Advertisement
E-Paper

‘হ্যালো! জিন বলছি’! রাত গভীর হলেই ফোন, সাত ঘড়া গুপ্তধনের লোভে তিন লক্ষ টাকা গায়েব প্রৌঢ়ের

আমিনুদ্দিনের দারুণ বিশ্বাস জন্মে যায় ও পারের ‘জিনের’ প্রতি। আর আমিনুদ্দিন ‘বশে’ আসতেই শুরু হয়ে যায় ‘জিনের আসল খেলা’। কয়েক দফায় লক্ষ লক্ষ টাকা হারালেন বাঁকুড়ার প্রৌঢ়।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১৬
Bankura Man lost Rupees 3 lakh by believing in fake calls

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

‘‘হ্যালো! আমি জিন বলছি। মুয়াজ্জেন ঘুমিয়ে পড়ার পর তাঁর ফোন নিয়ে ফোন করছি। আল্লাহ তাঁর হেফাজতে থাকা সাত ঘড়া গুপ্তধন তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেছেন।’’ অক্টোবরের এক নিশুতি রাতে এমন ফোন পেয়ে আর কথাই বলতে পারছিলেন না বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের শ্যামনগর গ্রামের পেশায় রাজমিস্ত্রি আমিনুদ্দিন। এলাকার সবাই তাঁকে ধর্মপ্রাণ বলে চেনেন। প্রথম ফোন পাওয়ার প্রাথমিক ঘোর কাটতে না কাটতেই আবার কিছু দিন পর ফোন। পর পর কয়েক দিন গভীর রাতে ‘অশরীরী’র ফোনে গুপ্তধন পাওয়ার বাসনা চেপে বসেছিল কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালানো আমিনুদ্দিনের। সম্বিত ফিরল প্রায় তিন লক্ষ টাকা খোয়ানোর পর। বাঁকুড়া সাইবার থানায় এমন নতুন প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে বিস্মিত হলেন পুলিশ আধিকারিকরাও।

বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের শ্যামনগর গ্রামে রাজমিস্ত্রি আমিনুদ্দিনের বাড়ি। তিনি জানান, অক্টোবরের মাঝামাঝি এক গভীর রাতে তাঁর কাছে জিন (অশরীরী)-এর পরিচয় দিয়ে এক জন ফোন করেন। প্রথমে ধর্মের ভাল ভাল কথা শোনানো হয় তাঁকে। কিছু ক্ষণ কথা বলেই তাই আমিনুদ্দিনের দারুণ বিশ্বাস জন্মে যায় ও পারের ‘জিনের’ প্রতি। আর আমিনুদ্দিন ‘বশে’ আসতেই শুরু হয়ে যায় ‘জিনের আসল খেলা’। ধর্মীয় ভয় দেখিয়ে পর পর কয়েক দিন আমিনুদ্দিনের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করতে শুরু করেন ‘জিন’।

আমিনুদ্দিনের কথায়, ‘‘প্রথম দিন জিন আমাকে ফোন করে আমার ধর্মীয় পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। এর পর তিনি ধর্মের বিভিন্ন কথা বলায় আমার বিশ্বাস অর্জন করেন। তার পরের দিন গভীর রাতে আবার ফোন করেন। তখন জানান, আল্লাহের সাত ঘড়া গুপ্তধন দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি গুপ্ত জায়গায় রাখা আছে। আল্লাহের নির্দেশে তিন হাজার তিনশো পঁয়ষট্টি জন জিন (অশরীরী) সেই গুপ্তধন পাহারা দিচ্ছেন।’’ একটু থেমে রাজমিস্ত্রি আবার বলেন, ‘‘ওই জিন জানান, সম্প্রতি সেই জায়গা অপবিত্র হয়ে যাওয়ায় আল্লাহ জিনদের নির্দেশ দিয়েছেন কোনও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির বাড়িতে ওই ধন পৌঁছে দিতে। আল্লাহ আমাকেই সেই ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন বলে জানান ওই জিন।’’ কিন্তু তার পর নিজের ‘ধন’ কী ভাবে খোয়ালেন?

আমিনুদ্দিনের দাবি, ‘জিনের’ কাছ থেকে গুপ্তধনের কথা শুনে প্রথমে হকচকিয়ে যান তিনি। তার পর টেলিফোনে বিভিন্ন ভাবে কথা বলে তাঁর বিশ্বাস অর্জন করেন ওই অশরীরী। তিনি বলেন, ‘‘গুপ্তধন পাওয়ার জন্য আমাকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় আচার পালন করাতে থাকেন উনি। আমি সরল বিশ্বাসে তাই করি। তার পর এক দিন গভীর রাতে জিন ফোনে জানান, গুপ্তধন নিয়ে তারা রওনা দিয়েছেন। কিন্তু আমার বাড়িতে বাস্তুদোষ থাকায় তা বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারছেন না। তাই বাস্তুদোষ কাটাতে ধাপে ধাপে অনলাইন এবং বিভিন্ন ওয়ালেটের মাধ্যমে টাকা চাইতে শুরু করেন তাঁরা। আমি জিনের কথা মতো বন্ধু এবং আত্মীয়দের কাছে বিভিন্ন অজুহাতে ঋণ নিয়ে অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইন এবং ওয়ালেটের মাধ্যমে ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা পাঠাই। সর্বস্বান্ত হওয়ার পর আমি বুঝতে পারি যে, আমাকে প্রতারণা করা হয়েছে। তার পরই আমি বাঁকুড়া সাইবার থানার দ্বারস্থ হয়েছি।’’

এত দিন নামে-বেনামে ফোন করে অনেক আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। কোথাও ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ধাপ্পা দেওয়া হয়। এআই জমানায় কণ্ঠস্বর নকল করেও আর্থিক প্রতারণার কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু এমন ‘জিনঘটিত’ প্রতারণার অভিযোগে তাজ্জব বাঁকুড়া সাইবার থানার পুলিশ। অভিযুক্ত ‘জিনের’ বিরুদ্ধে কোন ধারায় মামলা রুজু হবে, তা-ই খুঁজতেই রীতিমতো ঘাম ছুটেছে সাইবার থানার আধিকারিকদের। শেষ পর্যন্ত ৪২০ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, সরল ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে প্রলোভন এবং ভয় দেখিয়ে এ ভাবে টাকা হাতানোর নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে প্রতারকরা। এমন সাইবার প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।

Cyber fraud Money Fraud bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy