Advertisement
E-Paper

রোজা রেখে ছৌনাচে দেব-দেবীর ভূমিকায়

কৃষিজীবী এই পরিবার থেকে প্রথমে বীররসের শিল্প ছৌনাচে নাম লেখান গিয়াসুদ্দিনের ঠাকুরদা হাজারি আনসারি। সে পথেই হেঁটেছেন ছেলে জুমেরুদ্দিন। এখন গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে তালিম নেন ছেলে কাইফুদ্দিন।

কাইফুদ্দিন ও গিয়াসুদ্দিন আনসারি।

কাইফুদ্দিন ও গিয়াসুদ্দিন আনসারি। ছবি: সুজিত মাহাতো।

সমীরণ পাণ্ডে

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫ ০৭:২৪
Share
Save

ভোরে নমাজ পড়েন, দিনভর রোজাও রাখেন। আর সন্ধ্যায় দুর্গা, কার্তিক, গণেশ-সহ বিভিন্ন দেব-দেবীর ভূমিকায় ছৌনাচের আসর মাতান। চার পুরুষ ধরে সে ধারা বজায় রেখেছেন পুরুলিয়ার বরাবাজারের পলমা গ্রামের গিয়াসুদ্দিন আনসারি। নানা আপত্তিতে কান দেননি। গিয়াসুদ্দিনের বিশ্বাস, ‘‘আমরা শিল্পী। শিল্পই আমাদের ধর্ম।’’

কৃষিজীবী এই পরিবার থেকে প্রথমে বীররসের শিল্প ছৌনাচে নাম লেখান গিয়াসুদ্দিনের ঠাকুরদা হাজারি আনসারি। সে পথেই হেঁটেছেন ছেলে জুমেরুদ্দিন। এখন গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে তালিম নেন ছেলে কাইফুদ্দিন। গিয়াসুউদ্দিন এখন ছৌনাচের দলের ওস্তাদ। অনুষ্ঠান করতে ভিন‌্-রাজ্যে গিয়েছেন একাধিক বার। ১৯৯৬ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। ১২ থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত ছৌনৃত্যের জন্য পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের বৃত্তি। তৈরি করেছেন অনেক ছাত্রও।

তা বলে বাঁকা কথা কম শুনতে হয়নি। গিয়াসুদ্দিন বলছিলেন, ‘‘কেউ কেউ আড়ালে বলেছে— ‘‘এ সব অপরাধ। আমাদের ধর্মে এ সব চলে না।’’ তবে কান দেননি। একুশ বছরের কাইফুদ্দিনও বলেন, ‘‘এখন ওদের শুনিয়ে দিই, শিল্পের মর্ম, শিল্পীর ধর্ম তোমরা বোঝো না। ছৌনাচ আমাদের জেলার গর্ব।’’

বছর ৪৩-এর গিয়াসুদ্দিন জানান, এখন ভোরে নমাজ পড়েন। দিনভর রোজা রাখেন। সন্ধ্যার মুখে রোজা ভেঙে দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় ছৌনাচের আসর জমান। গিয়াসুদ্দিনের কথায়, ‘‘ছৌনাচ করি বলে কখনওই নিজের ধর্মের নিয়ম পালনে বিচ্যুতি ঘটাইনি।’’

ছৌনাচই আনসারি পরিবারের ধ্যানজ্ঞান। গিয়াসুদ্দিন জানান, তাঁর ঠাকুরদা, বাবা ছৌনৃত্য শিল্পী হলেও, তিনিই প্রথম দল করেছেন। গিয়াসুদ্দিনের ছৌ-দল ‘পলমা শক্তি সঙ্ঘ’-এ ৩০ জন সদস্যের মধ্যে ২২ জনই হিন্দু। যদিও তাঁদের মধ্যে ভেদাভেদ নেই। দলের ম্যানেজার নারায়ণচন্দ্র মাহাতো, সদস্য সুনীত মাহাতোরা বলেন, ‘‘ইদে নমাজের সময়ে বাইরে থাকলে কাছাকাছি মসজিদের খোঁজ এনে গিয়াসুদ্দিনদাকে জানাই। অনেক সময় ওঁদের বাবা-ছেলেকে গাড়িতে মসজিদে পৌঁছে দিই।’’ গিয়াসুদ্দিন জুড়লেন, ‘‘আমরা একসঙ্গেই খাওয়াদাওয়া করি। এটা একটাই পরিবার।’’ তাঁর এলাকার পলমা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সাধন মাহাতো বলেন, ‘‘উনি জাতপাতের ঊর্ধ্বে ছৌনাচকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এটা গর্বের ব্যাপার। সম্প্রীতির নজিরও।’’

গিয়াসুদ্দিন বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার শিল্পী ভাতা দেওয়ায় আমাদের অনেকটা সুবিধা হয়েছে। তবে ছৌনাচে অনেক কায়িক পরিশ্রম হয়। তাই শিল্পী ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ছৌশিল্পীদের বাড়তি গুরুত্ব দিলে, ভাল হত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chou dance purulia chhau dance Chhau Artist Religion

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}