Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
নির্দেশিকায় বিভ্রান্তি

বাঁকুড়ায় পথে বিড়ি শ্রমিকেরা

সরকারি নির্দেশিকা নিয়ে বিভ্রান্তির জেরে বাঁকুড়ার চল্লিশটি বিড়ি কারখানায় কাজ বন্ধ থাকল দিনভর। কাজ হারানোর আশঙ্কায় ধর্মঘটে নামলেন বিড়ি শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার তাঁরা জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ অবস্থান করে স্মারকলিপি দেন। আর তার পরেই খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, যে নির্দেশিকা নিয়ে এই আন্দোলন, সেটি আদপে প্রশাসন জারিই করেনি।

জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৮
Share: Save:

সরকারি নির্দেশিকা নিয়ে বিভ্রান্তির জেরে বাঁকুড়ার চল্লিশটি বিড়ি কারখানায় কাজ বন্ধ থাকল দিনভর। কাজ হারানোর আশঙ্কায় ধর্মঘটে নামলেন বিড়ি শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার তাঁরা জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ অবস্থান করে স্মারকলিপি দেন। আর তার পরেই খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, যে নির্দেশিকা নিয়ে এই আন্দোলন, সেটি আদপে প্রশাসন জারিই করেনি।

বিড়ি শ্রমিকদের দাবি, সম্প্রতি বিডিও (বিষ্ণুপুর) একটি নির্দেশিকা জারি করেন। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিড়ি, গুটখা, পানমশলার মতো তামাকজাত নেশার জিনিস তৈরি ও মজুদ রাখা নিষিদ্ধ। ওই নির্দেশিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পৌঁছে যায় বিড়ি শ্রমিকদের কাছেও। কাজ হারানোর আশঙ্কা দেখা দেয় জেলার প্রায় ২৫ হাজার বিড়ি শ্রমিকের। বিডিও-র এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বামপন্থী বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলি বিড়ি কারখানাগুলিতে ধর্মঘট ডেকে বাঁকুড়া শহরে জমায়েত করেন।

হাজার পাঁচেক শ্রমিক এ দিন বাঁকুড়া শহরে এসে মিছিল করে জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখান। সাময়িক ধর্না হয়। অবিলম্বে বিডিও (বিষ্ণুপুর)-এর ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবিতে স্মারকলিপি দেন তাঁরা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, বিড়ি শ্রমিকদের অভিযোগ পেয়ে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বিডিও (বিষ্ণুপুর) জয়তী চক্রবর্তীকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চান। জয়তীদেবী তাঁকে জানান, এই ধরণের কোনও নির্দেশিকা তিনি আদৌ জারি করেননি। জেলাশাসক তাঁকে নির্দেশ দেন, নির্দেশিকা বাতিল করে অবিলম্বে নোটিস জারি করতে।

জেলাশাসক বলেন, “কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। তামাকজাত নেশাদ্রব্য তৈরি ও মজুদ রাখা বন্ধের নির্দেশিকা বিডিও জারি করেননি। তবে এই ধরণের একটি নির্দেশিকা যখন ছড়িয়েছে, অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করে নোটিস জারি করা হবে।’’

কিন্তু বিডিও জারি না করে থাকলে ওই নোটিস কী ভাবে ছড়াল?

ঘটনা হল, সম্প্রতি জেলার সরকারি অফিসকাছারি, হাসপাতাল এবং স্কুল-কলেজ চত্বরে তামাকজাত নেশার জিনিস বিক্রি ও সেবনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জয়তীদেবীর দাবি, সেই মর্মেই ব্লক অফিসের টাইপিস্টকে একটি নির্দেশিকা লিখতে বলে হয়। তাঁর কথায়, “নির্দেশিকায় যে বয়ান লেখা হয়েছে সেটা ঠিক নয়। নির্দেশিকাটি এখনও আমরা জারি করিনি।” প্রশ্ন উঠছে, ব্লক প্রশাসন জারি করার আগেই ওই নির্দেশিকা কী ভাবে বাইরে ছড়িয়ে পড়ল তা নিয়েও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই নির্দেশিকা যে ছড়িয়েছে সেটা বিড়ি শ্রমিকদের পাশাপাশি মেনে নিয়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। নির্দেশিকা জারি হওয়ার আগেই কী ভাবে বাইরে বেরিয়ে গেল তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জয়তীদেবী। বিভ্রান্তি মেটাতে জেলাশাসকের নির্দেশ মতো নোটিস দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।

এ দিকে শ্রমিকদের আন্দোলনের জেরে জেলার প্রায় সব ক’টি বিড়ি কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। বিড়ি শ্রমিকদের আন্দোলনে এ দিন উপস্থত ছিলেন সিটু-র জেলা সভাপতি কিঙ্কর পোশাক, সহ-সভাপতি প্রতীপ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রতীপবাবু বলেন, “প্রশাসনের কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জন্যই শ্রমিকদের একটা গোটা দিন নষ্ট হল।” সিটু-র বিড়ি কারিগর ইউনিয়নের সভাপতি নারান গড়াই বলেন, “ইন্টারনেটে ওই নির্দেশিকা আমাদের চোখে পড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই কাজ হারানো আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তাই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হই।’’

বাঁকুড়ার আশ্রমপাড়া এলাকার বিড়ি কারখানার মালিক নিমাই গড়াই বলেন, “কারখানা খুলতেই পারিনি। ব্যবসা মার খেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bidi workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE