Advertisement
E-Paper

বাড়ির কাছেই বোমায় মৃত্যু নিরীহের

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম তপন রুইদাস(৫০)। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সেই লক্ষ্মীকান্ত পাল, তাঁর তুতো ভাই মানস পাল এবং নীলকান্ত পাল, উত্তম পালের নামে স্বামীকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেছেন তপনবাবুর স্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৩৩
হজরতপুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া দাসপাড়ার ওই ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। ইনসেটে, তপন রুইদাস। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

হজরতপুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া দাসপাড়ার ওই ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। ইনসেটে, তপন রুইদাস। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হওয়াকে কেন্দ্র করে গাড়ির মালিক ও চালকের মধ্যে বিবাদ দিয়ে যে ঘটনার সূত্রপাত, সেটাই গড়াল বোমাবাজি এবং প্রাণহানি পর্যন্ত। তবে বোমার আঘাতে প্রাণ গিয়েছে এক নিরীহ গ্রামবাসীর। বুধবার রাতে কাঁকরতলা থানা এলাকার হজরতপুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া দাসপাড়ার ওই ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম তপন রুইদাস(৫০)। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সেই লক্ষ্মীকান্ত পাল, তাঁর তুতো ভাই মানস পাল এবং নীলকান্ত পাল, উত্তম পালের নামে স্বামীকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেছেন তপনবাবুর স্ত্রী। এফআইআরে আরও কয়েক জনের উল্লেখ আছে। আট জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার পিছনে প্রকৃত দোষীদের খোঁজ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে লক্ষ্মীকান্তের স্ত্রীকেও। লক্ষ্মীকান্ত অবশ্য এখনও ধরা পড়েননি। তাঁর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে ২০টি তাজা বোমা। সেগুলি বৃহস্পতিবার বিকেলে নিষ্ক্রিয় করে বম্ব স্কোয়াড।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হজরতপুরের সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত লক্ষ্মীকান্ত। স্থানীয় তৃণমূল নেতা স্বপন সেনের যদিও বক্তব্য, ‘‘লক্ষ্মীকান্ত তৃণমূলের কেউ নন। যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা অন্যায়। পুলিশ তদন্তে সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিক।’’
হজরতপুর থেকে সাহাপুরের দিকে যেতে রাস্তার বাঁ দিকে লক্ষ্মীকান্তের প্রাসাদোপম বাড়ি। তাঁরই গাড়ির চালক ছিলেন হজরতপুর দাসপাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণ রুইদাস। অভিযোগ, ঠিক সময়ে মোবিল পরিবর্তন না করায় ইঞ্জিন বিকল হয়েছে, এই দাবি করে বুধবার সন্ধ্যায় কৃষ্ণকে মারধর করেন লক্ষ্মীকান্ত। মার খেয়ে কৃষ্ণ তাঁর দাদা পরিমল রুইদাসকে ডাকেন। প্রতিবাদে শামিল হন পাড়ার অন্যেরাও। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। ঝামেলা লেগেছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ দু’পক্ষকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু, দাসপাড়ার লোকজনের হাতে এ ভাবে মার খাওয়া মোটেও হজম করতে পারেননি লক্ষ্মীকান্ত। অভিযোগ, পরে আবার দলবল জুটিয়ে বুধবারই রাত ৯টা নাগাদ দাসপাড়ায় বোমাবাজি শুরু করেন লক্ষ্মীকান্ত। সেই সময় সামনে পড়ে যান তপনবাবু। বাড়িতে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে দুষ্কৃতীদের ছোড়া একটি বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির।

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, দাসপাড়ার দেওয়ালে দেওয়ালে বোমার চিহ্ন। তপন রুইদাস তাঁরই বাড়ির গলির মুখে বোমার আঘাতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। ওই জায়গায় তখনও পড়ে তাঁর একপাটি জুতো। দেওয়ালে রক্তের দু-এক ফোঁটা লেগে থাকলেও বাকি অংশ বালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে তখন নিহতের কিশোরী মেয়ে, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সোনালি। প্রতিবেশীরা তাকে সামলাচ্ছেন। নিহতের স্ত্রী প্রতিমা দেবী এবং ছেলে বিশ্বজিৎ তখন থানায়। সোনালি বলে, ‘‘আমাদের পাড়ায় এক মহিলা মারা গিয়েছেন। বুধবার রাতে শ্রাদ্ধের জন্য ওই পরিবারে নিমন্ত্রণ ছিল। রান্না হচ্ছিল পাড়ার ক্লাবে। সেখান থেকে ফেরার সময় বোমাবাজি শুরু হয়ে গিয়েছিল। বাবা ছুটে ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিল, তার আগেই ওরা বাবার গায়ে বোমা ছুড়ে দেয়! একটা বোমা পাশের বাড়ির দেওয়ালে লাগে। বাবা যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই সব থেমে যায়।’’

নিহত তপনবাবুর বৌদি শিবানী রুইদাস বলছেন, ‘‘যে বাড়ির মহিলা মারা গিয়েছেন, তাঁদের বাড়ির পিছনের মাঠ থেকে লোকজন বোমা ছুড়তে ছুড়তে গোটা পাড়া দাপিয়ে বেড়িয়েছে। ভয়ে সবাই যে যার মতো বাড়িতে লুকিয়েছিলাম। তাণ্ডব থামতেই শুনি, দেওরকে ওরা শেষ করে দিয়েছে।’’ দাসপাড়ার বাসিন্দাদের দাবি, ঘটনার সময় কিছুটা দূরে পুলিশ থাকলেও কমপক্ষে ৩০টি বোমা ফেটেছে। অ্যাসবেস্টস এবং টিনের চাল ফুটো করে দিয়েছে। আরও কারও প্রাণ যেতে পারত। মৃত মহিলার বৌমা ললিতা রুইদাস জানান, তাঁদের বাড়ির দেওয়াল লক্ষ্য করেও বোমা ছোড়া হয়েছে। আতঙ্কের পরিবেশের মধ্যে রান্না করা খাবার নষ্ট হয়েছে। বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন, চালক-মালিকের ঝামেলার জেরে কেন পাড়ায় এ ভাবে বোমাবাজি হবে? কেন প্রাণ যাবে নিরীহের?

এ সব প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না।

লক্ষ্মীকান্তের গাড়ির চালক কষ্ণ রুইদাস এবং দাদা পরিমলকে এ দিন বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁদের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা, সুচিত্রাদের বক্তব্য, ‘‘কী জন্য মারামারি হয়েছে বলতে পারব না। স্বামীরা কাল রাতে বোমাবাজি শুরু হওয়ার সময় থেকেই ঘরছাড়া। মৃত্যুর জন্য আমাদের পরিবারকে দুষছে পাড়ার লোক। তিনটে বাচ্চা নিয়ে আমরা কী করব, বুঝতে পারছি না।’’

Birbhum blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy