Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাথরের স্তরে থমকে সেতুর কাজ

বাঁকুড়া শহরের গন্ধেশ্বরী নদীর উপরে কেশিয়াকোল-সতীঘাট সংযোগকারী সেতু নির্মাণে নেমে গোড়াতেই সমস্যার মুখে পড়েছে পূর্ত দফতর।

গতিহারা: মাঝ পথে আটকে কেশিয়াকোল-সতীঘাটের সেতু তৈরির কাজ। সমস্যা কাটিয়ে দ্রুত কাজ শেষের দাবি উঠেছে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

গতিহারা: মাঝ পথে আটকে কেশিয়াকোল-সতীঘাটের সেতু তৈরির কাজ। সমস্যা কাটিয়ে দ্রুত কাজ শেষের দাবি উঠেছে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

নদীগর্ভের পাথরে ধাক্কা লেগে থমকে গিয়েছে সেতু নির্মাণের কাজ! যা ভাবিয়ে তুলেছে পুর্ত দফতরের কর্তাদের। যন্ত্র দিয়ে ভাঙা যাচ্ছে না শক্ত পাথরের স্তর। ফলে, সেতু তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে প্রায় দু’মাস। সেতুর নির্মাণে দেরি হওয়ায় প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, কাজের গতি বাড়ানো হোক।

বাঁকুড়া শহরের গন্ধেশ্বরী নদীর উপরে কেশিয়াকোল-সতীঘাট সংযোগকারী সেতু নির্মাণে নেমে গোড়াতেই সমস্যার মুখে পড়েছে পূর্ত দফতর। আগে ওই নদীর উপরে একটি ‘কজ়ওয়ে’ ছিল। তা নিচু হওয়ায় বন্যায় চলাচল বন্ধ থাকত। বছরখানেক আগে ‘কজ়ওয়ে’ কিছুটা উঁচু করা হয়। তাতে উল্টো বিপত্তি ঘটে। কজ়ওয়ের তলায় জল বের হতে বাধা পাওয়ায় দু’পাড়ের সংযোগকারী রাস্তা ভেঙে দিচ্ছিল জলের তীব্র স্রোত। তাতে কয়েক মাস ধরে পারাপার বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। বাসিন্দাদের ঘুরপথে পেরোতে হত নদী। তাই কজ়ওয়ের বদলে সেতু তৈরির দাবি উঠেছিল।

গত বছর ‘কজ়ওয়ে’ ভেঙে সেতু গড়ার জন্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা দেওয়া হয় পূর্ত দফতরকে। প্রায় দু’শো মিটার দীর্ঘ সেতু গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কাজে নেমে পড়ে পূর্ত দফতর।

সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করার জন্য দু’বছর সময়সীমা ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় এক বছর পার হয়ে গেলেও কাজ বিশেষ এগোয়নি।

কেশিয়াকোলের ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের দাবি, “গত কয়েক মাস ধরে সেতু তৈরির কাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে। এমন চলতে থাকলে সেতু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ করা যাবে না। সেতু না থাকায় আর কত দিন ঘুরপথে যাতায়াত করতে হবে?’’

কেন আটকে রয়েছে সেতু নির্মাণ?

জেলা পূর্ত দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উৎপল চৌধুরী অবশ্য সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকার জন্য বর্ষাকেই দায়ী করছেন। তাঁর দাবি, “বর্ষায় নদীগর্ভে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ। বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে নদীর জলের স্রোত বেড়ে গেলে সেতু ভেঙে পড়তে পারে। তাই জুন থেকেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।”

যদিও পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, কেবল বর্ষাই সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার এক মাত্র কারণ নয়। তাঁদের বক্তব্য, সেতুর স্তম্ভের ভিত তৈরির জন্য নদীগর্ভে প্রায় সাড়ে ছয় মিটার গভীর গর্ত খোঁড়ার কথা। তিন মিটার গর্ত খোঁড়ার পরেই নীচে শক্ত পাথরের স্তরে কাজ আটকে গিয়েছে।

এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই পাথরের স্তর এতটাই কঠিন যে যন্ত্র দিয়েও ভাঙা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে নানা পদ্ধতিতে সাহায্যে ওই স্তর ভেদ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।’’ অনেকের মতে, এই পরিস্থিতিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর ভাঙা ছাড়া উপায় নেই।

জেলা পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানান, সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর আগে মাটি পরীক্ষা করেই জানা গিয়েছিল, নদীগর্ভে পাথরের স্তর রয়েছে। তবে সেই স্তর এতটা দুর্ভেদ্য, তা বোঝা যায়নি। তিনি বলেন, “আশা করেছিলাম, পাথরের স্তর যন্ত্র দিয়েই ভাঙা সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হল না।”

বিষয়টি নিয়ে উৎপলবাবু বলেন, “সমস্যাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কী ভাবে পাথরের স্তর ভাঙা হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, সমস্যা মিটে যাবে।”

সেতু নির্মাণের কাজ চলাকালীন নদী পারাপারের জন্য একটি অস্থায়ী কাঁচা রাস্তা গড়ে দিয়েছিল বাঁকুড়া পুরসভা। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভেঙে গিয়েছে সেই রাস্তা। সে কারণে সেতু নির্মাণের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার দাবি জোরাল হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে বাসিন্দারা অস্থায়ী রাস্তাটি মেরামতের দাবি তুলেছেন।

বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “নদীবক্ষে কাঁচা রাস্তা হলে বানের তোড়ে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেশিয়াকোলের বাসিন্দাদের সমস্যাটি নজরে রয়েছে। কিন্তু বর্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gandheswari River PWD
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE