Advertisement
E-Paper

দেহ উদ্ধারেই আট ঘণ্টা

রেল লাইনের ধারে পড়ে আছে ট্রেনে কাটা দেহ। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেই দেহ আগলে পড়ে রইলেন মৃতের আত্মীয়-পরিজন। সেই দেহ উদ্ধার করা নিয়ে রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে চলল দীর্ঘ টানাপড়েন। শেষমেশ প্রায় আট ঘণ্টা পরে দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠানোর ব্যবস্থা করে রেল পুলিশের একটি দল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০২:১৬
অরক্ষিত রেলগেট। ঝাড়খণ্ডের পিনারগোড়িয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

অরক্ষিত রেলগেট। ঝাড়খণ্ডের পিনারগোড়িয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

রেল লাইনের ধারে পড়ে আছে ট্রেনে কাটা দেহ। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেই দেহ আগলে পড়ে রইলেন মৃতের আত্মীয়-পরিজন। সেই দেহ উদ্ধার করা নিয়ে রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে চলল দীর্ঘ টানাপড়েন। শেষমেশ প্রায় আট ঘণ্টা পরে দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠানোর ব্যবস্থা করে রেল পুলিশের একটি দল।

রবিবার পূর্ব রেলের রামপুরহাট-জসিডি (ভায়া দুমকা) লাইনে এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকলেন রামপুরহাট ও আদলপাহাড়ি হল্ট স্টেশনের মাঝে থাকা রামপুরহাট থানার মল্লিকপুর এলাকার মানুষ। যে ঘটনার পরে আরও এক বার প্রশ্নের মুখে রেলের পরিকাঠামো।

রেল পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ ঝাড়খণ্ডের বড়পলাশি থেকে রামপুরহাটগামী ডাউন ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হয় রামপুরহাটের কুশুম্বা গ্রামের মাঝবয়সী ব্যক্তি নিবারণ লেটের (৪৮)। পাঁচ কিলোমিটার দূরে থাকা রামপুরহাট স্টেশন থেকে এসে রাত ১২টা নাগাদ মৃতদেহটি উদ্ধার করে রেল পুলিশ। কিন্তু, কেন আট ঘণ্টা লেগে গেল ওই দেহ উদ্ধারে? সদুত্তর মিলছে না রেল কর্তাদের কাছ থেকে। তারই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, মৃত্যুর বদলে কেউ জখম হয়ে থাকলেও কি একই ঘটনা ঘটত? উদ্ধার হওয়ার আগে যদি চিকিৎসা না পেয়ে কোনও ব্যক্তি মারা যেতেন, সেই মৃত্যুর দায় কে নিত? এখানেই উঠে আসছে রেলের পরিকাঠামো এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের বেহাল ছবিটি।

ঘটনা হল, ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৪ সালে শেষ হয় পূর্ব রেলের দুমকা, দেওঘর স্টেশন হয়ে রামপুরহাট–জসিডি রেললাইনের কাজ। প্রথম থেকে অবশ্য একটি লাইনে একটিই ট্রেন যাতায়াত করছে। এবং সে ভাবে স্টেশনের পরিচিত চেহারা আজও পায়নি আদলপাহাড়ি হল্ট, পিনারগড়িয়া, হরিণশিঙা, শিকারিপাড়ার মতো জায়গাগুলি। রবিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি হওয়ার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোকেই দুষছেন রামপুরহাট স্টেশনের এরিয়া ম্যানেজার মোহিতকুমার বিশ্বাস। তিনি জানান, ওই রেললাইনে এখনও সিগন্যালিং ব্যবস্থার কাজ শেষ হয়নি। তা সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই ওই সমস্ত হল্টগুলিকে (এক মিনিট করে স্টপ দেওয়া হয়) স্টেশনে রূপান্তরিত হবে। এখনও পর্যন্ত তা না হওয়ায় ওই হল্ট স্টেশনগুলিতে এখনও স্টেশন ম্যানেজার নিয়োগ হয়নি। কোনও বুকিং ও টিকিট কাউন্টারও খোলা হয়নি। সব থেকে বড় কথা, ওই সব স্টেশনে রেল পুলিশের কাজ করার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কোনও নোটিফিকেশনও হয়নি। মোহিতবাবুর দাবি, ‘‘পরিকাঠামোর অভাব থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে যাত্রীদের চাহিদার জন্য ট্রেন চালু রাখতে হয়। দুমকা থেকে রামপুরহাট লাইনে টিকিটের চাহিদা চালু আছে। পাশাপাশি রামপুরহাট-জসিডি রেল লাইনের মধ্যে বেশ কিছু মাওবাদী প্রভাবিত অনুন্নত এলাকা পড়ে। সেখানে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে লাইনের একমাত্র ট্রেনটি চালু রাখা হয়েছে।’’

অভিযোগ, পরিকাঠামোর এই গলদই রবিবারের ঘটনায় রেলের বিভিন্ন দফতরের কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের দিকটি সামনে এনে দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, রেল কর্মী বা রেলের চালকের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলের কাছে থাকা স্টেশন ম্যানেজার একটি মেমো তৈরি করেন। তার পরে দেহটি তোলার জন্য রেল পুলিশকে খবর দেয়। প্রয়োজনীয় লোকেদের এনে দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায় রেল পুলিশ। মৃতের পরিজনদের দাবি, রবিবারের ঘটনায় খবর মেলার পরেও বিষয়টি কার এক্তিয়ারে পড়ে তা নিয়েই শুরু হয়ে যায় স্থানীয় থানা, রেল পুলিশ ও দমকল বিভাগের মধ্যে বিস্তর টানাপড়েন। আর তার জেরেই মৃতদেহ উদ্ধারে আট ঘণ্টা লেগে যায় বলে অভিযোগ। অথচ যেখানে নিবারণবাবুর দেহ ছিল, তার থেকে নিকটবর্তী বড় স্টেশন রামপুরহাটের দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। লাইনের দু’প্রান্তে (মল্লিকপুর ও কুশুম্বা-অনন্তপুর) দু’কিলোমিটারের মধ্যে থাকেন দু’জন গেটম্যান। তার পরেও দেহ যখন লাইন থেকে তোলা হয়, রাত তখন ১২টা।

রামপুরহাটের স্টেশন ম্যানেজার পুষ্কর কুমারের যদিও দাবি, রবিবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ এক গেটম্যানের কাছ থেকে প্রথম ঘটনার খবর আসে। তার পরেই তিনি রেল পুলিশকে খবর দেন। অন্য দিকে, রেল পুলিশের সাঁইথিয়া থানার ওসি বিকাশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই লাইনে কাজের জন্য এখনও নোটিফিকেশন হয়নি। ওই এলাকায় রেল পুলিশের কাজ করার কথা নয়। তবু স্টেশন ম্যানেজারের থেকে মেমো পেতেই কোনও রকম টানাপড়েন না করেই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই।” সাঁইথিয়া থেকে ডোম এবং রামপুরহাট থানা থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করতে যেটুকু সময় লেগেছে। তার পরেই দেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশ।

Rampurhat Delay Body recovery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy