সরগরম: বিরোধীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ছিলই। প্রথম ছ’দিন মনোনয়ন দেয়নি শাসকদলও। সোমবার ভিড় জমালেন পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের প্রার্থীরা। সোনামুখী ব্লক অফিসে। ছবি: শুভ্র মিত্র
সপ্তাহভর সরকারি দফতরের সামনে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের অভিযোগ ওঠা বজায় রইল সোমবারও। কারা তাণ্ডবটা চালাল, তা নিয়ে শাসক ও বিরোধী শিবিরে চাপানউতোর চলেছে। শাসকের দাবি, ‘বাম আর রামের লাড়াই’ হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদল তাদের লড়াইয়ের ময়দানে নামতে না দেওয়ার জন্য চালিয়েছে সন্ত্রাস। অবশ্য এ দিন সন্ধ্যাতেই খোলসা হয়ে গিয়েছে, ভোটের আগে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের দখল কার্যত পেয়ে গিয়েছে তৃণমূল। জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতেও বিনা ভোটেই শাসকদল জিততে চলেছে— সেই ইঙ্গিতও পাওয়া গিয়েছে। এই সব কথা উল্লেখ করে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রের কটাক্ষ, ‘‘এ বার বুঝে নিন, দুষ্কৃতীরা ‘রামেদের’ ছিল না শাসকদলের।’’
যদিও শাসকদলের তরফে এই ঘটনার জন্য বিরোধীদের সাংগঠনিক ব্যর্থতার কথা বলা হচ্ছে। গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছিল মনোনয়নপর্ব। গোড়া থেকেই জেলার বেশির ভাগ ব্লক সশস্ত্র লোকজন দিয়ে দখল করে রাখার অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। বড়জোড়ায় মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া বাম প্রার্থীদের উপরে হামলা হয়। রানিবাঁধে সংঘর্ষে খুন হন বিজেপির এক প্রার্থী। ওন্দাতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। খোদ জেলাশাসকের দফতেরর সামনে আক্রান্ত হন বিজেপির রাজ্য নেতারা। মহকুমাশাসকের দফতের বাম প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে পিটিয়ে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ ওঠে।
সোমবারও ঝামেলার অভিযোগ ওঠা থামেনি। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নীলমাধব গুপ্তের অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের নজর এড়িয়ে কোনও মতে মনোনয়ন জমা দিতে তাঁদের এক প্রার্থী মহকুমাশাসকের দফতরে ঢুকে পড়লেও রেহাই পাননি। প্রশাসনিক ভবন চত্বর থেকে তাঁকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। এ দিনও ছাতনা, রানিবাঁধ, বাঁকুড়া ২, ওন্দা-সহ বিভিন্ন ব্লকে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাঁকুড়ার ফব নেতা মানিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওন্দা ব্লক দফতরে আমাদের এক মহিলা প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে ঢুকতে যাচ্ছিলেন। তাঁকে হেনস্থা করে বের করে দেওয়া হয়।’’ এসইউসির প্রার্থীদেরও মারধর করা হয়েছে, অভিযোগ দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য স্বপন নাগের।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র সোমবার দলীয় দফতরে বসে বলেন, ‘‘এই রাজ্যে প্রশাসন ও পুলিশের যে কোনও মেরুদণ্ড নেই তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এ বারের পঞ্চায়েত ভোট। পুলিশ এবং প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েই শাসকদল বিরোধীদের মনোনয়ন পর্বেই আটকে দিল।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলছেন, ‘‘জেলার সব ক’টি ব্লকেই আমরা পূর্ণ শক্তি দিয়ে লড়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। শাসকদলের বাধায় ভোটটাই প্রহসন হয়ে গেল।’’
অজিতবাবুর অভিযোগ, কেবল প্রশাসনিক দফতরের সামনে জমায়েত নয়, এ দিন তালড্যাংরা এলাকার উপর দিয়ে যাওয়া খাতড়ামুখী বিভিন্ন বাস থামিয়ে তল্লাশি করে দেখা হয়েছে বিরোধী প্রার্থীরা কেউ রয়েছেন কি না। তাঁর দাবি, জেলা পরিষদের তালড্যাংরার এক বাম প্রার্থী বাসে সাবড়াকোন থেকে খাতড়া যাচ্ছিলেন মনোনয়ন জমা করতে। তাঁকে তালড্যাংরাতেই বাস থেকে জোর করে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে ওই ব্যক্তিকে তালড্যাংরায় সিপিএমেরই দফতরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। বাইরে পাহারায় থাকে দুষ্কৃতীরা।
বিজেপির বিবেকানন্দবাবু বলেন, ‘‘এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে শাসকের এই তাণ্ডব শুরু রাজনৈতিক মহলেই নয়, জনজীবনেও প্রভাব ফেলেছে। আগামী লোকসভা ভোটে আশা করছি তাঁরা মন খুলে ভোট দিতে পারবেন। সেই ভোটে এই ক্ষোভ তাঁরা ঠিক উগরে দেবেন।’’
তবে জেলা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমরা কোনও ভাবেই কাউকে নির্বাচনে লড়তে বাধা দিই না।’’ তালড্যাংরা বাম প্রার্থীকে আটকে রাখার অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy