Advertisement
E-Paper

ক্ষতিপূরণ কি মিলবে, দোলাচল

এ দিকে মাঠে ধান মরছে। অন্য দিকে, ফসল বিমা যোজনায় নাম নেই পুরুলিয়ার ৯০ শতাংশ চাষির। তবে কী তাঁরা কপাল চাপড়াবেন?

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১৯
নিতুড়িয়ায় ধান কাটা খতিয়ে দেখছেন ব্লক কৃষি আধিকারিক। নিজস্ব িচত্র

নিতুড়িয়ায় ধান কাটা খতিয়ে দেখছেন ব্লক কৃষি আধিকারিক। নিজস্ব িচত্র

এ দিকে মাঠে ধান মরছে। অন্য দিকে, ফসল বিমা যোজনায় নাম নেই পুরুলিয়ার ৯০ শতাংশ চাষির। তবে কী তাঁরা কপাল চাপড়াবেন? ধান বাঁচানো না গেলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কি কোনও ভাবেই ক্ষতিপূরণ পাবেন না? সেই পথই এখন খুঁজছে জেলা কৃষি দফতর।

জেলার আমন চাষের অবস্থা খতিয়ে দেখা-সহ আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার কৃষি ভবনে সমস্ত ব্লক ও মহকুমার কৃষি আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন উপ-কৃষি অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই এসডিআরএফ (স্টেট ডিজাস্টারস রেসপন্স ফান্ড) থেকে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের কিছু ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই ঠিক হয়, ব্লক-পিছু সরেজমিন ঘুরে আমন ধানের চাষের অবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট পাঠানো হবে। আজ, সোমবারের মধ্যে ব্লক কৃষি আধিকারিকদের রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়েছে।

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এসডিআরএফ থেকে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে কি না, তা সেই রিপোর্টের উপরেই নির্ভর করবে। উপ-কৃষি অধিকর্তা বলেন, ‘‘ব্লক থেকে আসা রিপোর্ট রাজ্য কৃষি দফতরে পাঠানো হবে। এসডিআরএফ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব কি না, তা রাজ্যই ঠিক করবে।”

বস্তুত, জেলার বিভিন্ন মৌজায় আমন চাষের শোচনীয় অবস্থা এবং ৯০ শতাংশ চাষির বাংলা ফসল বিমা যোজনায় বাদ পড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষি দফতর। কৃষি আধিকারিকদের একাংশ মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে এসডিআরএফ থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনও মৌজায় আমন ধান চাষের ৩৩ শতাংশ ক্ষতি হলেই কৃষিকাজ বিপর্যস্ত বলে ধরে নিয়ে এসডিআরএফ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট মৌজার চাষিদের। হেক্টর প্রতি সাড়ে ১৩ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

বৃষ্টির অভাবে বাইদ জমির ধান প্রায় নষ্ট হওয়ার মুখে। দু’দিনে ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েত ঘুরেছেন নিতুড়িয়ার সহকারী কৃষি অধিকর্তা পরিমল বর্মন। তিনি জানান, জনার্দন্ডি, সড়বড়ি ও ভামুরিয়ার বাইদ জমির চাষের অবস্থা রীতিমত শোচনীয়। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তা কৃষ্ণেন্দু হাইত জানান, চোরপাহাড়ি, বেড়ো, খাজুরা— এই তিন পঞ্চায়েতের উঁচু জমির ফলনের বেশির ভাগ নষ্ট হওয়ার মুখে। অন্য ব্লক কৃষি দফতর থেকেও কমবেশি একই আশঙ্কার কথা জানা গিয়েছে।

এই অবস্থায় কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারে সেচ। কিন্তু, খরা-প্রবণ এই জেলায় সেই সুযোগ কোথায়?

পুরুলিয়ার ৩ লক্ষ ২৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ৬০ শতাংশের কিছু বেশি বাইদ অর্থাৎ উঁচু জমি। ফলে, জেলায় ধানের ফলন ব্যাপক পরিমাণে মার খাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে জেলার ৩ লক্ষ ১৯ হাজার চাষির মধ্যে অনেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্য দিকে, নিচু জমি বহাল ও কানালিতে ধান গাছের গোড়ায় জল জমে থাকায় কিছুটা আশা দেখছেন চাষি ও কৃষি আধিকারিকেরা। তাতে এসডিআরএফ তহবিল থেকে চাষিদের জন্য আর্থিক সহায়তা আদৌ আসবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে কৃষি দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। উপ-কৃষি অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এখনও পর্যন্ত যে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বাইদ জমির ক্ষেত্রে হেক্টর পিছু ২ টন ধানের ফলন পাবেন চাষিরা। নিচু জমিগুলির ক্ষেত্রে ৩ টন ফলন পাওয়া যাবে। ফলে এসডিআরএফ থেকে জেলায় আর্থিক সহায়তা চাষিদের জন্য রাজ্য পাঠাবে কি না, সেটা এখনই তাঁরা বলতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন ধরনের জমিতে চাষের বাস্তব অবস্থা কী, তা সরেজমিন ঘুরে দেখে ব্লকগুলির কৃষি দফতরের আধিকারিকদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বাকি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ (শেষ)

Farmers Doubts Compensation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy