E-Paper

আনাজ ডুবে ক্ষতি, ফের কি বাজারে আগুন

সব মিলিয়ে, পুজোর আগে আনাজ বাজার ফের আগুন হওয়ার সম্ভাবনা।সবচেয়ে সমস্যা হল, বাঙালির পাতে নতুন ফুলকপির জোগান দিতে লাগানো চারা সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৮
তলিয়ে গিয়েছে ধান। খয়রাশোলের মামুদপুর মৌজায়।

তলিয়ে গিয়েছে ধান। খয়রাশোলের মামুদপুর মৌজায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

টানা চার দিনের বৃষ্টিপাতে ধান চাষ লাভবান হলেও জেলার আনাজ চাষের কার্যত দফারফা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। তাঁদের আক্ষেপ, মাঠেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টোম্যাটো, পালং শাকের চারা। নষ্ট হয়েছে লঙ্কা, পটল, ঢ্যাঁড়শ, ঘি-করলা, কুঁদরি, বেগুন ও শসার মতো আনাজও। কিছু এলাকায় নিচু জমিতে ধানও জলের তলায় রয়েছে।

সব মিলিয়ে, পুজোর আগে আনাজ বাজার ফের আগুন হওয়ার সম্ভাবনা।সবচেয়ে সমস্যা হল, বাঙালির পাতে নতুন ফুলকপির জোগান দিতে লাগানো চারা সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফের নতুন করে লাগাতে হবে বলে জানান চাষিরা। ফলে, ফুলকপির দাম চড়চড় করে বাড়তে পারে। কৃষি ও উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলের অজয় নদ ও হিংলো নদীর মধ্যবর্তী চাপলা, রসিদপুর, মুক্তিনগর, পারুলবোনা, অজয় ঘেঁষা পলপাই, শাল নদী ঘেঁষা পাইগড়া গ্রাম, দুবরাজপুরের লোবা, ইলামবাজার ঘুড়িষা, সিউড়ির খটঙ্গা, লাভপুরের ভোগপুর, ময়ূরেশ্বরের ভগবতীপুর, দুনা, কোটাসুর এবং নলহাটির পানিতার মতো বেশ কিছু জায়গায় আনাজ চাষের রমরামা। এই সব অঞ্চল থেকে শুধুমাত্র জেলা নয়, জেলার বাইরেও আনাজ সরবারাহ করা হয়ে থাকে।

খয়রাশোলের চাপলা গ্রামের অনন্ত সরকার, ভগীরথ মণ্ডল, রসিদপুরের জয়ন্ত সামন্তরা আগাম ফুলকপি লাগিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জয়ন্ত জানান, আট হাজার ফুলকপি চারা লাগিয়েছিলেন। টানা বৃষ্টিতে সব চারা নেতিয়ে গিয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘চারা প্রতি আড়াই টাকা খরচ সব নষ্ট। আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।’’ অনন্ত বলছেন, ‘‘আমি দিন কয়েকের মধ্যেই ফুলকপি বাজারে পাঠাতে পারততাম। কুঁড়ি চলে এসেছিল। সব নষ্ট হল!’’ অন্য দিকে ভগীরথের দাবি, দেড় বিঘা জমিতে লাগানো ফুলকপি চারা নষ্ট হয়েছে।

মুক্তিনগরের চাষি অবনী মণ্ডল, সুমিত্র ঘরামী, দিলীপ মণ্ডলেরাও কপাল চাপড়াচ্ছেন। তাঁদের পটল খেত, লঙ্কা খেত, নতুন বড়বটির চারার খুবই ক্ষতি হয়েছে। তাঁদের কথায়, ‘‘এখানে আনাজ চাষই জীবিকা। বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে অনেকটাই। মাটি নরম হয়ে পটলের মাচা ভেঙে গাছ নষ্ট হয়েছে।’’ সিউড়ির লম্বোদরপুরের চাষি বিনয় গড়াই জানান, পটল, শসা, ঝিঙের মতো লতানে ফলন মরে গিয়েছে বেশি। ইলামবাজারের ঘুরিষা, ভরতপুর, পশ্চিম নারায়ণপুর, ক্ষুদ্রপুর মৌজার চাষিদের ঘি-করলা, পটল, ফুলকপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের মতে, গাছ বেঁচে থাকলে সেগুলিও নুইয়ে পড়বে। দিন কয়েক রোদ দিলেই গাছ মরে যাব। ময়ূরেশ্বের দুনা গ্রামের চাষি সোনারুল শেখ, সুনীল দাস জানান, বর্ষার জলে ফুলকপির চারা প্রায় সবই নষ্ট হয়েছে। এই জন্য লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাঁদের।

উদ্যানপালন দফতরের উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) সুফল মণ্ডল জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলো ও পালং শাক, ট্যোমাটোর মতো ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বৃষ্টি নামার আগেই প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, দুবরাজপুর ও খয়রাশোলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। যা গড় বৃষ্টিপাতের প্রায় দ্বিগুণ। খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর, মামুদপুর মৌজায় বিঘার পর বিঘা ধানখেত জলের তলায়। এলাকার চাষি সাধনকুমার ঘোষ, সুজিত বাউড়ি বলেন, ‘‘ধান বাঁচার সম্ভাবনা কম।’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় একের পর এক চিমনি ভাটা গড়ে উঠেছে। প্রতিটি ভাটায় প্রচুর পরিমাণ মাটি পাহাড়ের মতো জমিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে জল নিকাশের ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি কাঁদরও মজে গিয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে তাই ধানের জমি জলের তলায়।

খয়রাশোল ব্লক কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা সুরজিৎ গড়াই মানছেন, কেন্দ্রগড়িয়া ও হজরতপুর পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু পরিমাণ ধানজমি জলের তলায়। তবে তিন দিনের মধ্যে জল নেমে গেলে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যাবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Crop Damage crops market price siuri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy