Advertisement
E-Paper

বারবার বিড়ম্বনায় ফেলেছেন দলকে 

পাঁচ বছর আগে তৃণমূলের টিকিটে লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরের পর পোস্ট করেছেন

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪১
অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অনুপম হাজরা। ফাইল চিত্র

অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অনুপম হাজরা। ফাইল চিত্র

পাঁচ বছর আগে তৃণমূলের টিকিটে লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরের পর পোস্ট করেছেন—যা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভাল চোখে দেখেননি। দলের কর্মসূচিতে শেষ কবে দেখা গিয়েছে, তা-ও মনে করতে পারেন না কর্মী-সমর্থকেরা। তৃণমূলের অনেকেই মনে করতেন, তাঁর বহিষ্কার ছিল সময়ের অপেক্ষা।

বুধবার সেটাই ঘটল। বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরাকে দল থেকে বহিষ্কারই করল তৃণমূল। একই দিনে বহিষ্কার করা হয়েছে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খানকে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে অনুপমও কি বিজেপিতে যোগ দেবেন—জেলার রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলল দিনভর। তাঁকে এ বার বোলপুরে প্রার্থী করা হবে না বলেও জল্পনা ছিল দলে। তৃণমূল নেতৃত্ব অনুপমকে বিন্দুমাত্রও গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। বহিষ্কারের সিদ্ধাপ্ত প্রসঙ্গে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ‘‘দলের জন্য কোনও কাজ করেনি। মানুষের উন্নয়নের জন্য কোনও কাজ করেনি। দল যা ভাল বুঝেছে, তাই-ই করেছে।’’

অথচ একটা সময় অনুব্রত মণ্ডলের হাত ধরেই তৃণমূলে নাম লেখানো অনুপমের। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অনুপমের নাম যখন বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে ঘোষিত হয়, তখন অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। বোলপুরের মতো আসনে লোকসভার টিকিট পাওয়ার পিছনে জেলা সভাপতির ‘আশীর্বাদ’ই দেখেছিলেন দলের নেতা-কর্মীরা। সিপিএমের রামচন্দ্র ডোমকে প্রায় দু’’লক্ষ ভোটে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন অনুপম।

এর পর থেকেই অনুপমের নানা কাণ্ডকারখানায় বারংবার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে শাসকদলকে। দলকে তোয়াক্কা না করে বিতর্কিত মন্তব্য করা কার্যত অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন এই সাংসদ। সোশ্যাল মিডিয়ায় মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে নিয়ে করা মন্তব্যের জেরে তাঁকে দলের তরফে শো-কজও করা হয়েছিল। অনুব্রত খেপে গিয়ে দলীয় সাংসদ সম্পর্কে গত বছর গোড়ার দিকে মন্তব্য করেন, ‘‘ওটা একটা ননসেন্স! ওটা একটা আস্ত পাগল! কোনও ভ্যালু নেই।’’ তখনই বোঝা গিয়েছিল তৃণমূলের সঙ্গে অনুপমের সম্পর্ক এখন স্রেফ কাগজেকলমেই। অনুপমের আচরণে ক্ষুব্ধ ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। জানিয়েছিলেন, দলের ভাবমূর্তি যাঁরা নষ্ট করছেন, তাঁরা কোনও ভাবেই দলের সৈনিক হতে পারেন না। বিষয়টি যে আর বরদাস্ত করা হবে না, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন পার্থবাবু।

অনুপম অবশ্য বরাবর দাবি করে এসেছেন, ‘‘দল বিরোধী কোনও কাজ করিনি।’’ এমনকি বুধবার সাংসদ সৌমিত্র খানের বিজেপি-তে যোগদানের পরেও টুইট করে অনুপম লেখেন, ‘‘গত চার বছর ধরে জেলায় একটাও কোনও রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ডাক না পেয়েও... জেলাতে কমপ্লিটলি পলিটিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড হয়েও... দিদির প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখি আর তুই পারলি না...!!! ...শকিং...!!! যাই হোক.. ভাল থাকিস বন্ধু...!!!’’

এ সবে চিঁড়ে ভেজেনি। শেষ পর্যন্ত অনুপমকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তই নিল তৃণমূল। এর পর থেকেই তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জেলার রাজনৈতিক শিবিরে চর্চা চলেছে। অনুপম গোপনে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন, এমন অভিযোগও শাসকদলের অন্দরে কান পাতলে শোনা গিয়েছে একাধিক বার। বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপি একটি জাতীয় দল এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। দলীয় পদ্ধতি মেনে গণতান্ত্রিক নিয়মে যদি তিনি (অনুপম) দলে আসতে চান, নেতৃত্ব বিবেচনা করে তাঁকে নিয়ে নিতেই পারেন।’’

সিপিএমের জেলা সাধারণ সম্পাদক মনসা হাঁসদার প্রতিক্রিয়া, ‘‘অনুপমকে দল বহিষ্কার করেছে, সেটা তাদের দলীয় ব্যাপার। সে বিষয়ে কিছু বলব না। কিন্তু তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে মতাদর্শগত কোনও বিরোধ নেই। তাই ওদের মধ্যে যাওয়া-আসা চলতে থাকে।’’ তাঁর দাবি, অনেক তৃণমূল কর্মী বিজেপিতে আছেন, আবার তৃণমূলেও কিছু বিজেপি কর্মী ঢুকে আছেন। এটা নতুন কিছু নয়।

TMC BJP Anupam Hazra Bolpur Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy