Advertisement
E-Paper

চালার উপর মিলল নিখোঁজ শিশুর ক্ষতবিক্ষত দেহ

চানাচুর কিনতে বেরিয়ে আর ঘরে ফেরেনি সে। ২৪ ঘণ্টা পরে ছ’বছরের ওই শিশুকন্যারই ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলল গ্রামের অদূরে একটি মাঠে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই শিশুর দেহ মিলেছে একটি সাব-মার্সিবল পাম্প হাউসের টিনের চালার উপরে। সোমবার রাতে পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েতের উত্তর শেহালাই গ্রামের ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ২০:৫০

চানাচুর কিনতে বেরিয়ে আর ঘরে ফেরেনি সে। ২৪ ঘণ্টা পরে ছ’বছরের ওই শিশুকন্যারই ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলল গ্রামের অদূরে একটি মাঠে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই শিশুর দেহ মিলেছে একটি সাব-মার্সিবল পাম্প হাউসের টিনের চালার উপরে। সোমবার রাতে পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েতের উত্তর শেহালাই গ্রামের ঘটনা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, স্বস্তিকা টুডু (৬) নামে ওই শিশুটিকে খুন করা হয়েছে। মঙ্গলবার নিহত শিশুর বাবা থানায় খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মৃতদেহটি উদ্ধার করে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। যে ভাবে মাত্র ছ’বছরের এক শিশুকে খুন করা হয়েছে, তাতে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বাসিন্দারা। এ দিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে এসডিপিও (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষ এবং জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার, দু’জনের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে সংসার শেহলাই গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীরাম টুডুর। এ দিন দুপুরে সিউড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, রবিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ গ্রামেরই একটি দোকান থেকে চানাচুর কিনতে গিয়েছিল প্রথম শ্রেণির ছাত্রী স্বস্তিকা। বহু ক্ষণ পরেও সে না ফেরায় তাঁরা মেয়ের খোঁজ শুরু করেন। কাঁদতে কাঁদতে লক্ষ্মীরামবাবু বলেন, ‘‘রাতে অনেক খুঁজেও মেয়ের কোনও হদস পাইনি। সকালে পাড়া-প্রতিবেশী এবং আশপাশের গ্রামে খবর দেওয়া হয়। সোমবার বিকেলে মেয়ের খোঁজ মেলে। গ্রামেরই পাশে মাঠের ধারে একটি একটি সাব-মার্সিবল পাম্প হাউসের টিনের চালার উপরে দেহটি তোলা ছিল।’’ খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পাড়ুই থানার পুলিশ সন্ধ্যার পরে এসে দেহটি উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, স্বস্তিকার মুখে এবং মাথায় ক্ষত রয়েছে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের তদন্ত শুরু হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ মাঠে গরু চরাতে গিয়ে টিনের চালায় থাকা দেহটি নজরে পড়ে গ্রামের কয়েক জনের। ওই সাব-মার্সিবল পাম্পের মালিক স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ ওরফে হরপ্রসাদ সিংহ। পেশায় হাতুড়ে চিকিৎসক বিকাশবাবু বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘ দিন ধরে বোলপুরের ত্রিশুলাপট্টিতে থাকি। মঙ্গলবার সকালে চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়ে এলাকার এক বাসিন্দার কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারি।’’ তাঁর দাবি, ওই পাম্পের ঘরটিতে তালা দেওয়া থাকে। চাবি তাঁর কাছেই থাকে। প্রয়োজনের সময়েই তালা খুলে কাজ হয়। এই সময় মাঠে-ঘাটে জল থাকায় ক’দিন ধরেই সাব-মার্সিবল বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান।

অন্য দিকে, মেয়ের খোঁজে রবিবার ওই দোকানেও গিয়েছিলেন লক্ষ্মীরামরা। স্বস্তিকা সেখানে চানাচুর কিনতে আসেনি বলেই দাবি করেছেন সনৎ কিস্কু নামে ওই দোকানদার। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘সকালে ওর নিখোঁজ হওয়ার খবর জানতে পেরে লক্ষ্মীরাম মামা ও মামির কাছে ঘটনার কথা জানতে চাই। তখনই ওঁ‌রা বলে, আমার দোকানে চানাচুর নেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল স্বস্তিকা। কিন্তু, রবিবার বোন আমার দোকানে আসেইনি। ওইটুকু শিশু কার কী অপরাধ করেছে যে তাকে এ ভাবে খুন করা হল!’’ তিনি এবং বিকাশবাবু, দু’জনেই দোষীর উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।

এ দিকে, খুনের ঘটনার কোনও কিনারা না হওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এলাকার আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। বার বার জানালেও কোনও আমল দেয়নি পুলিশ। তাঁদের ক্ষোভ, দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পরেও কী কারণে খুন, তা নিয়েই ধন্দে রয়েছে পুলিশ। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় পুলিশি নজরদারি নেই বললেই চলে। এমনিতেই চুরি, ছিনতাই নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার উপর রাজনৈতিক কারণে এলাকায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে। কিন্তু, পাড়ুই থানার পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। কসবা পঞ্চায়েতের ওই এলাকার সদস্য কমল হেমব্রমও বলেন, “কী ভাবে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটল, পুলিশ তার দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করুক।”

Panrui Dead body bolpur birbhum police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy