Advertisement
E-Paper

নিকাশি বন্ধ নির্মাণে, দায় নিয়ে তর্জা

বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে একের পর এক গড়ে ওঠা বাড়িগুলি কতটা নিয়ম মেনে গড়া হয়েছে, সেটা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। খোদ সেচ মন্ত্রীও এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০১:৪১
ঘিঞ্জি: বাঁকুড়া ২ ব্লকের পলাশতলা এলাকায় এ ভাবেই ক্রমশ বেড়ে উঠছে বসতি। নেই নিকাশি। নিজস্ব চিত্র

ঘিঞ্জি: বাঁকুড়া ২ ব্লকের পলাশতলা এলাকায় এ ভাবেই ক্রমশ বেড়ে উঠছে বসতি। নেই নিকাশি। নিজস্ব চিত্র

জোড়ের জলের তোড়ে আস্ত একটা দোতলা বাড়ি কাঠামো-সহ পড়ে গেল! সোমবার থেকেই বাঁকুড়া শহরের জুনবেদিয়া এলাকার ওই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখে আঁতকে উঠছেন অনেকে। তবে সেই সমস্ত ছাপিয়ে গোটা ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে একের পর এক গড়ে ওঠা বাড়িগুলি কতটা নিয়ম মেনে গড়া হয়েছে, সেটা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। খোদ সেচ মন্ত্রীও এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জুনবেদিয়ার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ভেঙে পড়া বাড়িটি খালের গায়ে গড়ে উঠেছিল। ওই খাল দিয়ে জোড়ের জল পার হয়। গত কয়েক বছরে এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ওঠায় জোড়ের জল বেরোতে বাধা পাচ্ছে। তাতেই এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যদিও ভেঙে পড়া বাড়িটির মালিক সুধাংশু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, তিনি পঞ্চায়েতের অনুমতি নিয়ে নিয়মকানুন মেনে বাড়ি বানিয়েছিলেন। জুনবেদিয়া পঞ্চায়েত জানিয়েছে, জোড়ের জল যাওয়ার খাল এ বার সরেজমিন দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে শুধু জুনবেদিয়ার ওই এলাকাটুকু নয়, সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাচ্ছেন অন্য বাসিন্দারাও। বাঁকুড়া শহর ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে গন্ধেশ্বরী নদী। স্থানীয় জলাশয় বা জোড়ের উপচে পড়া জল গিয়ে পড়ে সেখানে। অভিযোগ, জল যাওয়ার পথ আটকে গজিয়ে উঠছে বাড়ি। এলাকার বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘কোনও রকম পরিকল্পনা ছাড়াই, খতিয়ে না দেখে পঞ্চায়েত বাড়ি বানানোর অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে। আর তার ফলেই এলাকা ডুবছে।’’

গত কয়েক বছরে বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকাগুলির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। একের পর এক পল্লি গড়ে উঠেছে। ধূ-ধূ ফাঁকা মাঠগুলিতে সারি সারি বাড়ি গড়ে উঠেছে। শ্মশান সংলগ্ন এলাকাও ভরে গিয়েছে বাড়িতে। তবে অধিকাংশ এলাকাতেই পরিকাঠামো নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। নতুন পল্লিগুলির বাসিন্দাদের অভিযোগ, জল নিকাশির কোনও ব্যবস্থাই নেই সেখানে। অনেক জায়গাতে নেই রাস্তাও। গত কয়েক বছরে টানা বৃষ্টি হলেই প্লাবিত হচ্ছে বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকাগুলি। অনেকেই আঙুল তুলছেন গন্ধেশ্বরী লাগোয়া জমিতে গড়ে ওঠা বা়ড়িঘরের দিকে।

দায় কার? শুরু হয়েছে তর্জা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ দুষছেন পঞ্চায়েতকে। পঞ্চায়েতের বক্তব্য, শ্রেণি পরিবর্তন করে কোনও জমিকে বাস্তু ঘোষণা করার আগে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরকেই সতর্ক থাকতে হয়। একটি পঞ্চায়েতের প্রধান বলেন, “আমরা জায়গার কাগজপত্র যাচাই করে বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা দেখেই অনুমতি দিই। কোনও ব্যক্তি যদি বাস্তু জমিতে ঘর করতে চান তাহলে তাঁকে অনুমতি না দেওয়ার তো কোনও কারণ নেই। জমিটি বাস্তু বলে রেকর্ড করার আগে ভূমি রাজস্ব দফতরের খতিয়ে দেখা দরকার।”

জেলার ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের এক আধিকারিকের আবার বক্তব্য, “জলা জমি ছাড়া বাকি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার জন্য আমরা অনুমতি দিয়ে থাকি। সে ক্ষেত্রে দফতরের পরিদর্শক ওই এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে আসেন। শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি দিলেও আমরা তো বাড়ি বানানোর অনুমতি দিই না।”

তা হলে? বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) সব্যসাচী সরকার বলেন, “জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি পেলেই কেউ যে বাড়ি বানাতে পারেন, এমনটা নয়। বাড়ি বানাতে গেলে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা পুরসভার অনুমতি লাগে। ফলে অনুমতি দেওয়ার আগে জায়গাটি বাড়ি বানানোর উপযুক্ত কি না, স্থানীয় স্তরেই তা দেখে নেওয়া দরকার।”

জল নিকাশির পথে কোনও ভাবেই বাড়ি বানানোর অনুমতি দেওয়া উচিত নয় বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “বাড়ি বানানোর অনুমতি দেওয়ার আগে যাতে পঞ্চায়েতগুলি এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসে, সেই ব্যাপারে সতর্ক করেছি। পঞ্চায়েত প্রধানদের বলেছি, আগামী দিনে যাতে এই ধরনের ভুল না হয়।’’

Illegal Constructions Drainage System
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy