Advertisement
E-Paper

আলুর ক্ষতি সামাল দিচ্ছে লঙ্কা চাষ

দূর থেকে দেখলে মনে হবে, ছোট্ট ছোট্ট কুঁড়েগুলির সামনে লাল আবির স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কিংবা মনে হবে, মাটিতে বড় লাল কাপড় মেলে রাখা হয়েছে। তা কিন্তু নয়।

শুভ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৭ ০২:০৮
লক্ষ্মীলাভ: কাঁচা লঙ্কার থেকে শুকনো লঙ্কায় লাভ বেশি। তাই পরিচর্যা চলছে। নিজস্ব চিত্র।

লক্ষ্মীলাভ: কাঁচা লঙ্কার থেকে শুকনো লঙ্কায় লাভ বেশি। তাই পরিচর্যা চলছে। নিজস্ব চিত্র।

দূর থেকে দেখলে মনে হবে, ছোট্ট ছোট্ট কুঁড়েগুলির সামনে লাল আবির স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কিংবা মনে হবে, মাটিতে বড় লাল কাপড় মেলে রাখা হয়েছে। তা কিন্তু নয়। মাঠে ফলানো লঙ্কা রোদে শুকানো হচ্ছে। বিষ্ণুপুর ব্লকের দ্বারিকা গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের সুভাষপল্লির ৭০টি কৃষিজীবী পরিবার ওই শুকনো লঙ্কা বেচেই এখন লক্ষ্মীলাভের দিশা পেয়েছেন।

দ্বারকেশ্বর নদ ও বিড়াই নদীর মধ্যবর্তী এই এলাকার মাটি এমনিতে উর্বর। গত কয়েক বছর ধরে আলু চাষে লোকসানের মুখ দেখে তাঁরা এ বার বিকল্প চাষ হিসেবে লঙ্কা ফলিয়েছেন। কাঁচা লঙ্কা বাজারে কম দামে না ছেড়ে নিজেরাই সেই লঙ্কা শুকাচ্ছেন। অনেকেই আলুর ক্ষতি তুলে নিতে চাইছেন এ ভাবেই।

বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে হাত লাগিয়ে লঙ্কা শুকনোর ফাঁকে তপন ভদ্র বলেন, ‘‘শুকনো লঙ্কা নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। বাজারও বছরভর রয়েছে। ফলে ক্ষতির ঝুঁকি নেই।’’

তাঁর মতোই এই গ্রামের প্রশান্ত সরকার, ভোলা যাদব, সুরেন বিশ্বাস প্রত্যেকেই কিছু না কিছু জমিতে লঙ্কা চাষ করেছেন। তাঁরা জানান, এক বিঘা লঙ্কা চাষ করতে মেরে কেটে দশ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে লাভ প্রায় কুড়ি হাজার টাকা।

অন্য দিকে এক বিঘাতে আলু চাষ করতে গেলে অন্ত ১৫ হাজার টাকা বেরিয়ে যায়। কিন্তু গত কয়েক বছরে শেষের দিকে দু’টাকা-এক টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করতে হয়েছে। অনেকে গরুর মুখেও তুলে দিয়েছেন। চাষের খরচও ওঠেনি।

তাঁদের কথায়, ‘‘এখন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তো বটেই, আসানসোল, দুর্গাপুর, কলকাতা, এমনকী ভুবনেশ্বর থেকেও লোক বাড়িতে এসে শুকনো লঙ্কা নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারেই কেজি প্রতি ৬০-৭০ টাকা দাম পাওয়া যাচ্ছে। এ চাষে লাভ মন্দ নয়।’’ তবে এ কাজে একটু সময় লাগে আর পরিশ্রম বেশি। তবু আলুর মতো দাম না পাওয়ার ভয় নেই। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রথাগত ধান, আলু চাষ করে এখন সংসার টানা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। গ্রামের কমবয়েসি ছেলেরা অনেকেই ভিন্‌ রাজ্যে গিয়ে শাড়িতে নকশার কাজে কিংবা রাজমিস্ত্রির কাজে লেগেছেন। তবে বিকল্প চাষে ফের সুদিনের সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা।

শুধু লঙ্কা নয়, বাদাম, কচু, ডাল শস্যও অনেকে চাষ করছেন। সুভাষপল্লির সব কৃষকই স্থানীয় রানিখামার কৃষি সমবায় সমিতির সদস্য। ওই সমবায়ের সম্পাদক অজয় রায় বলেন, ‘‘সুভাষপল্লির কৃষকরা ঋণ নিলেও পরিশোধ করে দেন। আলু চাষ করে এ বার তাঁরা সমস্যায় পড়লেও লঙ্কা চাষ করে শুকিয়ে বিক্রি করে ভালই আয় করছেন।’’ বিষ্ণুপুর মহকুমা কৃষি আধিকারিক হেমন্তকুমার নায়েক বলেন, ‘‘ওঁদের কাজ প্রশংসনীয়। উদ্যানপালন দফতর থেকে সঠিক বীজ ব্যবহার এবং পরামর্শ মেনে লঙ্কা গাছের পরিচর্যার দিকে খেয়াল রাখতে বলছি। ওঁদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।’’

Chili farming Potato Loss
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy