Advertisement
E-Paper

এক ঝড়েই নষ্ট ৫ কোটির ফসল

হাওয়া অফিসের হিসাবে ঝড়ের স্থায়ীত্ব ছিল দু’মিনিট। গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৪ কিলোমিটার। অথচ রবিবার দুপুরের এই মিনিট দু’য়েকের ঝড়ই বাঁকুড়ার একের পর এক গ্রামের চিত্রটা বদলে দিয়েছে। কারও মাথা গোঁজার ঠাঁই উড়েছে, কারও বা পেটে ভাত জোগানোর একমাত্র সম্বল নষ্ট করে দিয়েছে। ঝড়ের ২৪ ঘণ্টা পরেও তাই হা-হুতাশ বাঁকুড়া জেলার বহু মানুষের ঘরে ঘরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০১:৪১
ফসলের পাশাপাশি বাঁকুড়ায় ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ির। মাথায় হাত সকলের। বিষ্ণুপুরে অবন্তিকা গ্রামে বাড়ির উপরে উল্টে পড়েছে গাছ।

ফসলের পাশাপাশি বাঁকুড়ায় ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ির। মাথায় হাত সকলের। বিষ্ণুপুরে অবন্তিকা গ্রামে বাড়ির উপরে উল্টে পড়েছে গাছ।

হাওয়া অফিসের হিসাবে ঝড়ের স্থায়ীত্ব ছিল দু’মিনিট। গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৪ কিলোমিটার। অথচ রবিবার দুপুরের এই মিনিট দু’য়েকের ঝড়ই বাঁকুড়ার একের পর এক গ্রামের চিত্রটা বদলে দিয়েছে। কারও মাথা গোঁজার ঠাঁই উড়েছে, কারও বা পেটে ভাত জোগানোর একমাত্র সম্বল নষ্ট করে দিয়েছে। ঝড়ের ২৪ ঘণ্টা পরেও তাই হা-হুতাশ বাঁকুড়া জেলার বহু মানুষের ঘরে ঘরে।

জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, রবিবারের ঝড়ে বাঁকুড়া ১, ওন্দা, খাতড়া, সারেঙ্গা, পাত্রসায়র, বিষ্ণুপুরের মতো ব্লকগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৬১টি গ্রামে প্রায় ৯ হাজার মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ৪৬৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ২৩৪২টি বাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। জেলা জুড়ে ২৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। রবিবারের ঝড়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায় কয়েশো বিদ্যুতের খুঁটিও ভেঙে পড়েছে। যার জেরে জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। ঝড়ের পরের দিন সোমবারও জেলার নানা প্রান্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।

কেবল মাত্র ওন্দা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামেই ঝড়ের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় দেড় হাজার ঘরবাড়ি। কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ৬০০টি পান বরজ ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। এ দিন সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ভিড়ে ঠাসা ছিল ওন্দা ব্লক অফিস চত্বর। সোমবার ওন্দা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, প্রায় প্রতিটি বাড়িই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িরই খড় বা টিনের চালা এবং মাটির দেওয়াল। গ্রামে নিকাশি ব্যবস্থা বলতে কিছুই নেই। গোটা গ্রাম জুড়ে তাই জমা জল ও থকথকে কাদা। গ্রামে ঢোকার রাস্তার উপরেই শিকড়-সহ উপড়ে পড়ে রয়েছে আস্ত একটি তেঁতুল গাছ। যার জেরে গ্রামে ঢোকার রাস্তা কার্যত বন্ধ। ওই গাছের নীচেই চাপা পড়ে গিয়েছিল স্থানীয় শম্ভু রায়ের রিকশা। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অবস্থায় কোনও রকমে গ্রামের লোকজন রিকশাটিকে বের করেছেন। শম্ভুবাবু বলছিলেন, “এটাই আমার রুটি রুজির একমাত্র সম্বল। বছর খানেক আগে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছিলাম। এ বার আমি কী করব!” রিকশা সারাতে যে টাকার প্রয়োজন, তা কোথা থেকে আদায় হবে ভেবে কুল পাচ্ছেন না তিনি।

তছনছ হয়ে গিয়েছে ওই গ্রামেরই মানিকলাল সিংহ উচ্চ বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলের চালাঘর।

এই গ্রামের বাসিন্দা গেড়ু বাউরির বাড়ির খড়ের চালা ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। ধস নেমেছে মাটির দেওয়ালেও। ঝড়ের পরে কোনও মতে পড়শির বাড়ির চাতালে বৌ বাচ্চা নিয়ে রাত কাটিয়েছেন। এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গেড়ূবাবুর স্ত্রী সুখী বাউরি কোলে ১০ মাসের শিশুকে নিয়ে বাড়ির উঠোনে রান্না করছেন। সুখীদেবী বললেন, “চালা উড়ে যেতেই বাচ্চাগুলোকে নিয়ে ছুটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রাণে বাঁচলাম। ভয়ে কাঁপছিলাম। মাথা গোঁজার ঠাঁইটাও চলে গেল আমাদের।’’ এ দিন সকালে গ্রামবাসীদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ভবানী মোদক। তাঁর কাছে ত্রাণ সামগ্রীর জন্য দাবি জানান গ্রামবাসীরা। ভবানীবাবু তাঁদের ব্লক অফিসে যেতে বলেন। তাঁর কথায়, “গোটা ব্লক জুড়েই ধ্বংসের ছবি। ব্লকের তরফে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ত্রিপল পাঠানো হচ্ছে। ব্লক থেকে সরাসরি মানুষের হাতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে।’’ একই ছবি ওন্দার বিক্রমপুর, কালীসেন, কুমারডাঙার মতো ওন্দা ব্লকের বহু গ্রামেই। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তিল চাষের। বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে বোরো ধানেরও।

বিষ্ণুপুর ব্লকেও শতাধিক বাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের দাপটে বিষ্ণুপুর-সহ গোটা ব্লকে উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছ। ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশে বিদ্যুৎ ছিল না সোমবার দুপুর পর্যন্ত। শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের যমুনাপাড়ার একটি বিদ্যুতের খুঁটি রবিবারই ভেঙে পড়েছিল। তা মেরামত করে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে এ দিন বিকেল গড়িয়ে যায়। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় দিনভর জলকষ্টে ভুগতে হয়েছে এলাকার মানুষকে। এখানে অনেক তাঁতশিল্পীর বসবাস। তাঁরাও কাজ করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট বানিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা তৈরির কাজ হয়েছে। তাঁদের যাবতীয় প্রশাসনিক সাহায্য করা হবে। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “জেলা জুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা পরিষদের সদস্যদের এলাকার রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছি। সেই রিপোর্ট নিয়ে আমরা বৈঠকে বসব। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলির নামের তালিকা তৈরি করে তাঁদের সরকারি প্রকল্পে বাড়ি বানিয়ে দেবার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করব আমরা।’’

সোমবার ছবি দু’টি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

5 crore crop damaged bankura devastating storm bankura storm bankura crop and property damaged
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy