বীরভূম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান প্রলয় নায়েক। নিজস্ব চিত্র।
এত দিন যা শোনা যাচ্ছিল রাজনৈতিক নেতাদের গলায়, এ বার সে কথাই রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন বীরভূমের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান প্রলয় নায়েক। গত রবিবার ইলামবাজারে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে একই মঞ্চে ছিলেন প্রলয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘খেলা হবে। ভয়ানক খেলা হবে।’’ সরকারি পদে থেকে তিনি কী ভাবে রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে এমন কথা বললেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রলয় যদিও সরাসরি নিজেকে তৃণমূল-কর্মী বলেই দাবি করেছেন। পাশাপাশি তাঁর দাবি, তিনি খেলা বলতে পিট্টু, হাডুডুর মতো ছোট ছোট আঞ্চলিক খেলার কথা বলতে চেয়েছেন। তাতে যদিও বিতর্ক থামেনি।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। বীরভূমেও একের পর এক সভা, সমাবেশ করছে তৃণমূল-বিজেপি। জেলায় গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অমিত শাহ, তাঁরা সভা-রোড শো করেছেন। অনুব্রতর গড়ে দাঁড়িয়ে তাঁকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব। পাল্টা তৃণমূলও চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে। সম্প্রতি দলেরই এক সভা থেকে অনুব্রতকে বলতে শোনা যায়, ‘‘নিশ্চয়ই খেলা হবে। একশো বার খেলা হবে। ভয়ঙ্কর খেলা হবে। এই মাটিতেই খেলা হবে। পারবেন তো পগার পার করে দিতে? ঠেঙিয়ে পগার পার করে দিন।’’ এর পর বিজেপি-কেও একই স্লোগানে ময়দানে নামতে দেখা গিয়েছে।
অনুব্রত সেই ‘খেলা হবে’ মন্তব্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে প্রলয়ের গলায়। তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই প্রলয় বলছেন, ‘‘এতে বিতর্কের কী আছে? শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে খেলা করার কথা বলা হয়েছে। আঞ্চলিক খেলাগুলোকে আমরা গুরুত্ব দিতে চাইছি। তাই যে অঞ্চলে যেমন প্রয়োজন সেখানে সেই ভাবে খেলা হবে।’’ কিন্তু তিনি সরকারি পদে তেকে কেন রাজনৈতিক মঞ্চে গেলেন, ভাষণ দিলেন? প্রলয়ের জবাব, ‘‘দেখুন, গণতান্ত্রিক দেশে আমার নিজস্ব বক্তব্য থাকতেই পারে। আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতাও আছে। আমি জোর গলায় বলছি, আমি তৃণমূল করি। তাই দলের মঞ্চে ছিলাম। এর সঙ্গে সরকারি পদের কোনও যোগ নেই।’’
বিরোধী শিবির যদিও প্রলয়ের এই ‘খেলা’ মন্তব্যকে ‘ভোটের বার্তা’ হিসেবেই দেখছে। প্রলয়ের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে বিজেপি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জেলার শিক্ষা মহলের একাংশ। বিজেপি নেতা উজ্বল মজুমদারের কথায়, “প্রলয় নায়েক এক জন স্কুল শিক্ষক হয়ে এ ধরনের মন্তব্য করছেন, এটা ভাবতে পারছি না। মেনে নেওয়া যায় না। আমি নিজে এক জন শিক্ষক। পাশাপাশি রাজনীতিও করি। কিন্তু, মাথায় রাখতে হবে তো, আমরা প্রথমে শিক্ষক। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা এর থেকে কী শিখবে?” পাশাপাশি তিনি তৃণমূলকেও কটাক্ষ করেছেন। তাঁর কথায়, “এত দিন ধরে তো খেলা দেখাল তৃণমূল। আর কত খেলা দেখাবে ওরা!”
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কে কী বলেছেন বলতে পারব না।’’ তবে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রতকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন ধরেননি তিনি ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy