাখা। তাতে সংস্থার দেওয়া কার্ড ‘পাঞ্চ’ করলে জল পড়ছে। পুরোটাই হচ্ছে সৌর বিদ্যুতে।

প্রকল্পটি পরিচালনা করার জন্য গড়া হয়েছে ১১ জনের কমিটি। তাঁর মধ্যে রয়েছেন পাঁচ জন মহিলা ও ছ’জন পুরুষ। কোন পরিবারে ক’জন সদস্য, সে সব দেখেশুনে তাঁরাই ঠিক করছেন কে কতটা জল পাবে। ঠিক হয়েছে, চার-পাঁচ জনের পরিবার রোজ দশ লিটার জল নেবে। বড় পরিবার হলে জলও বেশি মিলবে। আপাতত ঠিক হয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক বারে থোক দেড়শ টাকা দেবে প্রতি পরিবার। পরে প্রতি মাসে পঞ্চাশ টাকা করে। দিগন্তবাবু বলেন, ‘‘আর্থিক বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে কমিটির উপরে। যদি কোনও পরিবারের পক্ষে ওই টাকা দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে কম টাকা দিয়েও জল নিতে পারবেন তাঁরা।”

প্রকল্পটির ফলে গ্রামে পানীয় জলের সঙ্কট পুরোপুরি মিটবে বলেই মনে করছেন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কমিটির সদস্য সজনী টুডু, লখি মুর্ম, দেবুলাল হাঁসদা, রবিলাল টুডুরা। তাঁদের কথায়, ‘‘মাঝিপাড়ায় প্রায় দুশো পরিবারের বাস। গরমে জলের সমস্যা লেগেই থাকত। এখন মাসে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে দশ-কুড়ি লিটার জল পাওয়া যাবে। তাই সবাই খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ATM Raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE