Advertisement
E-Paper

হুমকি আসুক, থাকতে হবে গ্রামেই

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতির অভিযোগ, “পুলিশ ও প্রশাসন তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। গ্রামে এসে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা প্রার্থীদের উপরে হামলা চালিয়ে গেলেও পুলিশের সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না।’’

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
ফাঁকা: বড়জোড়ার মালিয়াড়ায় প্রচারের জন্য দেওয়াল ধরে রেখেছিল সিপিএম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই ব্লকে প্রার্থীই দিতে পারেনি। নিজস্ব চিত্র

ফাঁকা: বড়জোড়ার মালিয়াড়ায় প্রচারের জন্য দেওয়াল ধরে রেখেছিল সিপিএম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই ব্লকে প্রার্থীই দিতে পারেনি। নিজস্ব চিত্র

ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের কোনও স্তরে অর্ধেক আসনেও প্রার্থী দিতে পারেনি বামেরা। যে ক’জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা করতে পেরেছেন, তাঁদেরও ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে শাসকদল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। জেলা সিপিএমের এক নেতার দাবি, অনেকেই চাপের মুখে পড়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চেয়ে ঘন ঘন ফোন করছেন। কোন পথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যাবে, সেটাই স্থির করে উঠতে পারছেন না বাম নেতারা। তবে প্রার্থীরা যাতে কোনও চাপের মুখেই এলাকাটা না ছাডে়ন সেই নির্দেশ দিয়েছে সিপিএম।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতির অভিযোগ, “পুলিশ ও প্রশাসন তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। গ্রামে এসে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা প্রার্থীদের উপরে হামলা চালিয়ে গেলেও পুলিশের সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আমরা সমস্ত প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছি হামলা হলে হবে, তবু গ্রামেই থাকতে হবে।”

কেন এমন নির্দেশ দেওয়া হল? অজিতবাবুর উত্তর, “গ্রামবাসী অন্তত তৃণমূলের আসল রূপটা চিনছেন। এই রাজ্যে গণতন্ত্রের হাল কী হয়েছে সেটা অন্তত মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।”

দীর্ঘ বাম আমলে বাঁকুড়া সিপিএমের গড় হিসেবেই পরিচিত ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে অবশ্য ছবিটা বদলাতে শুরু করে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার বেশিরভাগ গ্রামপঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ হাতছাড়া হয় বামেদের। গত বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের দখলে থাকা পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র জিতে যায় বামেরা। সেই থেকে এই জেলায় কিছুটা হলেও মনোবল বেড়েছিল বাম শিবিরের। তবে এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেশিরভাগ জায়গায় প্রার্থীই দিতে পারেনি বামফ্রন্ট ও বিরোধী দলগুলি।

সিপিএম সূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলার ২৫০৫টি গ্রামপঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ৫৯৮টিতে বাম প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পঞ্চায়েত সমিতির ৫৩৫টি আসনের মধ্যে ১২৭টি এবং ৪৬টি জেলা পরিষদের আসনের মধ্যে ১৪টিতে প্রার্থী দিতে পেরেছে বামফ্রন্ট। বাঁকুড়া ১, সিমলাপাল, হিড়বাঁধ, সারেঙ্গা, রাইপুর, রানিবাঁধ, খাতড়া ও ইঁদপুর ব্লকে বেশি সংখ্যায় বাম প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া গঙ্গাজলঘাটি, বাঁকুড়া ২, ওন্দা-সহ কয়েকটি ব্লকে অল্প সংখ্যক প্রার্থী দিতে পেরেছে বামেরা। বড়জোড়ায় জনা পাঁচেক বাম প্রার্থী মনোনয়ন জমা করতে পারলেও পরে তাঁরা ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।

জেলার বিষ্ণুপুর, জয়পুর, কোতুলপুর, ইন্দাস, পাত্রসায়র, সোনামুখী, শালতোড়া ব্লকে পঞ্চায়েতের কোনও স্তরেই এক জনও বাম প্রার্থী নেই। যে সব জায়গায় দলীয় প্রার্থী নেই সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে বিজেপি বাদে অন্য যে কোনও দলের প্রার্থী, এমনকী নির্দলকেও বামফ্রন্ট সমর্থন করবে বলে জানিয়েছেন অজিতবাবু।

তবে প্রার্থীদের হুমকির মুখে পড়েও দল যে না দমে যেতে বলেছে, তাতে কতটা কাজ হবে সেই ব্যাপারে দলের অন্দরেই একাংশ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। জেলার এক সিপিএম নেতা বলেন, “শুধু যদি প্রার্থীকে হুমকি দেওয়া হতো, তাহলে এক রকম ছিল। দুষ্কৃতীরা তো প্রার্থীর স্ত্রী বা সন্তানকেও ছাড়ছে না। শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও হুমকি দিয়ে আসছে। পরিজনদের মুখ চেয়েই অনেককে মাথা নোয়াতে হচ্ছে।’’

তবে তৃণমূলের দাবি, হুমকি দেওয়ার অভিযোগটাই ভিত্তিহীন। জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খান বলেন, “দীর্ঘ বাম আমলের অপশাসন দেখে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ওদের থেকে। বামেদের হয়ে ভোটে লড়ার জন্য কেউ এখন ইচ্ছুক নন। যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাঁরাও সরে আসতে চাইছেন। লজ্জা ঢাকতেই এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে ওরা।”

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Poll TMC CPIM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy