Advertisement
E-Paper

হোম-স্টে’র ঘরে ঝুলন্ত দেহ

একটি হোম-স্টে থেকে প্রাক্তন কেয়ারটেকারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল শান্তিনিকেতনে। সোমবার স্থানীয় ফুলডাঙা এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম অমিত দাস (৩৩)। বাড়ি শান্তিনিকেতনেরই রতনপল্লির ডেইলি ব্রেড রোডে। পুলিশ আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে, সংবাদমাধ্যমের কাছে মৃতের পরিবার অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পনা করেই ওই যুবককে খুন করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০০:০৫
তদন্তে পুলিশ কুকুরের দাবিতে পুলিশকে ঘিরে তর্ক। সোমবার ফুলডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

তদন্তে পুলিশ কুকুরের দাবিতে পুলিশকে ঘিরে তর্ক। সোমবার ফুলডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

একটি হোম-স্টে থেকে প্রাক্তন কেয়ারটেকারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল শান্তিনিকেতনে। সোমবার স্থানীয় ফুলডাঙা এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম অমিত দাস (৩৩)। বাড়ি শান্তিনিকেতনেরই রতনপল্লির ডেইলি ব্রেড রোডে। পুলিশ আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে, সংবাদমাধ্যমের কাছে মৃতের পরিবার অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পনা করেই ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। তবে, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মর্মে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা ঘটনার তদন্তে পুলিশ-কুকুরের দাবি জানিয়ে দেহ উদ্ধার করতে বাধাও দেয়। পরে নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিলে পুলিশকে মৃতের পরিবার দেহ উদ্ধার করতে দেয়। এ দিনই দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। এসডিপিও (‌বোলপুর) ও পুলিশ সুপার, কেউ-ই ফোন ধরেননি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরে শান্তিনিকেতনে আসা বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ওই হোম-স্টেতে অমিত দাস কেয়ারটেকারের কাজ করতেন। হোম-স্টে মালিকের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ায় বছর দু’য়েক আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। তিনতলা একটি মূল ভবন ছাড়াও ওই চত্বরে অতিরিক্ত দু’টি ঘরে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কেয়ারটেকারের থাকার জন্য রয়েছে একটি ছোট আউটহাউস। হোম-স্টের বর্তমান কেয়ারটেকার বিজয় ঘোষ জানান, রবিবার মূল ভবনে কোনও অতিথি না থাকলেও চত্বরে থাকা অন্য ঘরগুলিতে অতিথি ছিল। তাঁদের রাতের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা অবশ্য মূল ভবনের দোতলায় করা হয়েছিল। বিজয়বাবুর দাবি, ‘‘খাওয়া-দাওয়া মিটতে ঘরে তালা দিতে যাই। তখনই নীচে নির্দিষ্ট জায়গায় থাকা চাবির গোছা খুঁজে পাইনি। রাত হয়ে গিয়েছিল। শেষে উপায় না দেখে তখনকার মতো আউট হাউসের একটি তালা মূল ভবনের কোলাপসিবল গেটে লাগাই।’’

কেয়ারটেকার আরও জানান, এ দিন সকালে তিনি কোলাপসিবল গেটের তালা খুলতে গিয়ে দেখেন ভেতর থেকে আরও একটি তালা দেওয়া রয়েছে। বিজয়বাবু ফোনে ঘটনার কথা হোম-স্টের মালিক কৃষ্ণ দে-কে জানান। কৃষ্ণবাবু শান্তিনিকেতনের বাইরে থাকায় তাঁর বন্ধু তথা স্থানীয় বাসিন্দা শান্তনু শতপথীকে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেন। শান্তনুবাবু বলেন, “কৃষ্ণবাবু ফোনে ঘটনার কথা জানানোর পরে আমি হোম-স্টেতে যাই। কেয়ারটেকার এবং অন্য কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মূল ভবনের চারদিক ঘুরে দেখি। একতলার একটি ঘরের পাশ থেকে আমরা এসি চলার শব্দ শুনতে পাই। ঘরের জানালার কাছে যেতে টিভির শব্দ কানে আসে। লাঠি দিয়ে জানালা খুলতেই দেখি ঘরের ফ্যানের সিলিং থেকে পুরনো ওই কেয়ারটেকারের দেহ ঝুলছে!’’ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তাঁরা থানায় খবর দেন। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্র থেকে পুলিশও পৌঁছে যায়। তারাই প্রথম কোলাপসিবল গেটের তালা ও ভেতরের ঘরের দরজার ছিটকিনি ভেঙে ভেতরে ঢোকে।

এ দিকে, ঘটনার কথা চাউর হতেই আশেপাশের লোকজন জড়ো হতে শুরু করে। এ দিন সকালে ওই হোম-স্টের ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, ফ্যানের সিলিং থেকে প্যান্ট-শার্ট পরা অমিত দাসের দেহ তখনও ঝুলছে। দেহের নীচে খাটের উপর উল্টে পড়ে আছে বেতের মোড়া। পাশাপাশি লাগানো দু’টি খাটের অন্যটিতে একটি নতুন কাঁথা স্টিচের ওড়না (যার ‘প্রাইস ট্যাগ’ তখনও লাগানো ছিল) পড়ে রয়েছে। এসি চলছে। এলসিডি টিভি চলছে। ড্রেসিং টেবলে একাধিক ব্র্যান্ডের দামী মদের বোতল। কয়েকটি খালি, কয়েকটি আধভর্তি। পাশেই পড়ে রয়েছে একটি ছেঁড়া না শেষ হওয়া বাদামের প্যাকেট। এ দিকে, ঘটনার খবর শুনেই ছুটে আসেন মৃতের পরিবারের লোক জন। তাঁরাই ঘটনার তদন্তে প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে আসার দাবিতে পুলিশকে দেহ উদ্ধারে বাধা দেয়। তীব্র বাদানুবাদের পরে পুলিশের কাছ থেকে প্রযোজনীয় আশ্বাস পেয়ে তাঁরা শান্ত হন। এর পরেই বেলা ১২টা নাগাদ পুলিশ দেহ তুলে বোলপুর হাসপাতালে পাঠায়।

প্রাক্তন ওই কেয়ারটেকারকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ নিহতের ভাই সমীর দাসের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা কোনও ভাবেই আত্মহত্যার ঘটনা নয়। ওই হোম-স্টের সঙ্গে দাদার দীর্ঘ দিন ধরে কোনও সম্পর্ক ছিল না। পাহারাদার, কেয়ারটেকারের নজর এড়িয়ে দাদা কীভাবে বাড়ির ভিতরে ঢুকল? গোটা ব্যাপারটাই আমাদের কাছে খুব সন্দেহজনক ঠেকছে।’’ কেন খুন করা হবে তাঁর ভাইকে? সমীরবাবুর দাবি, ‘‘বছর তিনেক আগে দাদা হোম-স্টের মালিকের স্ত্রীর সঙ্গে একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। ওই আক্রোশ থেকেই এই খুন বলে আমরা মনে করছি।’’ চিকিৎসার কারণে গত একমাস ধরে শান্তিনিকেতনের বাইরে রয়েছেন হোম-স্টে মালিক, ইউএনএ-র প্রাক্তন আধিকারিক কৃষ্ণ দে। তিনি মৃতের পরিবারের ওই বক্তব্য মানতে চাননি। এ দিন কলকাতা থেকে ফোনে কৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কিন্তু, খুনের যে অভিযোগ উঠছে, তা সম্পূর্ণ ভাবে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, কেয়ারটেকারের কাজ চলে যাওয়ার পর থেকে মৃত যুবকই তাঁদের নানা ভাবে হুমকি দিতেন। কৃষ্ণবাবুর অভিযোগ, ‘‘ওই যুবক আমাদের ব্ল্যাকমেল করেছেন। প্রতিনিয়ত ফোন ও এসএমএস করে হুমকি দিয়েছেন। আমাদের ফাঁসানোর জন্য বার কয়েক আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে। এটা ওঁর পরিবার এবং এলাকার মানুষও জানেন। আমরা গোটা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।’’

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের কাছ থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। তবে, একটি মোবাইল মিলেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

shantiniketan murder shantiniketan dead body home stay caretaker dead body
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy