Advertisement
E-Paper

ক্ষোভের আঁচ পেলেন রাজ্য নেতা

সায়ন্তনবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কোনও বিক্ষোভ আমার চোখে পড়েনি। জেলার সমস্ত এলাকারই প্রতিনিধি বৈঠকে ছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২১
ক্ষোভ: ভিতরে নেতারা ব্যস্ত বৈঠকে। বাইরে চলছে তাঁদের বিরুদ্ধে স্লোগান। রবিবার হুটমুড়ায়। নিজস্ব িচত্র

ক্ষোভ: ভিতরে নেতারা ব্যস্ত বৈঠকে। বাইরে চলছে তাঁদের বিরুদ্ধে স্লোগান। রবিবার হুটমুড়ায়। নিজস্ব িচত্র

কলকাতায় বসে বিজেপি-র রাজ্য নেতারা শুনে আসছিলেন, পুরুলিয়ায় দলে প্রবল অশান্তি শুরু হয়েছে। তাঁদের নির্দেশে তিন নেতাকে সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু তাতে যে উল্টে ‘ঘি’ পড়েছে, রবিবার দলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু পুরুলিয়ায় বৈঠক করতে আসার পরে, তা বুঝিয়ে দিলেন দলের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে পুরুলিয়া ২ ব্লকের হুটমুড়া স্কুল সংলগ্ন কমিউনিটি হলে যখন সায়ন্তনবাবু বৈঠক করছেন, সেই সময় বাইরে ‘জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী হায় হায়’ স্লোগান উঠল মুহুর্মুহু। সায়ন্তনবাবুর বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন তাঁরা।

সায়ন্তনবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কোনও বিক্ষোভ আমার চোখে পড়েনি। জেলার সমস্ত এলাকারই প্রতিনিধি বৈঠকে ছিলেন। তাঁরাও কেউ দলে কোনও অসন্তোষের কথা তোলেননি। বৈঠক খুব ভাল ভাবেই হয়েছে।’’ বস্তুত জেলা সভাপতির কিছু সিদ্ধান্তকে ঘিরে পুরুলিয়ায় বিজেপি-র ঘরে তুমুল অশান্তি পাকিয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া শহরে দলের জেলা কার্যালয়ে বৈঠক চলাকালীন সেখানে হাজির হয়ে কয়েকশো দলীয় নেতা-কর্মী গেরুয়া পতাকা কাঁধে নিয়ে জেলা সভাপতির অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সেখানে উপস্থিত হন সম্প্রতি চাষমোড়ে প্রয়াত কংগ্রেস নেতাদের মূর্তিতে মালা দেওয়ায় প্রথমে শো-কজ হওয়া ও পরে দলের দায়িত্ব থেকে অপসারিত হওয়া তিন নেতা সনাতন মাহাতো, নগেন্দ্র ওঝা ও রাজীব মাহাতোরাও। হইচইয়ের মধ্যে বিক্ষু্ব্ধ নেতা-কর্মীদের একাংশ ভিতরে ঢুকে বৈঠক ভণ্ডুল করে দেন। দলের এক জেলা সাধারণ সম্পাদকের মুখে কালিও মাখিয়ে দেওয়া হয়।

পরের দিনই ওবিসি মোর্চার প্রাক্তন সভাপতি সনাতন মাহাতো ও দুই প্রাক্তন জেলা সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র ওঝা এবং রাজীব মাহাতোকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করে দল। তাঁরাই কিছু মদ্যপকে দিয়ে বৈঠক ভণ্ডুল করেন ও এক নেতার মুখে কালি লাগান বলে রাজ্য নেতৃত্ব শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ওই শাস্তি দিয়েছে বলে জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন।

কিন্তু তাতে বিক্ষোভের আঁচ কমেনি, উল্টে উত্তাপ বাড়িয়ে শনিবার শহরের একটি লজে জড়ো হয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে দলের বিভিন্ন ব্লকের বিভিন্ন সংগঠনে থাকা ৪০ জন নেতা নিজেদের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

সেই অসন্তোষের রেশ রবিবারও থাকল। এ দিন হুটমুড়ায় জেলার ৪৪টি মণ্ডল ও সাতটি মোর্চার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করেন সায়ন্তনবাবু ও বিদ্যাসাগরবাবু। আগামী ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের রণকৌশল কী হবে, প্রচারের অভিমুখই বা কী হবে এবং কী ভাবে বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনকে শক্তিশালী করা যাবে, মূলত এ সবই ছিল আলোচনার বিষয়। সেই সময়েই কমিউনিটি হলের বাইরে জড়ো হয়ে বেশ কিছু লোকজন বিক্ষোভ শুরু করেন।

তাঁরা নিজেদের বিভিন্ন ব্লকের নেতা-কর্মী হিসেবেই পরিচয় দেন। ‘জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অপসারণ চাই, জেলা সভাপতি দূর হটো স্লোগান ওঠে। সায়ন্তনবাবুর বিরুদ্ধেও স্লোগানের সঙ্গে রাজ্য-জেলা আঁতাত ভাঙার ডাক ওঠে। কেন তিন নেতাকে সাসপেন্ড করা হল, রাজ্য নেতৃত্বের কাছে তার জবাবও চাওয়া হয়।

যুব মোর্চার বিক্ষুব্ধ নেতা হরি হালদার, প্রসেনজিৎ ওঝার দাবি, ‘‘আমরা সায়ন্তনবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। ওই তিন নেতাকে কী কারণে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তা জানতে চাইতাম। জেলা সভাপতি-সহ জেলা নেতৃত্ব কী ভাবে দল চালাচ্ছেন, তাও তাঁকে জানাতাম। কিন্তু তিনি আমাদের অনুরোধ রাখেননি। তাই নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।’’ সেখানে যান সাসপেন্ড হওয়া তিন নেতাও। তাঁদের দাবি, ‘‘আমাদের সাসপেন্ড করার বিষয়টি কর্মীরা মানতে পারেননি বলেই তাঁদের এই স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ।’’

জেলা সভাপতি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমরা ভিতরে বৈঠক করছিলাম। বাইরে কিছু লোক জড়ো হয়েছিল বলে শুনেছি। তবে তাঁরা কী করেছে, জানি না।’’ তিনি আরও দাবি করেন, যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা সবাই বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত।

সায়ন্তনবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নির্দেশেই ওই তিন নেতাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে কারও কিছু বক্তব্য থাকলে জানাতেই পারেন। তবে সে জন্য নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি মানতে হবে। আমাদের দলে বিশৃঙ্খলা কখনই কাম্য নয়।’’

BJP Dwellers Protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy