বিভীষণ হাঁসদার সঙ্গে কথা বলছেন বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ। নিজস্ব চিত্র।
কিছু দিন আগেও মধুমেহ বা ডায়াবিটিসে আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার খরচ কোথা থেকে জুটবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন বাঁকুড়া ১ ব্লকের চতুর্ডিহি গ্রামের দিনমজুর বিভীষণ হাঁসদা। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সদ্য তাঁর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরে যাওয়ার পরেই ছবিটা পাল্টে গিয়েছে। তাঁর মেয়ের চিকিৎসা করানো নিয়ে রবিবার বিজেপি ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে যেন ‘রেষারেষি’ দেখল চতুর্ডিহি।
এ দিন বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ, পেশায় চিকিৎসক সুভাষ সরকার বিভীষণবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর মেয়ের চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখেন। সুগারের পরিমাণ জানতে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, ‘‘বিভীষণবাবুর মেয়ে রচনা ‘টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস’-এ আক্রান্ত জানতে পেরে অমিতজির নির্দেশে আমরা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। অমিতজি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে রচনাকে এইমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হবে।’’
তিনি ফেরার কিছু পরেই বাঁকুড়া ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক মেডিক্যাল অফিসারকে নিয়ে ওই বাড়িতে উপস্থিত হন বিডিও (বাঁকুড়া ১) বিপ্লবকুমার রায়। মেডিক্যাল অফিসার রচনাকে পরীক্ষা করে কিছু ওষুধও দেন। বিডিও প্রশাসনিক ভাবে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।
এই ঘটনার পরে সাংসদ না প্রশাসন কার সাহায্য বিভীষণবাবু নেবেন, তা নিয়েই ফিসফাস শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। বিভীষণবাবুর অবশ্য সাফ কথা, “কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার বাড়ি এসেছিলেন তা ঠিক। তবে আমি কোনও রাজনৈতিক দল করি না। তাই কারও সাহায্য নিতে আমার কোনও আপত্তি নেই। যিনি এগিয়ে আসবেন, তাঁরই সাহায্য নেব।”
তিনি জানান, দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া রচনা অনেক ছোট থেকে মধুমেহ রোগে আক্রান্ত। তার রক্তে সুগারের পরিমাণ এত বেশি যে নিয়মিত তাকে ইনসুলিন দিতে হয়। রচনার চিকিৎসা ও ওষুধ কিনতে মাসে প্রায় ছ’হাজার টাকা খরচ হয় বলে তাঁর দাবি। বিভীষণবাবু ও তাঁর স্ত্রী মণিকাদেবী দিনমজুরি করে যা পান, তাতে সংসার চালিয়ে মেয়ের ওষুধের খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হয়।
সুভাষবাবু তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘রচনার রক্তের রিপোর্ট নিয়ে আমরা এক চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করব। ওই চিকিৎসক যদি মনে করেন, তাহলে রচনাকে দেশের নামি কোনও হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হবে। রচনার চিকিৎসার খরচ আমরাই দেব।” এ দিকে বিডিও (বাঁকুড়া ১) বলছেন, “বিভীষণবাবু বাঁকুড়া ১ ব্লক এলাকার বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের সমস্যার কথা শুনেই খোঁজ নিতে যাই। তিনি ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল অফিসারের কাছে লিখিত ভাবে তাঁর মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে সাহায্য করা হবে।”
সে খবর পেয়ে সুভাষবাবুর কটাক্ষ, ‘‘এখন মনে হচ্ছে ঘন ঘন অমিতজির রাজ্যে আসা দরকার। না হলে রাজ্য সরকারের নজরে সাধারণ মানুষের সমস্যা উঠে আসবে না। বিভীষণবাবু সরকারি জায়গায় মেয়ের চিকিৎসা করালেও এত দিন বাইরে থেকে মোটা টাকার বিনিময়ে তাঁকে ওষুধ কিনতে হত।” তবে বিডিও-র দাবি, “বিভীষণবাবু বেসরকারি চিকিৎসকের কাছেই তাঁর মেয়ের চিকিৎসা করাতেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর মা আদিবাসী বার্ধক্যভাতা পান। আগে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়িও তাঁরা পেয়েছেন।’’ বিতর্কে জড়াতে নারাজ বিভীষণবাবু বলছেন, ‘‘যে ভাবেই হোক, মেয়েটা সুস্থ হলেই আমরা শান্তি পাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy