শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি মমতার নাম না করে জানালেন, গণতান্ত্রিক ভাবে তাঁকে যদি উপড়ে ফেলে দিতে হয়, তা হলে এক হাজার বার ‘গুন্ডামি’ করবেন। ছবি: টুইটার।
বাংলা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাতে তিনি এতটাই বদ্ধপরিকর যে, প্রয়োজনে ‘গুন্ডামি’ করতেও রাজি। সোমবার বাঁকুড়ার জনসভা থেকে জানিয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সরাসরি মমতার নাম না করে জানালেন, গণতান্ত্রিক ভাবে তাঁকে যদি উপড়ে ফেলে দিতে হয়, তা হলে এক হাজার বার ‘গুন্ডামি’ করবেন। আক্রমণ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে নাম না করে শুভেন্দুকে ‘ডাকু’ বলেছেন মমতা। এমন ইঙ্গিতও করেন যে, শুভেন্দুর ইশারাতেই চলছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘কার ইশারায় আমাদের লোকেদের রোজ এজেন্সি বিরক্ত করছে? অমিত শাহ যাঁর ইশারায় চলছেন, এখানে যে তাঁর মুখ্য উপদেষ্টা, সে একটা বড় ডাকু। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি যা হয়েছে, তার শুরুটা ও-ই করেছিল।’’ বিকেলে ওন্দায় মমতার এই বক্তব্যের জবাব দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘খুব বড় বড় কথা না! বলছেন অমিত শাহকে পশ্চিমবঙ্গে একটা গুন্ডা পরামর্শ দেয়। সাহস থাকলে নামটা বলুন না।’’ এখানেই থামেননি শুভেন্দু। এর পরেই তাঁর হুঁশিয়ারি, দরকারে গুন্ডামি করবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আপনার মতো অহঙ্কারীকে ধ্বংস করার জন্য যদি গুন্ডামি করতে হয়, এক বার নয়, এক হাজার বার করব। অহঙ্কারী, দুর্নীতির মক্ষীরানি, চোরেদের সর্দারিনী। পরিবারবাদ, তোষণ, কাটমানি যাঁর এক মাত্র এজেন্ডা, তাঁকে যদি গণতান্ত্রিক ভাবে ধ্বংস করতে হয়, ভোটের মাধ্যমে যদি উপড়ে ফেলতে হয়, তা হলে এক হাজার বার গুন্ডামি করব।’’
সোমবার নবান্নে অমিত শাহকে কটাক্ষ করেছেন মমতা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত শুক্রবার বীরভূমের সিউড়িতে বিজেপির সভা থেকে শাহ বলেছিলেন, ২০২৬ সালের আগেই বাংলার সরকার পড়ে যাবে। সেই সঙ্গে এই রাজ্য থেকে বিজেপিকে কমপক্ষে ৩৫ আসনে জিততে হবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। সোমবার নবান্নে সেই নিয়েই মমতা প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শাহের এই মন্তব্যে সাংবিধানিক মর্যাদা লঙ্ঘন হয়েছে। বাঁকুড়ার সভায় এই প্রসঙ্গেও সরব হয়েছেন শুভেন্দু। জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীও সংবিধান মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘দুপুরে ভাইপোর পিসি বড় বড় কথা বলেছেন। বলেছেন অমিত শাহ নাকি সংবিধান মানেনি। অমিত শাহ বিজেপির সভায় বসে বলেছেন। আপনি কোথায় বসে গালি দিচ্ছেন? নবান্নে বসে গালি দিচ্ছেন।’’ এখানেই না থেমে শুভেন্দু বলেন, ‘‘দু’ পাশে জাতীয় পতাকা, মাথায় অশোক স্তম্ভ। সাইকেল দেওয়ার নাম করে বাচ্চা বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের ডেকে এনে প্রশাসনিক সভার নামে জনসভা করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন কিম্ভূত কিমাকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন হোঁদল কুতকুত। আপনার কাছ থেকে সংবিধান শিখতে হবে? পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্র ধ্বংস করে সংবিধানের কথা বলছে।’’
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেককেও সোমবারের সভা থেকে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। গত বুধবার ওন্দায় এসে অভিষেক বলেছিলেন, ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে জিতিয়ে ‘পাপ’ করেছেন বাঁকুড়ার মানুষ। তাঁরা এ বার ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করবেন। সেই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার মানুষ আপনার মতো চিকিৎসা করাতে আমেরিকায় যেতে পারেন না। কারণ, ওঁদের অত টাকা নেই। বাঁকুড়ার দরিদ্র মানুষ পান্তাভাত, মুড়ি, ছোলা, ডাল-ভাতে জীবন যাপন করেন। তাঁরা পাপী নন।’’ এর পরেই শুভেন্দুর সংযোজন, ‘‘আপনার পুরো পরিবার কয়লা খেয়েছেন, বালি খেয়েছেন, গরু খেয়েছেন, টাকা তোলেন, মানুষের বেতন থেকে টাকা তোলেন। বাঁকুড়ার লোক এই জিনিস করে না।’’
অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শ্যালিকা মেনকা গম্ভিরকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র তলবের প্রসঙ্গও তুলেছেন শুভেন্দু। এই নিয়ে সৌমিত্র খাঁর তুলনাও টেনেছেন তিনি। জানিয়েছেন, সৌমিত্র আইন মেনে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আপনি কী করেছেন ঘরের লক্ষ্মীকে? বাড়ির লক্ষ্মীকে চোর সাজিয়েছেন আপনি? আপনি বড় বড় কথা বলছেন। আপনার শ্যালিকার নাম মেনকা গম্ভীর। তাঁকে ঘন ঘন ডাকে কেন ইডি সিবিআই। তাঁর স্বামীর নাম অঙ্কুশ শর্মা। বালির টেন্ডার ওই একা পায় কেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সৌমিত্র ঘরের লক্ষ্মীকে দিয়ে টাকা তোলায়নি। দাম্পত্য জীবনে মিল হয়নি, মিউচুয়ালি ডিভোর্স করেছেন। আপনি আপনার ঘরের লক্ষ্মীকে দিয়ে কয়লার টাকা তুলিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy