ভয় দূর করিয়ে করোনা টিকা দিতে উদ্যোগী হল আদিবাসী গাঁওতা। গাঁওতার চেষ্টায় ও মহম্মদবাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহযোগিতায় শনিবার গিরিজোর সাঁওতাল উচ্চ বিদ্যালয়ে করোনা টিকাকরণের বিশেষ শিবির হয়। ভয় কাটাতে আদিবাসী গাঁওতার সভাপতি রবিন সরেন ও তাঁর পরিবার প্রথম টিকা নেন। তারপর সংগঠনের অন্য সদস্যদের টিকা দিয়ে ভয় দুর করা হয়। আর তারপরেই সকলেই এগিয়ে আসেন টিকা নিতে।
মহম্মদবাজার ব্লকের ভাঁড়কাটা পঞ্চায়েতের পাঁচামি সংলগ্ন প্রায় ৩৫টি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের বাসিন্দাদের টিকা নিয়ে নানা উদ্বেগ ছিল। সে কারণেই এতদিন টিকা থেকে দূরে ছিলেন এই এলাকার মানুষ। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই পাঁচামি সংলগ্ন প্রতিটি গ্রামে গিয়ে সচেতনতার প্রচার চালানো হয়েছে। সকলকেই বোঝানো হয়েছে টিকার উপকারিতা। তাতেও প্রথমে কোনও লাভ হয়নি। এই এলাকার সমস্ত মানুষই পাথর শিল্পাঞ্চলের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাছাড়াও এই এলাকায় শিক্ষার হারও অনেকটাই কম। তাই টিকা সংক্রান্ত নানা ভুয়ো আতঙ্কে বিশ্বাস করে তাঁরা টিকা নিতে চাইছিলেন না।
এরপরেই সেই ভয় কাটাতে এগিয়ে আসে আদিবাসী গাঁওতা। গাঁওতা পক্ষ থেকে প্রতিটি মানুষের বাড়িতে গিয়ে বোঝানো হয় টিকার উপকারিতা। বোঝানো হয়, করোনা থেকে বাঁচতে টিকা নেওয়া জরুরি। ধীরে ধীরে রাজি হন এলাকার মানুষ। এ দিন সকাল থেকেই শুরু হয় টিকাকরণ। এ দিন বিএমওএইচ সুরাইয়া খাতুনের উপস্থিতিতে বিকেল তিনটে পর্যন্ত ৮০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়। এছাড়াও আগামী দিনে বাকিদেরও টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজু মুর্মু বলেন, ‘‘আমরা এতদিন শুনেছিলাম টিকা নিলেই মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সেই জন্য এই এলাকার মানুষ টিকা নেয়নি। কিন্তু গাঁওতার পক্ষ থেকে সকলকে জানালে আমরা টিকা নিতে রাজি হয়েছি।’’ গণেশ মুর্মুর কথায়, ‘‘আমরা এতদিন ভুল বুঝেছিলাম। এখন আমরা জানতে পেরেছি টিকার উপকারিতা। তাই আমরা এ দিন টিকা নিলাম।’’
গাঁওতার সভাপতি রবিন সরেন বলেন, ‘‘এতদিন সরকারিভাবে বহু প্রচার চালানো হয় এই এলাকায়। তাতেও কেউ টিকা নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। সেই খবর আমরা জানতে পেরে এলাকার মানুষকে দায়িত্ব নিয়ে আমরা টিকার উপকারিতা বোঝাই। তারপরই তাঁরা সকলেই টিকা নিতে রাজি হন।’’ মহম্মদবাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধিকারিক সুরাইয়া খাতুন বলেন, ‘‘পাঁচামি এলাকায় প্রচার চালানোর পরেও টিকা নিতে অস্বীকার করছিলেন এলাকার মানুষ। তারপর ওই এলাকার আদিবাসী গাঁওতার পক্ষ থেকে এলাকার মানুষকে বোঝানো হয় এবং তাতে তারা রাজিও হন। প্রথম দিনেই ৮০০ জন মানুষের টিকাকরণ করা সম্ভব হয়েছে।’’