Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ধান দিয়ে চেক নিতে ভিড় জেলায়

আমলাদের উপস্থিতিতে এ দিন জেলার ২১টি কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্র (সিপিসি) থেকে ধান নিয়ে চেক বিলি করা হয়েছে। 

ধানের স্তূপ জমেছে কিসান মান্ডিতে। শনিবার বোলপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

ধানের স্তূপ জমেছে কিসান মান্ডিতে। শনিবার বোলপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি ও মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৩০
Share: Save:

সহায়ক মূল্যে ধান কিনে অনলাইনে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর (আরটিজিএস পদ্ধতি) বদলে ধান বিক্রির টাকা হাতে হাতে চেকের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। বীরভূমে ‘ধান দিন, চেক নিন’ কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক সূচনা হল শনিবার। আমলাদের উপস্থিতিতে এ দিন জেলার ২১টি কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্র (সিপিসি) থেকে ধান নিয়ে চেক বিলি করা হয়েছে।

শনিবার সকালে রামপুরাহাট-১ ব্লকের কিসানমান্ডিতে এই কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রঞ্জনকুমার ঝা এবং অন্য আধিকারিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সিউড়ি-২ ব্লকের পুরন্দরপুরে কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্রে (সিপিসি) চাষিদের হাতে চেক তুলে দেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু ও রাজ্যের খাদ্য ও সরবারহ দফতরের যুগ্ম সচিব মুক্তা আর্য। সিউড়িতে এ দিন ১৭ জন চাষি ধান বিক্রি করে চেক নিয়েছেন।

বোলপুরের শ্রীনিকেতনের ধান সংগ্রহ কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য ও সরবারহ দফতরের দুই ডেপুটি ডিরেক্টর সুরজিত দেবনাথ, তাপসী গোস্বামী এবং জেলা খাদ্য নিয়ামক তরুণ মণ্ডল ও মহকুমাশাসক অভ্র অধিকারী।

নভেম্বর থেকে জেলায় ২১টি কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্রে সহায়ক মূল্যে ধান কিনছে সরকার। এছাড়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি ও মহিলা সঙ্ঘ সমবায় মিলিয়ে শতাধিক ক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে যাতে চাষিরা সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারে। প্রশাসনের তথ্য বলছে, সহায়ক মূল্য ১৭৫০টাকা। চাষিরা নিজে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ফসল বিক্রি করলে ক্যুইন্টাল পিছু আরও ২০টাকা ভাতা রয়েছে। সাড়ে ৩ লক্ষ মেট্রিকটন ধান কেনা হবে বীরভূমে। সেখানে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই ১লক্ষ মেট্রিকটনের বেশি ধান কেনা হয়েছে।

মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে এ দিন জানানো হয় চাষিরা উৎসাহ ভাতা পেয়ে বেজায় খুশি। এ দিন এখানেও চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়। ১৭৫০টাকা ক্যুইন্টাল দরে সরকারি মূল্যের চেকের সঙ্গে বাড়তি ২০টাকা দেওয়া হয় প্রতি ক্যুইন্টালে। সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাতে হাতে চেক পাওয়ায় এবার চাষিদের মধ্যে উৎসাহ অনেক বেড়েছে। তার উপর বাড়তি ২০টাকা তো আছেই। চাষিদের কাছ থেকে প্রায় ২০৫ ক্যুইন্টাল ধান কেনা হয় এবং ১২ জনের হাতে ৩৫ হাজার টাকা করে চেক তুলে দেওয়া হয়।

কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা বা ক্রয়ের হারে যে পরিসংখ্যানই দেওয়া হোক না কেন, প্রথম থেকেই নানা সমস্যার কথা তুলছিলেন জেলার চাষিরা। তাঁদের দাবি ছিল, প্রয়োজনের তুলনায় ধান ক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক কম। জেলার ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত। কিন্তু সবকটি পঞ্চায়েত এলাকায় সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কেন্দ্র নেই। বাড়ি থেকে দূরে ধান ক্রয় কেন্দ্র হওয়া-সহ নানা অসুবিধার জন্য কম দামে অধিকাংশ ক্ষুদ্র, প্রান্তিক চাষি, বর্গাদার, পাট্টাদারেদের ধান বেচতে হচ্ছে ফড়ে বা দাললদেরকেই। শুধু তাই নয়, বহু চাষিরই অভিযোগ ছিল ধান বিক্রির সুযোগ নিচ্ছেন জেলার বড় চাষিরা। সুবিধা নিচ্ছে দালাল, ফড়েরা।

এরপরেই অনলাইন মানি ট্রান্সফার সিস্টেম বদলে ধান নিয়ে হাতে হাতেই চেক দেওয়ার কথা জানানো হয় সরকারিভাবে। প্রশাসনিক কর্তাদের নজরদারিতে চেক বিলি শুরু হলেও তার ভাল মন্দ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে চাষিদের কাছ থেকে। চেক হাতে পেলেন এমন চাষিদের কেউ কেউ বলেন, ‘‘এতে টাকা পেতে আরও বেশি সময় লাগবে। জমির কাগজপত্র ছাড়া আধার কার্ড, পাসপোর্ট ছবি ব্যাঙ্ক ডিটেলস নিয়ে যিনি ধান বিক্রি করতে কেন্দ্রে গেলেন তিনি আদৌ চাষি না ফড়ে সেটা যাচাই করার সুযোগ কোথায়? তাই চাষিদের বিশেষ কোনও সুবিধা হল না।’’ অনেক চাষিই জানিয়েছেন, হাতে হাতে চেক পেলে ফড়েরা কিছুটা জব্দ হবে ঠিকই কিন্তু ধান ক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ধান বিক্রি করতে চাইলেই তা করা যায় না। তাঁকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে ১ মাস লাইনে দাঁড়াতে হবে।

কেন সরকার অনলাইনের বদলে হাত হাতে চেক বিলি এবং তাতে প্রশাসনিক নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই ফড়ে বা দালালদের রুখতে ধান ক্রয় কেন্দ্রগুলিতে সি সি ক্যামেরায় নজরদারি চলছে। প্রান্তিক চাষিও যাতে ধান বিক্রি করতে পারেন সেই জন্য ৯০ ক্যুইন্টাল সর্বোচ্চ মাপ থেকে কমিয়ে ৪৫ ক্যুইন্টাল করা হয়েছে। চেক বিলি হলে সরাসরি চাষিরাই চেক পাবেন। সময় বেশি লাগলেও ফড়েদের উপদ্রব কমবে। প্রশাসনের কর্তাদের আরও দাবি, চাষিরা চেক যে কোনও অ্যাকাউন্ট থেকে ভাঙাতে পারেন। যেহেতু চেকগুলি আগে থেকে সই করা তাই সেই চেক নিয়ে কোনও সমস্যা যাতে না হয় তার নজরদারি থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Paddy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE