Advertisement
E-Paper

তোপধ্বনিতে বিষ্ণুপুর মাতল রাস উৎসবে

শুক্রবার থেকে বিষ্ণুপুর শহরের কৃষ্ণগঞ্জ মহল্লাতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের রাস উৎসব। আট পাড়ার কৃষ্ণগঞ্জ রাস উৎসব কমিটির সভাপতি রবিলোচন দে বলেন, ‘‘এ বার রাস উৎসবে খরচ ধরা হয়েছে এক লক্ষ টাকা। নানা ভাবে এই উৎসবকে আকর্ষণীয় করা হচ্ছে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২১
যত্ন: মাধবগঞ্জ রাধামদনগোপাল জিউ মন্দিরে। —নিজস্ব চিত্র।

যত্ন: মাধবগঞ্জ রাধামদনগোপাল জিউ মন্দিরে। —নিজস্ব চিত্র।

কথিত রয়েছে, বিষ্ণুপুর বাংলার ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’। মল্লরাজাদের সেই রাজধানী মেতে উঠেছে এখন রাস উৎসবে।

শুক্রবার থেকে বিষ্ণুপুর শহরের কৃষ্ণগঞ্জ মহল্লাতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের রাস উৎসব। আট পাড়ার কৃষ্ণগঞ্জ রাস উৎসব কমিটির সভাপতি রবিলোচন দে বলেন, ‘‘এ বার রাস উৎসবে খরচ ধরা হয়েছে এক লক্ষ টাকা। নানা ভাবে এই উৎসবকে আকর্ষণীয় করা হচ্ছে।’’

কৃষ্ণগঞ্জ রাস উৎসবের সূচনা করেন বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়। একই সাথে উদ্বোধন করা হয় কৃষ্ণগঞ্জ লালজীউ মন্দির চত্বরের উচ্চবাতিস্তম্ভ এবং নাট মন্দির ও সন্ত ভৈরববাবা মঞ্চের।

কৃষ্ণগঞ্জ রাধালালজীউ বিগ্রহের প্রধান পুরোহিত পরেশনাথ গোস্বামী জানান, শুক্রবার কৃষ্ণগঞ্জে রাস উৎসবের শুরু হল। ১৩টি রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ (যার মধ্যে পাঁচটি বিষ্ণুপুর রাজ পরিবার থেকে আসা) বিশেষ সাজে সাজিয়ে রাস উৎসবে পুজো করা হয়। প্রত্যেক বিগ্রহের জন্য থাকে সুসজ্জিত মঞ্চ। রাত ১০টায় তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে শুরু হয় আরতি। ১৩ টি মঞ্চে এক সাথে চলে আরতি।

কৃষ্ণগঞ্জ রাস উৎসবের সহ-সভাপতি মথুর দত্ত বলেন, ‘‘প্রত্যেকদিন বিশেষ ভোগের বন্দোবস্ত থাকছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পাঁচ দিনই পুলিশের ক্যাম্প থাকছে মন্দির চত্বরে।’’

সাংস্কৃতিক সম্পাদক চন্দন দাস জানান, রাস উৎসবের পাঁচ দিনই রাধালালজীউ প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে সন্ধ্যায়। স্থানীয় ও বহিরাগত শিল্পীদের নিয়ে গান, নাচ, বিষ্ণুপুরের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে তুষু গান, নাটক, ম্যাজিক-শোয়ের জমজমাট অনুষ্ঠান থাকছে। সোমবার হবে স্থানীয় কচি কাঁচাদের নিয়ে কৃষ্ণ ও রাধা সাজার প্রতিযোগিতা।

কৃষ্ণগঞ্জের পাশাপাশি এগারো পাড়া নিয়ে মাধবগঞ্জ রাস উৎসব কমিটিও রাধামদনগোপাল জীউকে নিয়ে রাস উৎসবে মেতে উঠবে আজ, শনিবার। সম্পাদক মিলন রক্ষিত বলেন, ‘‘মাধবগঞ্জে রাস উৎসবের সূচনা করবেন বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য, থাকবেন উপ পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়।

রাধামদনগোপাল জীউ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ভৈরব চৌধুরী বলেন, ‘‘সূর্য সিদ্ধান্ত মতে রাধামদনগোপাল জীউের রাস উৎসব শুরু হচ্ছে শনিবার। বিষ্ণুপুর রাজদরবার থেকে সতেরো জোড়া রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ-সহ ৩৮ জোড়া বিগ্রহ রাধামদনগোপাল জীউের মন্দির জুড়ে সাজানো হবে। রাত ১০টায় সব বিগ্রহের এক সাথে আরতি।’’

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা বঙ্কুবিহারী অধিকারী বলেন, ‘‘বহু পর্যটক এই আরতি দেখার জন্য রাস উৎসবে বিষ্ণুপুর চলে আসেন। এক সঙ্গে এত রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ সচরাচর বাংলার কোথাও দেখা যায় না।’’

মাধবগঞ্জেও চলবে পাঁচ দিন ধরে রাধামদনগোপাল জীউ প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় কচি কাঁচাদের সাথে বহিরাগত শিল্পীরাও অনুষ্ঠান করবেন। বিষ্ণুপুরে বাহাদুরগঞ্জে চৌধুরী পরিবারের রাস উৎসবও চলবে পাঁচ দিন ধরে মহাসমারোহে।

বিষ্ণুপুরের ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে আসা চিওরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘১৬০০ খ্রিস্টাব্দে মল্ল রাজা বীর হাম্বীর রাসমঞ্চ তৈরি করেন। পাশাপাশি রাসতলা নামে একটি বড় মহল্লাও আছে। শোনা যায় এক সময়ে এই রাস পূর্ণিমাতে রাসমঞ্চ জুড়ে রাস উৎসব হতো।’’

বিষ্ণুপুর এমনই এক ধর্ম প্রাণ শহর, দু’পা এগোলেই একটি করে রাধা-কৃষ্ণের মন্দির পাওয়া যায় আজও। সেখানে প্রতি সন্ধ্যায় রাধাকৃষ্ণের নাম গান হয়। ফলে রাস উৎসবে বিষ্ণুপুর মাতবেই।

বিষ্ণুপুর Raas Bishnupur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy