Advertisement
E-Paper

স্মারকলিপি ঘিরে অফিস হল রণক্ষেত্র

এ দিন গোটা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার বামকর্মী বাঁকুড়ায় এসেছিলেন স্মারকলিপি কর্মসূচিতে যোগ দিতে। বামেদের দাবি, প্রায় দশ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন কর্মসূচিতে। যদিও পুলিশের হিসেবে সেই সংখ্যাটা মেরেকেটে তিন হাজার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪৪
খণ্ডযুদ্ধ:  বাঁকুড়া জেলাশাসকের অফিসের সামনে পুলিশ ও বামকর্মীদের সংঘর্ষ।

খণ্ডযুদ্ধ: বাঁকুড়া জেলাশাসকের অফিসের সামনে পুলিশ ও বামকর্মীদের সংঘর্ষ।

কয়েক সপ্তাহ আগেই ছিল সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার দিন। তখন তৃণমূল কর্মীদের হাতে মার খাওয়ার আশঙ্কায় ব্যাঙ্কে না গিয়ে পার্টি অফিসেই ঢুকে বসেছিলেন বাম নেতারা। সোমবার অবশ্য সেই বাম নেতা কর্মীদের অন্য চেহারা দেখলেন বাঁকুড়াবাসী। জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দিতে এসে পুলিশ কর্মীদের উপরে তাঁরা চড়াও হলেন ইট পাটকেল নিয়ে। পাল্টা দিল পুলিশও। দফায় দফায় বাম কর্মী ও পুলিশের খণ্ডযুদ্ধে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল জেলাশাসকের দফতর চত্বর। পুলিশ এবং বেশ কিছু বামকর্মী ঘটনায় জখম হয়েছেন।

এ দিন গোটা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার বামকর্মী বাঁকুড়ায় এসেছিলেন স্মারকলিপি কর্মসূচিতে যোগ দিতে। বামেদের দাবি, প্রায় দশ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন কর্মসূচিতে। যদিও পুলিশের হিসেবে সেই সংখ্যাটা মেরেকেটে তিন হাজার। একশো দিনের কাজে শ্রমিকদের মজুরি না পাওয়া, বাঁকুড়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে প্রায় ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা-সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে বামেরা মিছিল করে জেলা শাসকের দফতরে জড়ো হন। উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র-সহ জেলার নেতারা।

এ দিন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু দফতরে ছিলেন না। বাম নেতারা গোঁ ধরেন, জেলাশাসক ছাড়া অন্য কোনও আধিকারিকের কাছে তাঁরা স্মারকলিপি দেবেন না। এর পরে জেলাশাসকের দফতরের সামনেই শুরু হয় বিক্ষোভ। ভিড় সামলাতে বাঁকুড়া সদর থানার আইসি রাজর্ষি দত্তর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। ঘেরাটোপ ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা শুরু করেন বাম কর্মীরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা হাতাহাতিতে গিয়ে ঠেকে। অভিযোগ, কয়েক জন বাম কর্মী পুলিশ কর্মীদের কলার ধরে টানাটানি শুরু করেন। পুলিশ কর্মী ও বাম কর্মীদের অনেকেই এর পরে একে অন্যকে ঘুঁষি মারতে থাকেন।

আহত ফব নেতা মানিক মুখোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) জখম
সাব ইন্সপেক্টর প্রভাত বিশ্বাস (ডান দিকে)। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে দফতরে ঢোকার রাস্তায় লাঠি চার্জ শুরু করে পুলিশ। ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন বাম কর্মীরা। অনেকে জখম হন। নিমেষেই ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তা।

তবে সেটা কিছুক্ষণের জন্য। তার পরেই ইঁট, ঝামা, পাথর, বোল্ডারের টুকরো নিয়ে পুলিশের উপরে পাল্টা চড়াও হন বাম কর্মীরা। আকস্মিক হামলায় প্রথমে হচকচিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। মাথা বাঁচাতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন পুলিশ কর্মীরা। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই হেলমেট পরে ফের আক্রমণরত বাম কর্মীদের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে পড়েন তাঁরা। বাম কর্মীদের ছোড়া পাথরই তুলে নিয়ে তাঁদের দিকে ছুড়তে থাকেন। বেশ কিচুক্ষণ এ রকম চলার পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে বাম কর্মীরা ক্ষান্ত দেন। তবে ততক্ষণে দু’পক্ষের অনেকেরই রক্ত ঝরেছে।

পুলিশের দাবি, এই ঘটনায় আটজন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন। বাম কর্মীদের ছোড়া পাথরে মুখে চোট পেয়েছেন বাঁকুড়া সদর টাউন সাব ইন্সপেক্টর প্রভাত বিশ্বাসের। অন্য দিকে, অনেক বাম কর্মীই কমবেশি চোট পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছ’জনের চোট গুরুতর। ডিওয়াইএফ-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভয় মুখোপাধ্যায়ের মাথা ফেটে গিয়েছে পাথরের ঘায়ে। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা নেতা মানিক মুখোপাধ্যায় পুলিশের লাঠিতে হাতে চোট পেয়েছেন।

কেন এমন পরিস্থিতি হল?

অমিয়বাবুর দাবি, ‘‘সাদা পোশাকে থাকা কিছু পুলিশ কর্মীর উস্কানিতেই এত বড় ঘটনা ঘটল। পুলিশ আমাদের কর্মীদের উপর যথেচ্ছ লাঠিচার্জ করেছে। মহিলাদেরও রেয়াত করেনি। শেষে আত্মরক্ষার তাগিদেই আমাদের কর্মীরা হাতে পাথর তুলে নেন।’’ পুলিশের একাংশ এই ঘটনার জন্য আবার বাম কর্মীদের দুষছেন। তাঁদের বক্তব্য, ঝামেলা করার পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিলেন বাম কর্মীরা। তাই সঙ্গে করে ঝামা ইটও বয়ে এনেছিলেন। যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি বাম নেতারা।

পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জ বা বাম কর্মীদের দিকে পাথর ছোড়ার অভিযোগ নিয়ে কিছু বলতে চাননি বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ শুধু মারমুখী বাম কর্মীদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছে।’’

এই ঘটনায় সোমবার বিকেল পর্যন্ত কোনও পক্ষই বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। বাম নেতৃত্ব জানিয়েছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, জেলা শাসকের দফতরের তরফে যদি অভিযোগ করা না হয় তাহলে পুলিশই বামকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে।

এ দিনের ঘটনায় বামফ্রন্টকে কটাক্ষ করে তৃণমুলের জেলা সহ-সভাপতি তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্মারকলিপি দিতে আসার নামে গুন্ডামি করল ওরা। বাঁকুড়ার সংস্কৃতি এমন ছিল না। এখানকার মানুষ এই সব মেনে নেবেন না। এর পরে শহরে মিছিল করতে এলে শহরবাসীই ওদের তাড়িয়ে দেবেন।’’

জেলাশাসক দফতরে না থাকায় এ দিন স্মারকলিপি জমা দেননি বাম নেতৃত্ব।

Bankura CPIM বাঁকুড়া Clash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy