সেই যন্ত্র। নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়া শহরে ফের বাড়ল করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা। একই সঙ্গে জেলা জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যাও দু’শো ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘আরটিপিসিআর’ (রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ় চেন রিঅ্যাকশন) যন্ত্রে এ বার পুরুলিয়াতেও করোনা-পরীক্ষার কাজ শুরু হচ্ছে বলে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এত দিন এই যন্ত্রে পরীক্ষার জন্য পুরুলিয়া থেকে সমস্ত নমুনা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হত। পুরুলিয়াতে পরীক্ষা হলে আরও দ্রুত রিপোর্ট পাওয়া যাবে। ফলে, প্রশাসনেরও কিছুটা বাড়তি সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার বিকেল থেকে পুরুলিয়া শহরে ‘লকডাউন’ চলছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে ‘লকডাউন’-এর সময়সীমা। এ দিকে, বৃহস্পতিবারই পুরুলিয়া শহরে আরও চার জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বুধবার পর্যন্ত শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮। বৃহস্পতিবার সংক্রমণের হদিস মিলেছে পুরুলিয়া স্টেশন লাগোয়া চণ্ডী কর লেনের একটি আবাসনের এক বাসিন্দা, নর্থ লেক রোডের একটি হোটেলের এক কর্মীর এবং রণছোড়গলির দুই বাসিন্দার। তিনটি জায়গাকেই বাঁশ দিয়ে ঘিরে ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ করা হয়েছে।
প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, শহরে আক্রান্তের সংখ্যা এখন খাতায়-কলমে ৩০। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর বলেন, ‘‘শহরে এ দিন যে চার জনের সংক্রমণের হদিস মিলেছে, তার মধ্যে দু’জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিটের পরীক্ষায়। এই রিপোর্ট সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে আমরা দু’টি নমুনা ফের আরটিপিসিআর যন্ত্রে পরীক্ষা করব। তবে এই দুই আক্রান্তের বাড়ি ঘিরে কন্টেনমেন্ট জ়োন করা হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শহরে ‘লকডাউন’ শেষ হচ্ছে। তার আগে, বৃহস্পতিবার বিকেলে পুরসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। জানা গিয়েছে, বৈঠকে করোনা পরীক্ষার উপরে জোর দিতে বলা হয়েছে। এ দিকে, ‘লকডাউন’ উঠে গেলে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে তা নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে নতুন করে চার জনের সংক্রমিত হওয়ার খবরে। অনেকেই মনে করছেন, ‘লকডাউন’ না থাকলে সেই হামলে পড়া ভিড় ফিরে আসতে পারে। বৈঠকে ছিলেন পুরুলিয়ার পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা শহরের প্রাক্তন উপপুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি বিচার করে তখন এক বেলা করে লকডাউন করা যায় কি না, সেই প্রস্তাব আমরা প্রশাসনের কাছে দেব। তবে সবটাই নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপরে।’’
আজ, শুক্রবার থেকে পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে শুরু হচ্ছে ‘আরটিপিসিআর’ যন্ত্রে করোনা-পরীক্ষার কাজ। ওই ক্যাম্পাসের মেন বিল্ডিংয়ের পাঁচ তলার ল্যাবরেটরিতে যন্ত্রটি বসানো হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন পুরুলিয়াতে ‘ট্রু-ন্যাট’ যন্ত্রে নমুনা পরীক্ষা করা হত। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী জানান, আইসিএমআরের নির্দেশিকা মোতাবেক শুধু ‘নেগেটিভ’ রিপোর্টই ‘ট্রু-ন্যাট’ যন্ত্র থেকে নেওয়া যায়। কোনও নমুনা ‘পজিটিভ’ হলে ওই যন্ত্রে পরীক্ষা করার সময় বোঝা যায় বটে, তবে ‘পজিটিভ’ রিপোর্টের জন্য ‘আরটিপিসিআর’ যন্ত্রে পরীক্ষা করাতে হয়। অধ্যক্ষ জানান, বুধবার থেকেই এই যন্ত্রে ‘ট্রায়াল রান’ হিসেবে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া, ‘র্যাপিড আন্টিজেন কিট’-এও পরীক্ষা হচ্ছে। শুক্রবার থেকে প্রথমে ৫০টি করে পরীক্ষা হবে। ধাপে ধাপে আরও বাড়ানো হবে সেই সংখ্যা।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর বলেন, ‘‘এ বার আমরা চারটি উৎস থেকে পরীক্ষার রিপোর্ট পাব। আরটিপিসিআর, র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট এবং ট্রু-ন্যাটের পাশাপাশি, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকেও পরীক্ষার রিপোর্ট মিলবে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy