Advertisement
E-Paper

প্লাস্টিকের কাপে চা নয়, খুদের আর্জি দোকানিকে

স্কুলের শিশু সংসদের পক্ষে ওই পোস্টারে লেখা— ‘প্লাস্টিকের কাপ বা গ্লাস না-না-না বলি, মাটির ভাঁড় ব্যবহার করি।’ এ সবে অরুণবাবু কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেও, পরিবেশ বাঁচাতে ছোটদের কথা মেনে চলবেন বলে কথা দেন।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৩
 বার্তাবহ: প্লাস্টিক দূষণ রুখতে প্রচারে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা। খয়রাশোলে। নিজস্ব চিত্র

বার্তাবহ: প্লাস্টিক দূষণ রুখতে প্রচারে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা। খয়রাশোলে। নিজস্ব চিত্র

খয়রাশোলের নাকড়াকোন্দা বাসস্ট্যান্ডের চায়ের দোকানে তখন বেশ ভিড়। সোমবার সকাল। ব্যস্ত দোকানি অরুণ বাগদি। তখনই স্কুলের পোশাকে দোকানে ঢুকল নাকড়াকোন্দা নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। দোকানিকে তারা বলল— ‘‘কাকু, তুমি চা প্লাস্টিকের কাপে কেন দাও? জানো কি প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকারক। এই নাও মাটির ভাঁড়, এ বার থেকে চা মাটির ভাঁড়েই দিও।’’

স্কুলপড়ুয়া মহুয়া, শ্রেষ্ঠা, তিন্নিরা শুধু আবেদনই নয়, দোকানের দেওয়ালে পোস্টার লাগিয়ে দিল। স্কুলের শিশু সংসদের পক্ষে ওই পোস্টারে লেখা— ‘প্লাস্টিকের কাপ বা গ্লাস না-না-না বলি, মাটির ভাঁড় ব্যবহার করি।’ এ সবে অরুণবাবু কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেও, পরিবেশ বাঁচাতে ছোটদের কথা মেনে চলবেন বলে কথা দেন।

শুধু অরুণবাবুর চায়ের দোকানই নয়, খুদেদের কাজে হতবাক হন আশপাশের মুদিখানা, ওষুধের দোকান মালিকও। সে সব দোকানেও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধের আবেদন জানিয়ে নিজেদের বানানো কাগজের ঠোঙা তুলে দেয় খুদেরা। সঙ্গে শিশু সংসদের ছাপানো আবেদনও।

শুধু তা-ই নয়, রাস্তায় হেলমেট-হীন মোটরবাইক আরোহীদের থামিয়ে ‘‘কেন মাথায় হেলমেট নেই কাকু, এ বার বাইরে বের হলে নিশ্চয়ই পড়বে’’— আদুরে গলায় পথ-নিরাপত্তার সেই পাঠ দিতেও ভোলেনি স্কুলের খুদে পড়ুয়া সরোজ, চৈতালিরা। পড়ুয়াদের এ ভাবে পথে নেমে পরিবেশ ও পথ নিরাপত্তার পাঠ দিতে দেখে কিছুটা অবাক হলেও সকলেই কথা দিয়েছেন, ‘‘তোমাদের কথা মেনে চলব।’’

সোমবার থেকে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত জেলার প্রতিটি স্কুলে ‘নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে। সাত দিন তা নিয়ে নানা কর্মসূচি ঘোষিত। সোমবার সূচনালগ্নের অনুষ্ঠানে ছিল স্কুল থেকে আয়োজিত একটি পদযাত্রা। জেলার বিভিন্ন স্কুল তা আয়োজন করেছিল। কিন্তু অভিনবত্বে বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিল ছিল খয়রাশোলের ওই স্কুল।

পরিবেশ সচেতনতা, গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা, জল সংরক্ষণ, পরিচ্ছন্নতা, ডেঙ্গি প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, শৌচাগারের ব্যবহার, প্লাস্টিক দূষণ, পথ নিরাপত্তা বিষয়ক নানা পোস্টার নিয়ে সেই পদযাত্রায় পা মেলানোর পাশাপাশি বড়দের সচেতনতার পাঠ দিতে ভোলেনি নাকড়াকোন্দা নিম্ন বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তাদের পাশে ছিলেন স্কুলের চার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং খয়রাশোল পুলিশ।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শতাব্দীপ্রাচীন নাকড়াকোন্দা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে প্রি-প্রাইমারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা এখন ৯৭ জন। পাঠদানের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ সচেতনতার পাঠ পড়ুয়াদের শেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরুণ তপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা।

তাঁরা জানান, স্কুলকে নির্মল ও প্লাস্টিকমুক্ত করতে বন্ধপরিকর পড়ুয়ারা। প্রতি দিন স্কুলের দু’টি আলাদা জায়গায় বর্জ্য জড়ো করে পড়ুয়ারাই। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আমাদের ইচ্ছা শিশুদের মনে পরিবেশ সচেতনতার বোধ জাগানো। তা সঠিক ভাবে করতে পারলে শিশুর পরিবারেও বার্তা পৌঁছয়।’’

নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহের পদযাত্রায় যে অন্যরকম কিছু করা হবে, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তা আগেই ভেবে রেখেছিল খুদেরা। বিদ্যালয়ের শিশু সংসদের প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে চিঠি দিয়েছিল জেলাশাসক, জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক), অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক, খয়রাশোলের বিডিও সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে।

এ দিনের পদযাত্রায় আমন্ত্রিত সরকারি আধিকারিকেরা আসতে পারেননি ঠিকই, তবে চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করে জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) সঙ্ঘমিত্র মাঁকুড় বলেন, ‘‘অভিনব ভাবনা। খুব খুশি হয়েছি। জানি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ওদের সঙ্গে রয়েছেন। তবে যে ভাবে ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে এসে পরিবেশ সচেতনতার পাঠ দিয়েছে, সেটা অন্য স্কুলের কাছে অনুপ্রেরণা হতে পারে।’’

Environment Plastic Cup Clay Pot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy