E-Paper

অবসরের ১৫ বছর পরেও স্কুলে এসে স্বেচ্ছা পাঠদান বিশ্বনাথের

চণ্ডীদাস উচ্চ বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সংস্কৃত পড়ানোর দায়িত্ব নিতে হয় তাঁকে। সে সময়ে ওই স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সংস্কৃত পড়ানোর কোনও অনুমোদন ছিল না।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৩৪
চারকলগ্রামের বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় নানুর হাইস্কুলে পড়াচ্ছেন।

চারকলগ্রামের বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় নানুর হাইস্কুলে পড়াচ্ছেন। নিজস্ব চিত্র।

অবসর নিয়েছেন দীর্ঘদিন আগে। কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন স্কুলে স্বেচ্ছা পাঠদান করে চলেছেন ৭৫ বছরের বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়।

নানুরের চারকলগ্রামের বাসিন্দা ওই শিক্ষক চারকলগ্রাম হাই স্কুলে সংস্কৃতের শিক্ষক ছিলেন। ২০০৯ সালে অবসর নেন। তখন ওই স্কুলে সংস্কৃত শিক্ষক না-থাকায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত সপ্তাহে তিন দিন একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে স্বেচ্ছায় সংস্কৃত পড়িয়েছেন।

সে সময়ে নানুর চণ্ডীদাস উচ্চ বিদ্যালয়েও সংস্কৃত পড়ানোর অনুরোধ আসে। তিনি সেই অনুরোধও ফেরাতে পারেননি। কারণ, ওই স্কুলেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ২০১১ সাল থেকে এক সঙ্গে সেখানেও সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণিতে সপ্তাহে চার দিন পাঠদান শুরু করেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওই দুই ক্লাসে স্বেচ্ছা পাঠদান করেছেন।

শুধু তাই নয়, চণ্ডীদাস উচ্চ বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সংস্কৃত পড়ানোর দায়িত্ব নিতে হয় তাঁকে। সে সময়ে ওই স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সংস্কৃত পড়ানোর কোনও অনুমোদন ছিল না। নিয়ম ছিল, বিষয় ভিত্তিক কোনও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বেচ্ছা পাঠদানের দায়িত্ব নিলে অনুমোদন দেওয়া হত। ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে তিনি হাসি মুখে সে দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নেন। তাঁর জন্যেই স্কুলে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সংস্কৃত পড়ানো চালু হয়।

স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, আজও তিনি সপ্তাহে চার দিন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ১৪টি ক্লাস নেন। ওই বিষয়ে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রতি বছর গড়ে ২০০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। পাশাপাশি, বছর সাতেক ধরে সপ্তাহে ২ দিন চারকলগ্রাম জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়েও স্বেচ্ছায় পাঠদান করছেন।

চারকলগ্রাম থেকে নানুর হাই স্কুলের দূরত্ব প্রায় ছ’কিমি। আগে সাইকেলে স্কুলে আসতেন। এখন বয়সজনিত কারণে টোটো ভাড়া করে আসেন। স্ত্রী মাধবী, দুই ছেলে পঞ্চানন ও নিরঞ্জন, মেয়ে প্রতিমা এবং নাতি-নাতনিদের নিয়ে তাঁর ভরা সংসার। পঞ্চানন স্থানীয় উচকরণ হাই স্কুলের শিক্ষক। নিরঞ্জন খুজুটিপাড়া চণ্ডীদাস মহাবিদ্যালয় এবং প্রতিমা সাঁইথিয়া অভেদানন্দ মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁরা জানান, বাবা যে অবসর নিয়েছেন তা বোঝাই যায় না। আগের মতোই ঘড়ি ধরে স্কুলে বেরিয়ে যান।

একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অনসূয়া ঘোষ, সালমা পারভিন, জিৎ মণ্ডল, দ্বাদশ শ্রেণির সানিয়া খাতুনরা জানায়, স্যরের ক্লাস কোনও দিন ফাঁকা যায় না। বরং কোনও দিন অন্য কোনও শিক্ষক না-থাকলেও উনি ক্লাস নিতে চলে আসেন। কোনও বিষয়ে আটকে গেলে হাসিমুখে সমাধান করে দেন। একটুও বিরক্ত হন না।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরিজিৎ দাস বলেন, ‘‘ওঁর জন্যেই আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সংস্কৃত পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ও বিষয়ে ভাল নম্বরও পায় তারা। অথচ উনি খুবই প্রচার বিমুখ মানুষ।’’ স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি মানিকচাঁদ রায় বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন সময়ে ওঁকে উপহার হিসেবে কিছু দিতে চেয়েছি। উনি নেননি। এমনকি, স্কুল যাওয়া আসার টোটো ভাড়াটিও নেন না। আমরা তাঁর কাছে ঋণী।’’

বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘নানুর স্কুলে পড়াশোনা করে আমি শিক্ষক হতে পেরেছি। তাই ওই স্কুলে আমার শিক্ষাঋণ রয়েছে বলে মনে করি। স্বেচ্ছা পাঠদান করে সেই ঋণের সামান্য অংশ যদি শোধ করতে পারি, তা হলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করব।’’ জেলা স্কুল পরিদর্শক চন্দ্রশেখর জাউলিয়া (মাধ্যমিক) বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে উনি যে ভাবে স্বেচ্ছাপাঠদান করে চলেছেন, তা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ যোগ্য।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bishnupur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy