অন্য অনেক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির মতোই গত পুরভোটের আগে সাঁইথিয়া শহরের মানুষের কাছে শাসকদলের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল বাইপাস রাস্তা এবং ময়ূরাক্ষী নদীর উপরে কজওয়ে নির্মাণ। ওই দুই প্রতিশ্রুতিই আসন্ন পুরভোটে অস্বস্তির মুখে ফেলেছে তৃণমূল শিবিরকে। কারণ, অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে বাইপাস নির্মাণের কাজ। আর কজওয়ে নির্মাণের কাজ শুরুই হয়নি। বিরোধী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তাই উন্নয়নের ব্যাপারে শাসক দলের সদিচ্ছার প্রশ্ন তুলেছেন। ওই দু’টি বিষয়কেই এ বার পুরভোটে প্রচারের হাতিয়ার করতে চায় বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি। শাসকদল অবশ্য অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে।
বীরভূম জেলার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র এই সাঁইথিয়া। পূর্ব রেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনও বটে। সাঁইথিয়া শহরকে কার্যত দ্বিখণ্ডিত করে দিয়ে চলে গিয়েছে হাওড়া-রামপুরহাট রেলপথ। একটি সঙ্কীর্ণ রেলসেতু শহরের দুই প্রান্তকে যুক্ত করে রেখেছে। মূলত সেই কারণেই শহরের প্রধান সমস্যা যানজট। এতদিন রেল স্টেশনের পাশাপাশি বাসস্ট্যান্ডও ছিল শহরের মধ্যস্থলে। সম্প্রতি বাসস্ট্যান্ড বাইরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু, তাতেও সমস্যা মেটেনি। কারণ, বাস চলাচল নিয়ন্ত্রিত হলেও ট্রাক-সহ পণ্যবাহী গাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহনের চলাচল অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক বছরে পথে নেমেছে হাজার হাজার টোটো। এই পরিস্থিতিতে একটি বাইপাস এবং ময়ূরাক্ষী নদীর উপরে স্থায়ী কজওয়ে নির্মাণ শহরের যানজট মুক্তির অন্যতম উপায়।
ওই সরু রেলসেতু এড়িয়ে যাতায়াতের জন্য ফৈজুলাবাদ, নজরুল সরণির দুই রেল আন্ডারপাস এবং ময়ূরাক্ষী ফেরিঘাটই বাইপাস হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু, আন্ডারপাস দিয়ে বড় কোনও গাড়ি যাতায়াত করতে পারে না। ময়ূরাক্ষীর উপরে অস্থায়ী রাস্তাই শহরের ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে কাজ করে। সেক্ষেত্রে বোলপুর, আমোদপুর, লাভপুর-সহ সাঁইথিয়ার মহাজনপট্টিতে মাল নিতে আসা ট্রাকগুলি শহরের বাইরে দিয়েই গন্তব্যে চলে যেতে পারে। কিন্তু, নদীতে জল বাড়লেই রাস্তাটি তলিয়ে যায়। ওই জায়গায় কজওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। পুরসভা সূত্রের খবর, বছর দুয়েক আগে সিউড়ি-সাঁইথিয়া সড়ক থেকে বোলপুর-রাজগ্রাম সড়ক পর্যন্ত বাইপাস তৈরিতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। কিন্তু, আইনি জটিলতায় তা-ও থমকে।
পাঁচ বছর আগে পুরসভা নির্বাচনের মুখে প্রচারে এসে প্রকাশ্য সভায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল কজওয়ে নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাও বারবার বাইপাস তৈরির আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু, দু’টি প্রকল্পের কোনওটাই বাস্তবায়িত না হওয়ায় শহরবাসীর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জানান, এই দু’টি কাজ না হওয়ায় দলের অন্দরে অস্বস্তি রয়েছে। সাঁইথিয়ার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি-র জেলা কমিটির সদস্য কাশীনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘শুধু বাইপাস কিম্বা কজওয়ে নির্মাণই নয়, আরও অনেক প্রতিশ্রুতিই পূরণ করেনি তৃণমূলের পুরবোর্ড। প্রচারে সেগুলো জনগণের কাছে আমরা তুলে ধরব।’’
পুরপ্রধান বিপ্লব দত্তের দাবি, ‘‘আমরা পাঁচ বছরে যা উন্নয়ন করেছি, তা আগের ৫০ বছরেও হয়নি। তাই বিরোধীদের কথা মানুষ কানে তুলবেন না।’’ তিনি জানান, কারিগরি সমস্যার জন্যই এখনও কজওয়ে তৈরি করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘যানজট মুক্তির জন্য বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু রেলের অনুমতির অভাবে তা আটকে গিয়েছে। জট খোলার চেষ্টা চলছে।’’
জট কবে খুলবে, সেই দিকেই তাকিয়ে সাঁইথিয়ার মানুষ।