Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
coronavirus

জরুরি ওষুধ ‘অমিল’, সমস্যা জেলার কোভিড আক্রান্তদের

জেলার ওষুধ দোকানগুলি থেকে রাতারাতি গায়েব হয়ে গিয়েছে করোনা চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধও। টান রয়েছে জিঙ্ক ও ভিটামিন সি-রও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় 
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২১ ০৬:১৬
Share: Save:

করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাঁকুড়ার একটি নার্সিংহোমের মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন বছর বিয়াল্লিশের এক যুবক। শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক একটি ইঞ্জেকশনের ব্যবস্থা করতে বলেন রোগীর আত্মীয়দের। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দেন, কলকাতা ছাড়া আর কোথাও তা মিলবে না। তাতেও আবার দরকার, ‘ড্রাগ কন্ট্রোল’-এর ছাড়পত্রের। জেলা ড্রাগ কন্ট্রোলের অফিস থেকে ওষুধ কেনার ছাড়পত্র মেলার পরে কলকাতার ড্রাগ কন্ট্রোল অফিসের ছাড়পত্র পেতে পার হয়ে যায় ২৪ ঘণ্টার বেশি। ততক্ষণে কলকাতাতেও ওযুধের জোগান ফুরিয়েছে। আরও এক দিন অপেক্ষা করে ওযুধটি মিললেও বাঁচানো যায়নি ওই যুবককে।

বৃহস্পতিবার মাঝরাতে বাঁকুড়ার নার্সিংহোমে প্রাণ হারানো ওই যুবকের পরিবারের প্রশ্ন, “কেন করোনা পরিস্থিতিতে একটি জীবনদায়ী ওষুধের জন্য বাঁকুড়ার মানুষকে কলকাতার উপরে ভরসা করতে হবে?” একই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলেও। ‘রাজ্য কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরী বলেন, “ওই ওযুধটি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিক্রি হয় না। ড্রাগ কন্ট্রোল অফিসের তরফেই সরাসরি ওযুধ সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের চাহিদামতো সেখানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।” তবে ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের বাঁকুড়া রিজিওন্যাল ডেপুটি ডিরেক্টর জয়ন্তকুমার চৌধুরী বলেন, “ওই ওযুধটি জেলায় মজুদ রাখার বিষয়ে রাজ্য স্তরে আলোচনা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আলোচনা করছে।”

তবে শুধু ওই ওযুধই নয়, করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘রেমডিসিভির’-ও অমিল জেলায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওযুধটি ‘অ্যান্টিভাইরাল’ হিসেবে কাজে লাগে। পাশাপাশি, জেলার ওষুধ দোকানগুলি থেকে রাতারাতি গায়েব হয়ে গিয়েছে করোনা চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধও। টান রয়েছে জিঙ্ক ও ভিটামিন সি-রও।

এই পরিস্থিতিতে ‘প্রেসক্রিপশন’ হাতে শহরের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে ছুটে বেড়াচ্ছেন রোগীর পরিজনেরা। বাঁকুড়ার শহরের জুনবেদিয়ার এক বাসিন্দার কথায়, “ছেলে করোনায় আক্রান্ত। আপাতত বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে। তবে ওষুধ কোথাও পাচ্ছি না। অনেক কষ্টে এক পরিচিত ওষুধ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে অল্প ওষুধ পেয়েছি। তবে তাতে ওযুধের ‘কোর্স’ শেষ হবে না। খুবই চিন্তায় রয়েছি।” বাঁকুড়ার সতীঘাটের এক ওষুধ ব্যবসায়ী চন্দন নন্দী বলেন, “করোনা রোগীদের জন্য ওষুধগুলি চাহিদামতো পাচ্ছি না। কারণ, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছেই জোগান কম।”

শুধু শহর নয়, জেলার গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি কার্যত একই। ছাতনার খড়বনার ওষুধ ব্যবসায়ী দীনবন্ধু কুণ্ডুর কথায়, “দরকারি ওযুধগুলি চাহিদামতো কিনতে পারছি না। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও জানাচ্ছেন, জোগান শেষ। এ দিকে প্রতিদিন বহু মানুষ ওষুধের খোঁজ করতে আসছেন। গ্রামে না পেয়ে অনেকেই কষ্ট করে বাঁকুড়া শহরে ছুটছেন।”

জয়ন্তকুমারবাবুর অবশ্য দাবি, “করোনার চিকিৎসায় কাজে লাগা ওষুধগুলি খুবই কম পরিমাণে জেলায় আসছে। তবে একেবারেই মিলছে না, এমন পরিস্থিতি এখনও হয়নি। তবে জোগান বাড়াতে হবে। আমরা জেলার প্রতিটি পাইকারি ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছি, ওষুধগুলির বেশি বরাত দেওয়ার। অনেকেই দিয়েছেন। সেগুলি শীঘ্রই জেলায় এসে পড়বে।”

এ দিকে, কোভিড পরিস্থিতিতে অনেকেই ভিটামিন সি ও জিঙ্কের ওষুধ কিনছেন দোকান থেকে। সে ক্ষেত্রে ‘প্রেসক্রিপশন’ও লাগে না। তবে বাজারে জোগান বজায় রাখতে কড়া হচ্ছে ‘ড্রাগ কন্ট্রোল’। জয়ন্তকুমারবাবু বলেন, “সমস্ত ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এক সঙ্গে দু’পাতার বেশি কাউকেই ভিটামিন সি বা জিঙ্ক ট্যাবলেট যেন দেওয়া না হয়। বাজারে জোগান বজায় রাখতেই এটা জরুরি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE