Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Pradhan Mantri Awas Yojana

সরকারি বাড়ি পেয়েও ফিরিয়ে দিল গোটা গ্রাম, কারণ জেনে খুশি প্রশাসনের কর্তারা

আবাস যোজনার তালিকা ঘিরে রাজ্য জুড়ে ভূরি ভূরি স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। কোথাও আবার সমীক্ষার সময় তথ্য গোপন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।

ভিন্ন ছবি ধরা পড়ল বাঁকুড়া-১ ব্লকের মঙ্গলচণ্ডী গ্রামে। নিজস্ব ছবি।

ভিন্ন ছবি ধরা পড়ল বাঁকুড়া-১ ব্লকের মঙ্গলচণ্ডী গ্রামে। নিজস্ব ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৪১
Share: Save:

যখন মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, তখন আবাস যোজনার জন্য নাম লিখিয়েছিলেন তাঁরা। এখন অবশ্য আস্তানা জুটেছে। তাই, নতুন করে আর বাড়ির দরকার নেই। বরং, সত্যিই যাঁরা গৃহহীন, তাঁদের জন্যই বাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তথ্য যাচাইয়ের কাজে সমীক্ষক দল গ্রামে গেলে তাদের এ কথাই জানিয়ে দিলেন গরিব গ্রামবাসীরা।

আবাস যোজনার তালিকা ঘিরে রাজ্য জুড়ে ভূরি ভূরি স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। কোথাও আবার সমীক্ষার সময় তথ্য গোপন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তার ঠিক বিপরীত ছবিই ধরা পড়ল বাঁকুড়া-১ ব্লকের মঙ্গলচণ্ডী গ্রামে। ওই গ্রামের দশ পরিবারের সদস্যের নাম রয়েছে আবাস যোজনার তালিকায়। তা যাচাই করতেই গ্রামে গিয়েছিলেন আধিকারিকেরা। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, তালিকায় থাকা সকলেরই অনুরোধ ছিল, তাঁদের নাম যাতে কেটে দেওয়া হয়। তাঁদের আর্থিক অবস্থা বদলেছে। সরকারি অর্থ সাহায্যের আর প্রয়োজন নেই তাঁদের।

ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সমীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, অনেকেরই পাকা বাড়ি রয়েছে। তার পরেও তাঁরা সব রকম ভাবে সরকারি সাহায্যের সুবিধা পেতে চাইছেন। এই গ্রামের লোকেরাও চাইলে তা করতে পারতেন। কিন্তু ওঁরা সেই পথে হাঁটেননি। ওঁরা চাইছেন, যাঁদের সত্যিই থাকার জায়গা নেই, তাঁদের হাতে যাতে এই টাকা তুলে দেওয়া যায়।’’

মঙ্গলচণ্ডী গৌরীপুর কুষ্ঠ হাসপাতালের পাশেই একটি ছোট্ট গ্রাম। এই গ্রামে সব মিলিয়ে ২৭টি পরিবারের বসবাস। গ্রামের সব ক’টি পরিবারে কেউ না কেউ কোনও না কোনও সময় কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসা করাতে গৌরীপুর কুষ্ঠ হাসপাতালে এসেছিলেন তাঁরা। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাঁরা আর ফিরে যাননি। হাসপাতালের পাশের জমিতেই থাকতে শুরু করেন। বছর দুয়েক আগে পর্যন্তও কুঁড়ে ঘর বাস করতেন মঙ্গলচণ্ডীর বাসিন্দারা। পরে অবশ্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই তাঁদের জন্য রাস্তার দু’দিকে পাকা বাড়ি গড়ে দেওয়া হয়।

আস্তানা জুটলেও মঙ্গলচণ্ডীর সব ক’টি পরিবারেই অভাব নিত্যসঙ্গী। তা সত্ত্বেও ওই গ্রামের বাসিন্দা গীতা মাইতি বলছেন, ‘‘সরকারি উদ্যোগে আমি মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। আরও একটা বাড়ি নিয়ে কী করব? বরং, যাঁরা গরিব, তাঁদের বাড়ি দেওয়া হোক।’’ আর এক বাসিন্দা রাজেন রায় বলেন, ‘‘এক সময় মাথার উপর ছাদ ছিল না আমাদের। তাই, বাড়ি না থাকার যন্ত্রণাটা বুঝি। আজ আমাদের মাথার উপর ছাদ হয়েছে। অন্যদেরও যাতে থাকার জায়গা হয়, সেটাই চাইছি। প্রশাসনকে বলেছি, আমার নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে।’’

বাঁকুড়া-১ ব্লকের বিডিও অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘‘মঙ্গলচণ্ডী কলোনির বহু বাসিন্দার নাম আবাস যোজনার তালিকায় রয়েছে। তাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধা নিলে কারও কিছু বলার ছিল না। কিন্তু তাঁরা যে হেতু বাড়ি পেয়ে গিয়েছেন, তাই আর বাড়ি চাইছেন না। যেখানে অনেকে নিজেদের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস যোজনার সুবিধা নিতে মরিয়া, সেখানে মঙ্গলচণ্ডীর এমন উপলব্ধিতে মন ছুঁয়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pradhan Mantri Awas Yojana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE