Advertisement
E-Paper

দুবরাজপুরে জ্বর নিল ছাত্রের প্রাণ

রাজার বাড়ি দুবরাজপুর পুর এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডটি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া। ঘটনা হল, বীরভূম জেলায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দুবরাজপুর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডেই। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার রাতে জ্বরে আক্রান্ত হয় দুবরাজপুর আরবিএসডি স্কুলের নবন শ্রেণির ছাত্র রাজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪২
মৃত: শেখ রাজার পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

মৃত: শেখ রাজার পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গি এই তল্লাটে থাবা বসিয়েছে বেশ কিছুদিন হল। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই অবস্থায় বুধবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুবরাজপুরের এক স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনা ওই রোগ নিয়ে আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। যদিও শেখ রাজা (১৪) নামে ওই স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতেই, তা এখনও নিশ্চিত করেনি স্বাস্থ্য দফতর।

রাজার বাড়ি দুবরাজপুর পুর এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডটি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া। ঘটনা হল, বীরভূম জেলায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দুবরাজপুর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডেই। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার রাতে জ্বরে আক্রান্ত হয় দুবরাজপুর আরবিএসডি স্কুলের নবন শ্রেণির ছাত্র রাজ। সঙ্গে সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা। সোমবারই এলাকার এক জন চিকিৎসককে দেখালে তিনি স্থানীয় প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে রাজের রক্ত পরীক্ষা করান। রিপোর্ট দেখে রাজের ডেঙ্গি হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশও করে ওই চিকিৎসক তাকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

সেই মতো সোমবার রাতে দুবরাজপুর গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছুঁয়ে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে শেখ রাজকে ভর্তি করায় পরিবার। রাজের বাবা শেখ কিবরিয়া এবং মা জাহানারা বিবি জানাচ্ছেন, বুধবার সকালে ছেলের বাড়াবাড়ি হলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেয় সিউড়ি হাসপাতাল। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী, বুধবার রাত ৯ টা ৫৭ মিনিট নাগাদ রাজকে ভর্তি করানো হয়েছিল। ১১টা ৫ মিনিটে সে মারা যায়। দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডের দাবি, ‘‘সিউড়ি হাসপাতাল রেফার করার সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেটিকে বর্ধমানে নিয়ে যাওয়া হয় নি। কী করবে বুঝতে না পরে ওকে দুবরাজপুরের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল পরিবারটি। বাড়িতে এসে খিঁচুনি শুরু হওয়ায় পুরসভার তরফেই সন্ধ্যায় অসুস্থ ছেলেটিকে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়।’’

রাজের মৃত্যু উদ্বেগ বাড়িয়েছে পুরসভার। এত দিন আক্রান্তের সিংহভাগই ছিল পাশের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। গত কয়েক দিনে ৬ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কয়ে কজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু, এক স্কুলপড়ুয়ার এ ভাবে মৃত্যুর খবর এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আক্রান্তের সংখ্যা বেশি থাকায় পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ডেঙ্গি রোগ সচেতনতা বা প্রতিরোধে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে যে সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে, তার ছিঁটেফোঁটাও বাকি ওয়ার্ডগুলিতে নেই। ফলে, রোগ ছড়াচ্ছে এক এলাকা থেকে অন্যত্র। অনেকের আশঙ্কা, যে ভাবে দক্ষিণ দমদম পুরসভার মধুগড়ে চলতি বছর পরের পর এক ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে, মৃত্যুও হচ্ছে একাধিক জনের, দুবরাজপুরেও সেই অবস্থা না হয়!

শেখ রাজের মৃত্যুর পরে অবশ্য এলাকায় ব্লিচিং, মশা মারার স্প্রে ছড়ানো হচ্ছে। আগে কেন এ সব করা হয়নি, প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। সমালোচনার মুখে পুরপ্রধানের আশ্বাস, ডেঙ্গি রোধে আরও সচেষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করবে।

তবে এখনই ওই ছাত্রের মৃত্যুকে ডেঙ্গি মৃত্যু না বলে আজানা জ্বরে মৃত্যু বলছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘‘ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষা পজিটিভ ঠিকই। তবে এই কিশোরের যে যে উপসর্গ ছিল, তার সঙ্গে ডেঙ্গির উপসর্গের ক্লিনিক্যালি মিল নেই। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনে আমরা ওর সিরাম স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠাচ্ছি।’’

এত দিন জেলা স্বাস্থ্য দফতর বলে এসেছে, ডেঙ্গি নির্ণায়ক একমাত্র পরীক্ষা ম্যাক অ্যালাইজা। এমনকী, রক্তপরীক্ষায় এনএস-১ পজিটিভ এলেও স্বাস্থ্য দফতর তাকে ডেঙ্গি বলে মানতে রাজি নয়। অথচ সিউড়ি জেলা হাসপাতালে রাজের রক্তের ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষা পজিটিভ থাকা সত্ত্বেও কেন একে ডেঙ্গিজনিত মৃত্যু বলা হচ্ছে না, সে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন হিমাদ্রিবাবু। বর্ধমান মেডিক্যালের ডেথ সার্টিফিকেটেও মৃত্যুর কারণ হিসাবে লেখা হয়েছে, খিঁচুনি জনিত কারণে শ্বাস বন্ধ।

চিকিৎসকদের একাংশের অবশ্য মত, ডেঙ্গি মত্যু না বলে আসলে কিছুটা সময় নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।

Dengue Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy