Advertisement
E-Paper

রিপোর্ট পেলে হবে থমকে থাকা বোর্ড

যে সমস্ত পঞ্চায়েত ও সমিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত হয়ে আছে সেগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছে বিরোধীরা। সেই কথা বলে বিরোধীরা অভিযোগ করছে, শাসকদলকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই উত্তেজনাপ্রবণ আখ্যা দিয়ে বোর্ড গঠন ঝুলিয়ে রেখেছে প্রশাসন। 

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৩

গোলমালের আশঙ্কায় পুরুলিয়ার বেশ কিছু পঞ্চায়েত ও সমিতির বোর্ড গঠন থমকে আছে। জেলা প্রশাসনের কাছে বিজেপি দাবি জানিয়েছে, পুজোর আগেই বোর্ড গড়া হোক। বিরোধীরা অভিযোগ করছে, বোর্ড না থাকায় নাগরিক পরিষেবা ও উন্নয়নের কাজও ব্যহত হচ্ছে। তবে পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়ের দাবি, ‘‘গ্রামপঞ্চায়েত ও সমিতিতে কোনও কারণে বোর্ড গঠন স্থগিত থাকলে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ কী ভাবে করা হবে সেই ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। আমরা সেই মতো উন্নয়নের কাজ করছি।’’

মামলা হওয়ায় পুরুলিয়ায় ১৭০টি পঞ্চায়েতের ১৩টি এবং ২০টি সমিতির মধ্যে কাশীপুরে‌ বোর্ড গঠন স্থগিত ছিল। সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী আসন থাকলেও নতুন করে কোথাও ভোট হবে না। তার পরেই কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছে। বোর্ড হয়েছে‌ মামলায় আটকে থাকা অর্ধেকেরও বেশি পঞ্চায়েতে। কিন্তু নির্বাচনের তিন মাস পরেও বোর্ড করা যায়নি জেলার প্রায় পঁচিশ শতাংশ পঞ্চায়েত ও পঁচিশ শতাংশ সমিতিতে। গোলমালের আশঙ্কায় বলরামপুর, জয়পুর, সাঁতুড়ি, বরাবাজার— এই চারটি সমিতি ও ৩২টি পঞ্চায়েতে সেই প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে প্রশাসন। বরাবাজারের ব্যাপারে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি।

রাস্তাঘাট সংস্কার বা অন্য নাগরিক পরিষেবা আসে পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই। জন্ম, মৃত্যু বা বিভিন্ন বিষয়ের শংসাপত্র দেন পঞ্চায়েত প্রধানরা। গ্রাম সংসদে আলোচনা করে, প্রকল্প তৈরি করে, একশো দিনের কাজ করানো হয়। বিভিন্ন ভাতার উপভোক্তা বাছাই করে নামের তালিকা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে জেলায় পাঠানো হয়। কয়েক জন প্রাক্তন প্রধানের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতের উপরে মানুষ অনেকটাই নির্ভরশীল। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়িত হয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে। বোর্ড গঠন স্থগিত থাকায় প্রায় সমস্ত প্রকল্পের কাজ থমকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।” একই ভাবে ব্লক জুড়ে উন্নয়নের কাজ করে পঞ্চায়েত সমিতি। সেটাও ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ। তবে জেলাশাসক বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী স্থগিত থাকা পঞ্চায়েতের দৈনন্দিন কাজকর্ম ও উন্নয়নমূলক কাজ দেখভাল করার দায়িত্বে রয়েছেন বিডিওরা। ফলে উন্নয়নের কাজ বা শংসাপত্র পাওয়ার ব্যাপারে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

যে সমস্ত পঞ্চায়েত ও সমিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত হয়ে আছে সেগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছে বিরোধীরা। সেই কথা বলে বিরোধীরা অভিযোগ করছে, শাসকদলকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই উত্তেজনাপ্রবণ আখ্যা দিয়ে বোর্ড গঠন ঝুলিয়ে রেখেছে প্রশাসন।

কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের কাজকর্ম দেখে এটা স্পষ্ট, যতক্ষণ না ওই পঞ্চায়েত ও সমিতিগুলিতে শাসকদল বোর্ড গড়ার ব্যাপারে সুবিধা করে উঠতে পারে, ততক্ষণ আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতির কথা বলে বোর্ড গঠন করতে দেওয়া হবে না।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘এ বার পুরুলিয়াতে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল শাসকদল। তার পরেও যতটুকু গণতন্ত্র বজায় ছিল, সেটাকেও গলা টিপে মেরে ফেলা হচ্ছে।’’

বিজেপির জেলাসভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘স্থগিত করে দেওয়া পঞ্চায়েতগুলির নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে বিরোধীরা বোর্ড গড়বে। তিনটি সমিতিতে বিজেপি বোর্ড গড়বে। এটা বুঝেই তৃণমূলের নির্দেশে বোর্ড গঠন স্থগিত করে দিয়েছে প্রশাসন।”

তবে বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার অশান্তি চাইছে না। তাই আইনশৃঙ্খলাজনিত কারণেই বোর্ড গঠন স্থগিত করেছে প্রশাসন।” জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় জানান, পুলিশের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে উত্তেজনাপ্রবণ পঞ্চায়েত ও সমিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হয়েছে। কবে সেখানে ভোট হবে? তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ রিপোর্ট দিলেই।’’

Panchayat Board Report
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy