বাঁধাকপি মুখে হাতি। নিজস্ব চিত্র
পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে বাঁকুড়ায় আসা হাতির দলে দুই নতুন সদস্যের আবির্ভাব ঘটেছে। দিন পনেরো আগে বড়জোড়ার জঙ্গলে দু’টি হস্তিশাবকের জন্ম হওয়ায় হাতির দল কিছুটা শান্ত হয়েছে বলে বন দফতরের দাবি। তবে শুধু সদ্যোজাতদের নিরাপত্তার জন্যই নয়, হাতিদের আচরণ বদলের পিছনে তাদের ভূরিভোজের এলাহি ব্যবস্থাও অন্যতম কারণ বলে বন কর্তারা দাবি করছেন। বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, ‘‘দিন পনেরো আগে দু’টি হস্তি শাবকের জন্ম হয়েছে। এ সময় তারা একটু শান্ত পরিবেশ পছন্দ করে। তাদের উপরে বনকর্মীদের নজর রয়েছে।’’
বন দফতর সূত্রে খবর, সদ্যোজাত হাতিদের ঘিরে ১৫-১৬টি বড় হাতি রয়েছে। তারা জঙ্গলের বাইরে বড় একটা আসছে না। লোকজন যাতে তাদের উত্ত্যক্ত করতে না পারে, সে জন্য সেখানে পৌঁছনোর জঙ্গলের মধ্যে বেশ কয়েকটি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দূর থেকে বনকর্মীরা তাদের উপরে নজর রাখছে। হস্তিশাবকেরা চলাফেরায় সাবলীল না হওয়ায় এই সময়ে বড়রা তাদের নিয়ে অন্যত্র যেতে চায় না। নদী বা খানাখন্দে পড়লে শাবকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই আপাতত ওই দলটিকে সরানোর চেষ্টা করছে না বন দফতর। ওদের বাদ দিয়ে আশপাশের জঙ্গলে থাকা বাকি হাতিরা পশ্চিম মেদিনীপুর মুখো হবে না। তাই তাদের জঙ্গলের মধ্যেই রাখতে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
গত মাস দুয়েক ধরে বড়জোড়া ও বেলিয়াতোড় রেঞ্জে রয়েছে ৭২টি হাতি। বিভিন্ন জঙ্গলে তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বন দফতর সূত্রে খবর, বুধবার বড়জোড়া রেঞ্জের সাহারজোড়ার জঙ্গলে রয়েছে ৩২টি হাতি। বড়জোড়ার জঙ্গলে ২০টি এবং পাবয়ার জঙ্গলে রয়েছে ১৭টি হাতি। বেলিয়াতোড় রেঞ্জের কাঁটাবেসিয়ার জঙ্গল, রাধানগর রেঞ্জের ইছারিয়ার জঙ্গল এবং সোনামুখী রেঞ্জের গোপবাঁদির জঙ্গলে একটি করে হাতি রয়েছে।
গত এক মাসে হাতির হানায় বড়জোড়া, বেলিয়াতোড় ও সোনামুখীতে প্রাণ হারান এক হুলা কর্মী-সহ চার জন। একের পর এক গ্রামে হানা দিয়ে ফসলের ক্ষতি করেছে হাতিরা। বেশ কিছু ঘরও ভেঙেছে। মারা গিয়েছে গবাদি পশুও। তবে ইদানীং হাতিদের আচরণ অনেকখানি শান্ত বলে বনকর্মীরা জানাচ্ছেন।
সূত্রের খবর, হাতিরা যাতে খাবারের টানে লোকালয়ে না ঢুকে পড়ে সে জন্য গত কয়েকদিন ধরে জঙ্গলের মধ্যে ডাঁই করে বাঁধাকপি রেখে আসা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পুকুরের পাড়ে, জঙ্গলের ফাঁকা জায়গায় বাঁধাকপি রাখা হচ্ছে। কিছু পরেই মহানন্দে হাতিরা এসে তা খাচ্ছে। সূত্রের খবর, হাতির আহারের জন্য দৈনিক প্রায় ৫০ কুইন্টাল বাঁধাকপি লাগছে। পিকআপ ভ্যানে চাষি ও আনাজ বিক্রেতাদের কাছ থেকে বাঁধাকপি কিনে আনা হচ্ছে। এ সময়ে বাঁধাকপির চাহিদা পড়ে যাওয়ায় দামও তলানিতে নেমে এসেছে। তাই হাতিদের জন্য বাঁধাকপির চাহিদা বাড়ায় খুশি বেলিয়াতোড়া ও বড়জোড়ার আনাজ চাষিরাও। বেলিয়াতোড়ের চাষি সরোজ মান্না বলেন, ‘‘প্রতিটি বাঁধাকপির দাম এখন দু’ থেকে আড়াই টাকা। হাতির খাবারের জন্য বিক্রি বাড়ায় এ সময়ে কিছুটা লাভ হচ্ছে।’’ বেলিয়াতোড়ের এক আনাজ বিক্রেতা সজল কাপুড়ি জানান, এই সময়ে লোকে বাঁধাকপি খুব একটা কিনছেন না। দামও তলানিতে। হাতির খাবার হিসেবে অনেক বাঁধাকপি কেনা হচ্ছে। তাতে ভালই লাভ থাকছে।’’
সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। তার আগে হাতিদের সরানোর দাবি উঠেছে। বন দফতরের আশ্বাস, ২৩ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তার আগে হাতিদের সরানোর চেষ্টা করা হবে। জঙ্গলের রাস্তায় নজরদারি রাখছে বন দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy