E-Paper

দুশ্চিন্তা নিয়েও কর্তব্যে অবিচল ভোটকর্মীরা

সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা উত্তরা মুখোপাধ্যায়। সিউড়ি সংলগ্ন কুতুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন।

সৌরভ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫১
বুথে যাবার পথে একটু ঠান্ডায় গলা ভিজিয়ে নেওয়া মহিলা ভোট কর্মীদের সিউড়ির ১নং ব্লকের বিতরন কেন্দ্রের বাইরে।শুক্রবার।

বুথে যাবার পথে একটু ঠান্ডায় গলা ভিজিয়ে নেওয়া মহিলা ভোট কর্মীদের সিউড়ির ১নং ব্লকের বিতরন কেন্দ্রের বাইরে।শুক্রবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

কেউ চাকরিতে সদ্য যোগ দিয়েই প্রথম বার নির্বাচন করাতে যাচ্ছেন, কেউ আবার চাকরি জীবনের সায়াহ্নে এসে প্রথম বার পালন করছেন নির্বাচনের দায়িত্ব। কেউ আবার চাকুরি জীবনের শেষ নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়ে স্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত। শুক্রবার সিউড়ি ১ ব্লকের ডিসিআরসি কেন্দ্র কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল অ্যান্ড পাবলিক ইনস্টিটিউটে দেখা গেল এমনই নানা টুকরো টুকরো ছবি। এ সবের মাঝেও চাপা দুশ্চিন্তার চোরা স্রোত বইছে। কারণ, এ দিন রাত পর্যন্ত অধিকাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের দেখা মেলেনি। তার পরেও সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন শেষ করার চ্যালেঞ্জ নিতে তাঁরা তৈরি।

সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা উত্তরা মুখোপাধ্যায়। সিউড়ি সংলগ্ন কুতুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। ৫৫ বছর বয়সে এসে এ বারই প্রথম নির্বাচনের দায়িত্ব এসে পড়েছে তাঁর কাঁধে। কড়িধ্যার কালিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহিলা পরিচালিত বুথের ফার্স্ট পোলিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। উত্তেজনা এবং ভয়— দুইই মিলেমিশে রয়েছে তাঁর চোখে, মুখে। তিনি বলেন, “বাড়ির কাছেই চেনা জায়গায় দায়িত্ব পড়েছে বলে, অনেকটাই নিশ্চিত বোধ করছি। তবে চারদিকে যা দেখছি, শুনছি তাতে যতক্ষণ না সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরছি, ততক্ষণ বাড়ির লোকের একটা চিন্তা তো থেকেই যায়। তবে এখানে এসে আর ভয় করছে না। দ্রুত সব ভাল ভাবে মিটিয়ে ফিরে যেতে চাই।”

অন্য দিকে, বছর ২৮-এর তৃষা বিশ্বাসের বাড়ি দমদমের নাগেরবাজারে। গত বছরই সিউড়ির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন তৃষা। কাজে যোগ দেওয়ার পরে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নির্বাচনের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। এখনও জেলা, এমনকি শহরটাকেও ভাল ভাবে চেনা হয়ে ওঠেনি তৃষার। তারই মধ্যে তিলপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার রামকৃষ্ণ শিল্প বিদ্যাপীঠের মহিলা পরিচালিত বুথের চতুর্থ পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “বুথে আরও যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা অনেক বয়ঃজ্যেষ্ঠ। তাঁদের কথা মতোই আমি কাজ করব। আশা করি কোনও সমস্যা হবে না। বাড়ির বড়রা অনেক রকম বিষয়ে ওয়াকিবহাল করছেন। সব মিলিয়ে বেশ ভালই লাগছে।”

রামপুরহাট পোস্ট অফিসে কাজ করেন আতাউল হক। আদি বাড়ি মুর্শিদাবাদের ঝিল্লিখাসপুরে। বয়স প্রায় ৬০ ছুঁইছুঁই। তাঁর নির্বাচনের দায়িত্ব পড়েছে বাঁশজোড় সংলগ্ন বারুইপুর সর্বশিক্ষা অভিযান স্কুলে। নির্বাচনের দায়িত্ব নেওয়ার আগে পর্যন্ত বারুইপুরের নাম না শুনলেও সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে বাঁশজোড়ের নাম আগেই শুনেছেন তিনি। তাই ভীত হয়ে পড়েছেন আতাউল। তিনি বলেন, “শেষ বয়সে এসে এ সব ভয়ই লাগে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। কোনও সমস্যা হলে নিশ্চয় প্রিসাইডিং অফিসার সামলে নেবেন। তবে নিরাপত্তা আরও জোরদার হলে ভাল হত।”

রাজনগর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবগুরু বন্দ্যোপাধ্যায় স্কুল শিক্ষক থাকাকালীন এক বার পঞ্চায়েতের নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। দশ বছর পর আবারও সেই দায়িত্বে ফিরেছেন তিনি। তবে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বেশ সন্তুষ্ট তিনি। তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত বেশ ভাল ব্যবস্থাপনাই পেয়েছি। এ বার বর্ষায় নির্বাচন হওয়ায় বিভিন্ন বিষয়ের দিকে পৃথক ভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। আলাদা ভাবে ওষুধও দেওয়া হয়েছে। আশা করি পরবর্তী পর্বও ভাল ভাবেই মিটবে।”

ভোটকর্মীদের সঙ্গেই এ দিন ভোটকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেন নিরাপত্তাকর্মীরাও। তবে একাধিক বুথের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরুষ ভোটকর্মীদের সঙ্গে যাচ্ছেন এক জন মহিলা পুলিশকর্মী। অনেক ক্ষেত্রেই সেই পুলিশ কর্মীরাও জেলার নন। অচেনা স্থানে, অচেনা ভোটকর্মীদের সঙ্গে এক জন মাত্র মহিলা পুলিশ কর্মীর থাকাটা কতটা স্বাভাবিক তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। পাশাপাশি, রাত পর্যন্ত অধিকাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ ভোটকর্মীদের।

এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক আশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘যা নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছিল তার সিকি ভাগও পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ বুথে এ দিন রাত পর্যন্ত এক জনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান নেই। গণতন্ত্রের অন্তর্জলি যাত্রা হতে চলেছে। যদি এক জনও ভোটকর্মী আহত হন, তা হলে শাস্তির খাঁড়া নামলেও, সংগঠনের কোনও সদস্য আগামী ভোটের কাজে অংশ নেবেন না।’’ যদিও জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ‘‘আমরা সমস্ত দিক বিবেচনা করেই পুলিশের বন্দোবস্ত করেছি। কোনও অসুবিধা হবে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 Election Duty Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy