জেলার উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকেন রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরের তাবড় কর্তারা। জেলা প্রশাসনের কর্তা থেকে শুরু করে থাকেন জেলার বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরাও। অথচ ওই বৈঠকে যোগ দিয়ে এলাকার সমস্যা, প্রয়োজনের কথা তুলে ধরার সুযোগই মেলে না! বরাবরের মতো এ বারও ওই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন জেলার বিরোধী দলগুলির জনপ্রতিনিধিরা। বিরোধীদের অভিযোগ, মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও মুখ্যমন্ত্রী আসলে দলতন্ত্রকেই প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তাই জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হলেও তাঁরা ডাক পান না বলে বিরোধীদের দাবি।
ঘটনা হল, জেলায় চার বাম বিধায়ক রয়েছেন। রয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে কোনও বারই তাঁদের কাউকেই দেখা যায় না। কেন? নলহাটির ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায়, মহম্মদবাজারের সিপিএম বিধায়ক ধীরেন বাগদি, দুবরাজপুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক বিজয় বাগদি এবং ময়ূরেশ্বরের সিপিএম বিধায়ক অশোক রায়— প্রত্যেকেরই দাবি, ‘‘ডাক পাইনি। তাই যাইনি।’’
মঙ্গলবার দীপকবাবু জানান, খবরে জানতে পেরেছি মুখ্যমন্ত্রী বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে এসেছেন। কিন্তু, প্রশাসনের তরফে তাঁকে কোনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সেখানে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা থাকার সুযোগ পেলেও জনপ্রতিনিধি হিসাবে বিরোধীদের ডাকা হচ্ছে না। এই সরকার এটাকেই নিয়ম করে ফেলেছে। অথচ আমাদেরও তো বিধানসভা এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কিছু বলার থাকে। শুধু মাত্র বিরোধী রাজনীতি করি বলে আমাদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, বাম আমলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়ে ২০০৬ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে সিউড়ির আবদারপুরে প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিরোধী জনপ্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছিল। তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মালের মতো বহু বিরোধী জনপ্রতিনিধিই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন বলে দীপকবাবুর দাবি।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সৌজন্যবোধের অভাবকেই দুষছেন বিরোধীরা। অশোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের প্রার্থীদের হারিয়ে মানুষ আমাদের জনপ্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন। সেটা ওঁদের নাপসন্দ। তাই প্রশাসনিক বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী আমাদের ব্রাত্য করে রেখেছেন। ওঁরা ভুলে যাচ্ছেন, এতে সাধারণ মানুষকেই অসম্মান করা হচ্ছে।’’ জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতিকে এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে দেখা গেলেও তিনি কোনও ডাক পাননি বলেই দাবি করেছেন মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের আলি রেজা। তাঁ প্রশ্ন, ‘‘এলাকার কত কী বিষয়ে সমস্যা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কিছু হচ্ছে না। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু, আমাদের তো ডাকাই হল না। সরকারি বৈঠকেও রাজনীতির রং দেখলে কি সামগ্রিক উন্নয়ন হয়?’’
বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব নেই জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছেও। কার্যত মুখে কুলুপই এঁটেছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে সরাসরি প্রশ্ন করা হলে জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীও। এ দিন রাতে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy